ঢাকা মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪

প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনায় চকবাজার ট্র্যাজেডি

প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনায় চকবাজার ট্র্যাজেডি

চকবাজারের চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় স্বজনকে হারিয়ে আহাজারি- এএফপি

আব্দুর রাজ্জাক সরকার

প্রকাশ: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ | ০৭:৪৮ | আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ | ১০:৪৯

পুরান ঢাকার চকবাজারে চুড়িহাট্টার যে ভবনে আগুন লাগে তার পাশের একটি কারখানায় কাজ করেন মোনায়েম। বুধবার রাতে ভবনটির উল্টো দিকের একটি দোকানে মোনায়েম গিয়েছিলেন মোবাইলে টাকা রিচার্জ করতে। দোকানদারকে নম্বর বলে টাকা দেওয়ার সময় হঠাৎ বিস্ফোরণের শব্দ পান মোনায়েম।

মোনায়েম বলেন, বিস্ফোরণের শব্দে আশাপাশের সবার মতো কিছু না বুঝেই তিনিও দৌড় দেন। একটি দূরে গিয়ে পেছনে ফেরে দেখেন হোটেলে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আগুন লেগেছে। সেই আগুন ছড়িয়ে পড়ছে আশপাশের ভবন ও রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা যানবাহনে। 

যখন বিস্ফোরণের শব্দ পান তখন রাত প্রায় সাড়ে ১০টা বাজে বলে জানান মোনায়েম। তিনি বলেন, গলিতে কিছু প্রাইভেটকারও দাঁড়িয়ে ছিলো। আগুন লাগা ভবনটির পাশে একটি কমিউনিটি সেন্টার রয়েছে। সেখানে বিয়ের অনুষ্ঠানে অতিথিরা গাড়ি নিয়ে এসেছিলেন।   

মোনায়েম জানান, দ্রুত পাশের প্লাস্টিক কারখানায় আগুন ধরে যায়। সেখানে পুরাতন ফ্রিজ, নেলপালিশ ও বডি স্প্রে তৈরির কারখানা ছিলো। ভবনটি উপরে মানুষজন পরিবার নিয়ে থাকতেন। নিচের কারখানা থেকে আগুন উপরে ছড়িয়ে পড়ায় ধোঁয়া ও অন্ধকারে অনেকেই ভবন থেকে বের হতে পারেননি।

সোহেল নামে অপর এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, বিস্ফোরণের শব্দের পরপরই পুরো এলাকায় বিদ্যুৎ চলে যায়। অন্ধকারে সবাই ছোটাছুটি শুরু করেন। ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেওয়া হলে তারা সঠিক সময়েই আসে। কিন্তু ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢুকতে পারার মতো যথেষ্ট রাস্তা না থাকায় তারা ঘটনাস্থলের কাছে আসতে পারছিলেন না। 

সোহেল বলেন, সরু গলিতে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢুকতে পারছিল না। প্লাস্টিক কারখানায় দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুন লাফিয়ে বাড়তে থাকে। ভবনের ভেতর থেকে মানুষ চিৎকার করতে থাকেন। চারপাশের মানুষের আহাজারিতে চকবাজারের বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। 

ব্যবসায়িক কারণে অন্যতম ব্যস্ত এলাকা হিসেবে পরিচিত চুড়িহাট্টা। এ এলাকাটিতে ঢোকার সড়কগুলো খুবই সরু। ফায়ার সার্ভিসের বড় পানিবাহী  গাড়ি ঢুকতে না পারায় আগুন নেভাতে বেগ পেতে হয়। 

চুড়িহাট্টায় আগুন লাগার কয়েক ঘণ্টা পর বৃহস্পতিবার ভোরের দিকে তা নিয়ন্ত্রণে আনার কথা জানায় ফায়ার সার্ভিস। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিটের প্রায় ২০০ জন কর্মী কাজ করেন। 

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহাম্মেদ খান বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে জানান, ৭০টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে সার্চ অভিযান চলছে।

ব্যবসায়িক কারণে অন্যতম ব্যস্ত এলাকা হিসেবে পরিচিত চকবাজারের চুড়িহাট্টা। এ এলাকাটিতে ঢোকার সড়কগুলো খুবই সরু। ফায়ার সার্ভিসের বড় পানিবাহী গাড়ি ঢুকতে না পারায় আগুন লাগার পরপরই বেগ পেতে হয় তাদের। আহতদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ও মরদেহগুলো হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।

প্রায় সাড়ে ৮ বছর আগে ঘটা পুরান ঢাকার নিমতলী ঘটনারই পুনরাবৃত্তি যেনো চকবাজারের চুড়িহাট্টার আগুন। ২০১০ সালের ৩ জুন নিমতলীর নবাব কাটরায় একটি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমারের বিস্ফোরণ ঘটে। এতে একটি প্লাস্টিক কারখানায় আগুন ধরে যায়। ওই কারখানাতে ছিল বিপজ্জনক কেমিক্যাল। সেই আগুনে প্রাণ হারান ১২৪ জন মানুষ। আহত হন অর্ধশতাধিক। পুড়ে যায় অসংখ্য বসতবাড়ি, দোকান ও কারখানা।

আরও পড়ুন

×