- রাজধানী
- কাদের পকেটে যায় ক্যাসিনোর টাকা
কাদের পকেটে যায় ক্যাসিনোর টাকা
নিয়ন্ত্রণে ২০ প্রভাবশালী নেতা * সংঘবদ্ধ বিদেশি চক্রও জড়িত

রাজধানীর ক্যাসিনোতে প্রতিদিন উড়ত লাখ লাখ টাকা। দিন-রাত ২৪ ঘণ্টায় বিভিন্ন
এলাকার অন্তত ৩০টি ক্লাবে বসত জুয়ার আসর। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর
নাকের ডগায় বসে বছরের পর বছর চলে আসছে এই অবৈধ কারবার। বিভিন্ন সময়
ক্লাবকেন্দ্রিক ক্যাসিনো, মদের আসরের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলেও এর
বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। সম্প্রতি সরকারের
সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে যুবলীগের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে জুয়ার
আড্ডায় অংশ নেওয়ার অভিযোগ আনা হয়। এরপরই নড়েচড়ে বসে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী
বাহিনী।
বুধবার রাতে গুলশানে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয় ঢাকা মহানগর যুবলীগ
দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ইয়ংমেনস ক্লাবের সভাপতি খালেদ মাহমুদ
ভূঁইয়াকে। এরপর আবারও রাজধানীকেন্দ্রিক ক্যাসিনোর বিষয়টি সামনে আসে। এই
ক্যাসিনোই এখন টক অব দ্য টাউন।
সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, ঢাকায়
অর্ধশতাধিক ক্যাসিনো রয়েছে। তার মধ্যে ৩০টিতে নিয়মিত জুয়ার আসর বসত। এর
মধ্যে বিরতিহীনভাবে অর্থাৎ রাতদিন ২৪ ঘণ্টা ক্যাসিনো বসে ১৪-১৫টিতে। আওয়ামী
লীগ ও যুবলীগের অন্তত ১৫ জন নেতা ক্যাসিনোর সঙ্গে জড়িত। ক্যাসিনোর অর্থ
অসাধু এসব নেতা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু অসৎ কর্মকর্তার কাছেও
প্রতি মাসে পৌঁছে দিতেন। বিদেশে বসে শীর্ষ সন্ত্রাসীও ঢাকার ক্যাসিনো থেকে
পাওয়া অর্থের ভাগ পেত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুধু তাই নয়, চীন ও নেপালের
একটি সংঘবদ্ধ গ্রুপকে ভাড়া করে ঢাকায় এনে ক্যাসিনো পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া
হয়। ক্যাসিনো চালিয়ে মাসে মোটা অঙ্কের অর্থ বিদেশে পাচার করেন তারা। কারণ,
এই বিদেশিদের কোনো ওয়ার্ক পারমিট ছিল না। এরই মধ্যে ক্যাসিনো পরিচালনায়
জড়িত ৬ বিদেশির পাসপোর্ট জব্দ করা হয়েছে। তাদের ধরতে পল্টনের একটি বাসায়
গতকাল বৃহস্পতিবার অভিযানও চালায় র্যাব। তবে অভিযানের আগেই সেখান থেকে গা
ঢাকা দিয়েছেন তারা।
গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, গোয়েন্দা তথ্যের
ভিত্তিতে ক্যাসিনো বন্ধে অভিযান চালানো হয়েছে। যদি প্রশাসনের কোনো লোক জড়িত
কিংবা এগুলোতে সহযোগিতা করে থাকেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া
হবে। এছাড়া ক্যাসিনোগুলো তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, এটা প্রমাণিত হলে অবশ্যই
আইন অনুযায়ী বিচারের মুখোমুখি করা হবে।
ডিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, ঢাকায় আর কোথায় ক্যাসিনো আছে এবং কারা
