করোনায় মৃতদের দাফন খিলগাঁও তালতলা কবরস্থানেই

সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৫ মার্চ ২০২০ | ০৮:০৩
স্থানীয় জনগণ বাধা দিলেও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) আওতাধীন খিলগাঁও তালতলা কবরস্থানেই করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের দাফন সম্পন্ন হবে।
ডিএনসিসির ভারপ্রাপ্ত মেয়র জামাল মোস্তফা বুধবার সমকালকে এতথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের অন্য এলাকায় দাফন করার জন্য এলাকাবাসী দাবি জানালেও সেটা সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে অন্য জায়গায়। যেভাবে নিয়ম মেনে লাশ দাফনের প্রয়োজন সে ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ সহযোগিতা করছে না।
ভারপ্রাপ্ত মেয়র জানান, বুধবারও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দায়িত্ব যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করে লাশ দাফনের দায়িত্ব পালন করবে। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে সে রকম সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। সিটি করপোরেশন প্রয়োজনে কবর খোড়াসহ অন্যান্য বিষয়ে সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত আছে।
জানা গেছে, করোনায় প্রথম মৃত্যুর পরই ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ও সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের শীর্ষ ব্যক্তিরা বসে খিলগাঁওয়ের তালতলা কবরস্থানকে করোনা আক্রান্ত লাশের দাফনের জন্য চূড়ান্ত করে। কিন্তু এর পরপরই খিলগাঁও ও রামপুরা থাকা এলাকার সর্বস্তরের জনগণের ব্যানারে কবরস্থানে ফটকে লেখা হয়, 'মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির মেয়র মহোদয় এবং সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রতি আকুল আবেদন। সাধারণ জনগণের জীবনের নিরাপত্তার স্বার্থে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মৃত ব্যক্তিদের লাশ খিলগাঁও তালতলা কবরস্থানের পরিবর্তে ঢাকার বাহিরে বা অন্য কোনো নিরাপদ স্থানে দাফন করার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।'
বিষয়টি গণমাধ্যমে চাউর হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এর আগে সেখানে একজন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তির দাফন করতে গেলে এলাকাবাসী বাধা দেন।
ডিএনসিসির প্রধান সমাজকল্যাণ ও বস্তি উন্নয়ন কর্মকর্তা তাজিনা সারোয়ার জানান, গত রোববার স্থানীয়দের বাধার মুখে এই কবরস্থানে করোনায় আক্রান্ত এক মৃত ব্যক্তির দাফন করা সম্ভব হয়নি। তাকে মিরপুরে ডিএনসিসির একটি কবরস্থানে দাফন করা হয়। স্থানীয়দের বাধার কারণে তালতলায় করোনায় মৃতদের দাফন আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছিল।
তিনি জানান, বুধবার বিষয়টি ডিএনসিসির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার পর তারা তালতলা কবরস্থানকেই করোনায় মৃতদের লাশ দাফনের সিদ্ধান্ত বহাল রাখে।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, রাজধানীতে নয়টি কবরস্থান রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ছয়টি ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে তিনটি। এর মধ্যে আটটি কবরস্থানেই প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫টি লাশ দাফন হয়। সবচেয়ে কম লাশ দাফন হয় তালতলা কবরস্থানে।
তালতলা কবরস্থানে লোকসমাগম কম হওয়ার কারণেই ওই কবরস্থানটিকেই করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃতদের লাশ দাফনের জন্য বেছে নেয় দুই সিটি করপোরেশন।
প্রায় ১৭ বিঘা আয়তনের ওই কবরস্থানটি ছিল জলাশয় প্রকৃতির। এলাকাবাসী ময়লা-আবর্জনা ফেলে সেটা প্রায় ভরাট করে ফেলে। পরবর্তীতে সেটাকেই কবরস্থানে পরিণত করে ডিএনসিসি। খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের উত্তর পাশেই কবরস্থানের অবস্থান। এরই এক কোণে ১০ শতাংশ জায়গা নির্ধারণ করে দিয়েছে করোনায় মৃতদের দাফনের জন্য।