কক্সবাজারের মহেশখালীতে প্রস্তাবিত ১৭টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বছরে প্রায় ৭২ মিলিয়ন টন কার্বন-ডাই অক্সাইড নির্গত হবে। কয়েক হাজার টন কয়লা-জাত ছাই, বিষাক্ত পারদ, নাইট্রোজেন অপাইড ও সালফার ডাই অপাইড নির্গতের পাশাপাশি অন্যান্য ধাতব ও রাসায়নিক দূষণও ঘটবে। এর ফলে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হবে। দেশের প্রধান পর্যটন অঞ্চল কক্সবাজারের অস্তিত্বও বিপন্ন হয়ে পড়বে।

শুক্রবার বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এবং ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন বাপার সভাপতি বিশিষ্ট মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল।

তিনি বলেন, পরিবেশের মতো স্পর্শকাতর জায়গাগুলো বিনষ্টের দিকেই সরকার এগোতে চাচ্ছে। উন্নয়ন হতে হবে সুপরিকল্পিত এবং পরিবেশ প্রকৃতির ক্ষতি না করে বৃহত্তর জনগনের স্বার্থে। এ দেশকে আমরা বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দূষণের দেশ হিসেবে দেখতে চাই না। তিনি বলেন, একসময় আমরা কপবাজারকে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রাকৃতিক স্থানের স্বীকৃতির জন্য প্রচার চালিয়েছি। এখন আমরাই তাকে ধ্বংস করছি।

মূল প্রবন্ধে বাপার সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, প্রস্তাবিত ১৭টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ হবে কপবাজার ও চট্টগ্রামের ২৫ কিলোমিটারের মধ্যে। ১৭ হাজার ৯৪৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষম এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র বাস্তবায়ন হলে চার দশকের স্থায়িত্বকালে এগুলোর দূষণে এই অঞ্চলের বাসিন্দা ও প্রাণিকূল চরমভাবে বিপন্ন হয়ে পড়বে। বন ও সমুদ্রের সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য অপূরণীয় স্থায়ী ক্ষতির সম্মুখীন হবে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সরকার তার অবস্থানে অনড়। চীন, জাপান এবং ভারত তাদের স্বার্থে বাংলাদেশকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছে যেন পরিবেশ বিধ্বংসী প্রকল্পগুলো এখানে করা যায়। আমরা এ ধরণের উন্নয়ন চাই না।

বাপার নির্বাহী সহ-সভাপতি ডা. আব্দুল মতিন বলেন, কয়লা ব্যবহারের কুফল সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক প্রমাণাদি তারা উপস্থাপন করেছেন। তা সত্ত্বেও দেশে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে পরিবেশকে ধ্বংস করা হচ্ছে। এটা মেনে নেওয়া যায় না।

ব্রতীর প্রধান নির্বাহী শারমীন মুরশিদ বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ পরিবেশ সুরক্ষা বিষয় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চুক্তিতে অঙ্গীকারবদ্ধ। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প এভাবে চলতে থাকলে এসব চুক্তির কি হবে?

বাপার কক্সবাজার শাখার সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, কক্সবাজারের স্থানীয় মানুষের আয়-রোজগার প্রায় বন্ধ। দিনমজুর কৃষক ও মৎস্যজীবীদের অবস্থা অত্যন্ত ভয়াবহ। জমি অধিগ্রহণের টাকাও ঘুষ ছাড়া মিলছে না। বাপার মহেশখালী শাখার সদস্য সচিব আবু বকর সিদ্দিক বলেন, যে উন্নয়নে সুফলের চেয়ে কুফল বেশি সে উন্নয়ন আমরা চাই না।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বাপার যুগ্ম সম্পাদক হুমায়ুন কবির সুমন, অধ্যাপক আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার, বাপার কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ড. মাহবুব হোসেন, এম এস সিদ্দিকী, ইবনুল সাঈদ রানা প্রমুখ।