সেগুলো চালাচ্ছে সে তালিকা করা হচ্ছে। এসব ক্যাসিনো মালিকদের বিরুদ্ধে
ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তারা যতই প্রভাবশালী হোক না কেন কাউকে ছাড় দেওয়া হবে
না।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল সাওয়ার বিন কাশেম বলেন,
যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের কাছ থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে।
অনেক তথ্য যাচাই-বাছাই চলছে।
র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম বলেন,
ক্যাসিনোয় নানা ধরনের অবৈধ কার্যক্রম চলে আসছিল। সেখানে নিয়মিত মদের আসরও
বসত। অনেকে ক্যাসিনোয় গিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন। দেশ-বিদেশের যারা এসবের সঙ্গে
সংশ্নিষ্ট তাদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।
দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, ক্যাসিনো চালানোর জন্য বিদেশ থেকে যাদের ভাড়ায় আনা
হয় তাদের মধ্যে কয়েকজনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন সঞ্জয়, নার্কারমি গৌতম,
রঞ্জিত ও নায়াজু।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, ফকিরাপুলে ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে ক্যাসিনো
নিয়ন্ত্রণ করেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাউছার, আরামবাগ,
মোহামেডান ও দিলকুশা স্পোর্টিং ক্লাবের নিয়ন্ত্রণে ছিলেন ৯ নম্বর ওয়ার্ড
কাউন্সিলর একে মমিনুল হক সাঈদ, ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাবের ক্যাসিনো
নিয়ন্ত্রণে যুবলীগ দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, ফকিরাপুল ইয়ংমেনস
ক্লাবের নিয়ন্ত্রণে যুবলীগ দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ
ভূঁইয়া। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রের ক্যাসিনো নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ আছে
আওয়ামী লীগ নেতা আলী আহমেদের বিরুদ্ধে। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আটটি স্থানে
যুবলীগ মহানগর দক্ষিণের এক শীর্ষ নেতার তত্ত্বাবধানে ক্যাসিনো ব্যবসা চলছে।
গুলশান লিংক রোডের ফু-ওয়াং ক্লাব, উত্তরা ক্লাব, নিউমার্কেট এলাকার এজাজ
ক্লাব, কলাবাগান ক্লাব, পল্টনের জামাল টাওয়ারেও বসে ক্যাসিনোর আসর।
ক্যাসিনোগুলোতে ওয়ান টেন, ওয়ান-এইট, তিন তাস, নয় তাস, কাটাকাটি, নিপুণ,
চড়াচড়ি, ডায়েস, চরকি, রামিসহ নানা নামের জুয়ার লোভ সামলাতে না পেরে অনেকেই
পথে বসেছেন। এছাড়া উত্তরা, নিকেতন, নিকুঞ্জ, রূপনগর, খিলগাঁও, লালবাগ,
হাজারীবাগ, বাড্ডায় বসে ক্যাসিনোর আসর। যুবলীগের এক নেতা নাম প্রকাশ না
করার শর্তে সমকালকে বলেন, শুধু যুবলীগ নেতাই নয়, ক্যাসিনোর সঙ্গে আওয়ামী
লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের কয়েকজন নেতা জড়িত আছেন।
প্রগতি সংঘে দিনে কোটি টাকার খেলা :কারওয়ান বাজার প্রগতি সংঘ (প্রথম বিভাগ
ফুটবল ক্লাব)। প্রকাশ্যে সাইন বোর্ডে লেখা 'প্রগতি সংঘে দিনে কোটি টাকার
খেলা' লেখা আছে। তবে গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিন জানা গেল, ফুটবলারদের বিশেষ
যাতায়াত নেই সেখানে। যারা যেতেন, জুয়া খেলাই ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য।
প্রায় ২৪ ঘণ্টাই খোলা থাকত ক্লাবটি। দিনে অন্তত কোটি টাকার লেনদেন হতো।
অভিযোগ রয়েছে, সেখান থেকে দৈনিক চার-পাঁচ লাখ টাকা পেতেন ক্লাবটির সভাপতি ও
তেজগাঁও থানা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক মোশারফ হোসেন। এই হিসেবে
ক্লাব থেকে মাসে অন্তত এক কোটি ২০ লাখ টাকা আয় হতো তার। অবশ্য
পুলিশ-প্রশাসন ম্যানেজ করার দায়িত্বও ছিল তার। এই টাকার একটি অংশ
দায়িত্বশীলদের কাছে পৌঁছে দিতে হতো।
অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামী লীগ নেতা মোশারফ হোসেন সমকালকে বলেন,
ক্লাবে এক কোটি নয়, পাঁচ কোটি টাকারও খেলা হতো। তবে সেটা তার নিয়ন্ত্রণে
ছিল না। ময়মনসিংহের হারুন নামে এক ব্যক্তি ক্লাবের ঘর ভাড়া নিয়ে জুয়া
চালাতেন। তিনি ক্লাবকে প্রতিদিন ৩০ হাজার টাকা ভাড়া দিতেন। সেই অর্থ ফুটবল
খেলার জন্য ব্যবহার করা হতো। কিছু অর্থ তিনিও পেতেন। তবে বুধবার থেকে জুয়া
বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
কারওয়ান বাজারের পেছনের অংশে ছোট্ট দোতলা ভবনে প্রগতি সংঘের কার্যালয়।
বুধবার মতিঝিল ও বনানীসহ বিভিন্ন স্থানের ক্যাসিনোয় র্যাবের অভিযানের পর
রাত ৮টার দিকে এই ক্লাবটির কলাপসিবল গেটে তালা ঝুলিয়ে কর্তারা চলে যান।
গতকাল দুপুরে সেখানে গিয়ে নিজেকে জুয়াড়ি পরিচয় দিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও
জুয়া খেলতে যাওয়া ব্যক্তিসহ কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়। ক্লাবের সামনের এক
দোকানি জানান, সকালে ক্লাব খুললেও জুয়া খেলা শুরু হতো দুপুর ১টা থেকে, চলত
সারারাত। ভোরের দিকে কেউ সব টাকা খুইয়ে, আবার কেউ পকেটভরে টাকা নিয়ে ফিরে
যেতেন।
ক্লাবের সামনে জুস বিক্রি করেন আলমাস দেওয়ান। তিনি জানান, নিচতলায় 'ওয়ান
টেন' খেলার সরঞ্জাম বসানো আছে। দোতলায় খেলা হতো তাস। প্রতিদিন গড়ে
হাজারখানেক জুয়াড়ি সেখানে ভিড় জমাতেন। ফলে তার বেচাকেনা বেশ ভালো ছিল।
অপর দুই ব্যক্তি জানান, তারা পেশায় ব্যবসায়ী। মূলত ফকিরাপুল এলাকায় জুয়া
খেলতেন। তবে গতকাল গিয়ে সব ক্লাব বন্ধ পেয়েছেন। এ কারণে তারা একজনের
পরামর্শে কারওয়ান বাজারে প্রগতি সংঘে আসেন। ভেবেছিলেন বাজারের ভেতরের ছোট এ
ক্লাবটি হয়তো খোলা থাকবে। কিন্তু দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করে খোলার কোনো
সম্ভাবনা না দেখে তারা ফিরে যান। মোহাম্মদপুরে ছোট পরিসরে জুয়ার বোর্ড বসে
বলে শুনেছেন। এখন সেখানে যাবেন। তাদের সঙ্গে থাকা একজন বলেন, 'অনেক দিনের
অভ্যাস ভাই, হুট কইরা তো ছাড়া যায় না। তাই একটু চেষ্টা চালাইতেছি।' আপনি কি
নিয়মিত জুয়া খেলেন? এমন প্রশ্নে তিনি দাবি করেন, সেভাবে তিনি খেলেন না।
এটা তার শখ। ক্লাবে গিয়ে খেলা দেখতে তার ভালো লাগে।
ফু-ওয়াং ক্লাবে জমজমাট আসর : তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের ফু-ওয়াং ক্লাবে মদ্যপান ও
ডিজে পার্টির পাশাপাশি জুয়া খেলার সব সরঞ্জামও ছিল। সেখানে জুয়া খেলেছেন
এমন একজন জানান, প্রতিদিন কমপক্ষে ১০ লাখ থেকে অর্ধকোটি টাকার জুয়া খেলা
হতো ক্লাবে। কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা জমা দিয়ে জুয়া খেলতে বসতে হতো। টাকার
বিনিময়ে 'গুটি' দেয় তারা। সেগুলো দিয়েই জুয়া খেলতে হতো। খেলা শেষে জুয়াড়ির
টাকা পাওনা থাকলে গুটির হিসাব করে টাকা দিয়ে দিত কর্তৃপক্ষ। স্থানীয় আওয়ামী
লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ থেকে পুলিশ প্রশাসনের অনেকেই জুয়ার টাকার ভাগ পেতেন
বলে অভিযোগ রয়েছে।
তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ওসি আলী হোসেন খান জানান, অল্পদিন আগে তিনি এই
থানায় দায়িত্ব নিয়েছেন। অতীতে ওই ক্লাবে জুয়া খেলার অভিযোগ থাকলেও এখন সেসব
কার্যক্রম নেই। গতকাল পুলিশ সেখানে গিয়ে তেমন কিছু পায়নি। তারপরও ক্লাবের
কর্মকর্তাদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে, যেন তারা অবৈধ কোনো কর্মকাণ্ড না
চালায়।
ইস্কাটন সবুজ সংঘে কার্ডের জুয়া :ইস্কাটন গার্ডেনের ৪/বি হোল্ডিংয়ে একতলা ও
আধাপাকা কয়েকটি ঘরে সংগঠনের কার্যালয়। এর একটি অংশে তরুণ ফুটবলাররা
অবস্থান করছেন। সেখানে কথা হয় টিম ম্যানেজার শাহ আলমের সঙ্গে। তিনি
জানালেন, বুধবার থেকে জুয়া খেলা বন্ধ রয়েছে। এ বিষয়ে তিনি কিছু বলতে পারবেন
না।
সবুজ সংঘের কর্মী জাহিদ ও বাবুল দাবি করেন, ক্লাবে বড় পরিসরে জুয়া চলত না।
শুধু কার্ডের (তাস) জুয়া খেলা হতো। মূলত ক্লাবের সদস্যরাই খেলতেন। ২০০ থেকে
৫০০ টাকার খেলা। বুধবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে কর্মকর্তা ও জুয়াড়িরা সবাই
ক্লাব বন্ধ করে চলে যান। ক্লাবটির অভিভাবক হিসেবে ঝালকাঠি জেলা আওয়ামী
লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খান সাইফুল্লাহ পনিরের নাম জানা গেল। তবে
তিনি জানান, ক্লাবের এখন কোনো কমিটি নেই। আগের একটি কমিটিতে তিনি সভাপতি
ছিলেন। শুধু ফুটবল-ক্রিকেট দলের খেলাধুলার বিষয়টিই তারা দেখেন। ক্লাবের
একটি রুমে কার্ড খেলা হলেও তা জুয়া নয়। পুলিশের নির্দেশে দুই বছর আগেই টাকা
দিয়ে খেলা নিষেধ করা হয়েছে।
মতিঝিল পাড়ার দৃশ্য :গতকাল দুপুরে মতিঝিলের আরামবাগ ক্লাবপাড়া ঘুরে দেখা
গেছে, এই এলাকার সব ক্লাব বন্ধ। ক্লাবগুলোর সামনে উৎসুক জনতার ভিড়। ওই
এলাকার লোকজন জানান, বুধবার র্যাবের অভিযানে আরামবাগের ঢাকা ওয়ান্ডারার্স
ক্লাব এবং ফকিরাপুল ইয়ংমেনস ক্লাব সিলগালার পর অভিযান আতঙ্কে বাকি
ক্লাবগুলো বন্ধ রেখেছে কর্তৃপক্ষ। একদিন আগে জুয়াড়িদের পদচারণায় যে ক্লাব
থাকত সরগম সেই ক্লাবে এখন তালা ঝুলছে। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, ক্লাবে
ক্যাসিনো চলায় মতিঝিল এলাকার উঠতি বয়সী ছেলেরাও বিপথে চলে যাচ্ছে।
দুপুরে আরামবাগের ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের সামনে দেখা গেল উৎসুক জনতার
ভিড়। প্রধান গেট সিলগালা। ক্লাবটি ঘিরে উপস্থিত জনতা নানা ধরনের কথা বলছেন।
৬০ বছরের এক বৃদ্ধ বলেন, তিনি ২৫ বছর ধরে আরামবাগ এলাকায় থাকেন। মাঝেমধ্যে
তিনি ক্লাবে যেতেন এলাকার লোক হিসেবে। ক্লাবের স্টাফরা ছিল তার পরিচিত। ২৪
ঘণ্টা নানা ধরনের মানুষের আসা-যাওয়া ছিল ক্লাবে। সেখানে ক্যাসিনো খেলা
নতুন নয়। বহু বছর ধরে চলে আসছে। ক্যাসিনোর পাশাপাশি মদসেবনও চলত। পুলিশসহ
দেশের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সেখানে দেখেছেন তিনি। বুধবার অভিযানের আগ
পর্যন্ত ক্লাবটি সম্পর্কে কারও কথা বলার সাহস ছিল না বলে জানান তিনি।
ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের সামনে কথা হয় যাত্রাবাড়ীর এক হার্ডওয়্যার
ব্যবসায়ী হারুন অর রশিদের সঙ্গে। কীভাবে ক্যাসিনো চলে তা দেখতে এসেছেন
তিনি। বলেন, বছরের পর বছর অবৈধভাবে মতিঝিলের মতো জায়গায় ক্লাবের নামে
ক্যাসিনো চলে আসছিল, অথচ এতদিনে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কাছেই থানার
অবস্থান। থানার ওসি কী এতদিন এর খবর জানতেন না?
আরামবাগ ক্লাবপাড়ায় সড়কের পাশের এক দোকানি বলেন, দিন-রাত ক্লাব ঘিরে চলত
নানা ধরনের কার্যক্রম। আতঙ্কে কেউ তাদের বিরুদ্ধে কথা বলত না। জুয়া খেলে
হেরে যাওয়ার পর ক্লাবের মধ্যে মারামারির ঘটনাও ঘটেছে। অভিযানের পর জুয়ার
আসর বন্ধ হওয়ায় ওই এলাকার লোকজন খুশি বলে জানান তিনি।
ফকিরাপুল ইয়ংমেনস ক্লাবের প্রধান গেটও সিলগালা। এই ক্লাবে অস্থায়ী কর্মচারী
হিসেবে কাজ করতেন ৪০ বছর বয়সী এক ব্যক্তি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,
২৪ ঘণ্টা ক্লাবে জুয়া বসত। যন্ত্রের মাধ্যমে (ক্যাসিনো) কোটি কোটি টাকার
জুয়া খেলা চলত। জুয়ার পাশাপাশি চলত মাদকসেবন। ক্যাসিনোতে চমকপ্রদ গল্পও
সৃষ্টি হয়। সম্প্রতি এক যুবলীগ নেতার ভাই ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে
ক্যাসিনো খেলে ৭০ লাখ টাকা হেরে যান। পরে টাকা ফেরত নেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া
হয়। এক পর্যায়ে ওই যুবলীগ নেতার হস্তক্ষেপে ৭০ লাখ টাকা ফেরত পান তার ভাই।
গতকাল দিলকুশা স্পোর্টিং ক্লাব, আরামবাগ স্পোর্টিং ক্লাব, মোহামেডান
স্পোর্টিং ক্লাব ও আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ বন্ধ ছিল। এসব ক্লাবেও ২৪ ঘণ্টা
জুয়ার আসর বসত। দিলকুশা স্পোর্টিং ক্লাবের এক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার
শর্তে বলেন, বুধবার থেকে ক্লাব বন্ধ রাখা হয়েছে। বাইরের কোনো মানুষকে
প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। ক্লাবে অভিযান চলতে পারে- এমন আশঙ্কায় বন্ধ
রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।