ঢাকা শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪

মানুষের দ্বারে দ্বারে ত্রাণ নিয়ে মেয়র আতিক

মানুষের দ্বারে দ্বারে ত্রাণ নিয়ে মেয়র আতিক

দ্বারে দ্বারে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে ত্রাণ- সমকাল

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ এপ্রিল ২০২০ | ১২:৪৭ | আপডেট: ৩০ নভেম্বর -০০০১ | ০০:০০

শুরু হলো নতুন বাংলা বছর ১৪২৭। অবশ্য উৎসব নেই কোথাও। করোনাভাইরাসের কারণে সবাই গৃহবন্দি নিজ পরিবারের সঙ্গে। এমন এক সময় হয়ত খাবারের অভাবে দিন কাটাচ্ছে হত দরিদ্ররা। এমন হত দরিদ্রদের জন্যই বাংলা বছরের প্রথম দিন মঙ্গলবার ত্রাণ সরবরাহের কাজে ব্যস্ত থাকলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম।

ঢাকায় ৪০ হাজার মানুষের কাছে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দেয়ার জন্য কাজ করছেন এই ডিএনসিসি মেয়র। কিন্তু কাজটি সহজ নয়। সাধারণ কোন দুর্যোগে এক সঙ্গে হাজার মানুষকে কাজে লাগিয়ে হয়ত একদিনেই সকলের ঘরে ত্রাণ পৌঁছে দেয়া সম্ভব। আবার ৪০ হাজার মানুষকে কয়েকটি এলাকা ভিত্তিক বুথে ভাগ করে কয়েকদিনে ত্রাণ পৌঁছে দেয়া যায়। কিন্তু এই করোনার প্রকোপের মধ্যে তা সম্ভব নয়। আর সে কারণেই বাড়ি বাড়ি গিয়ে ত্রাণ পৌঁছে দিচ্ছেন মেয়র আতিক। এতে কিছুটা সময় লাগলেও মানুষ তার নিজ ঘরে খাবার পাচ্ছে এবং সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে না।

ঢাকায় এখন পর্যন্ত প্রায় ১৭ হাজার মানুষের কাছে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দেয়া হয়েছে বলে জানায় মেয়র আতিকের অফিস। এই ত্রাণগুলো দেয়া হচ্ছে ক্ষিলক্ষেত, কুড়িল, কুরাতলা, জোয়ারসাহারা, ওলীপাড়া, জগন্নাথপুর, শ্যমালি, আদাবর, উত্তরা, বালুরঘাট ও মাটিকাটা এলাকার হত দরিদ্রদের মধ্যে। কিন্তু এর পাশাপাশি বিপদগ্রস্ত প্রায় ৪০০ জনের বেশি মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তের কাছেও খাবার পৌঁছে দেয়া হয়েছে।

মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেয়ার বিষয়ে মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, বিষয়টা বেশ কষ্টের। তারা কারো কাছে খাবার চাইতে পারে না। কিন্তু খাবার কিনতেও পারছে না। এমন একজনের বাড়িতে মঙ্গলবার আমি খাবার দিয়ে এসেছি। তার হাতে খাবার দেয়ার পর দেখলাম তার চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। আমি আর কিছু বলতে পারিনি। চলে এসেছি। এই ব্যক্তিটি ২৫ হাজার টাকা ভাড়া দেয়া একটি বাড়িতে থাকে। কিন্তু এখন তার কোন আয় নেই। এমন মানুষগুলো কখনো সহায়তা চাইতে পারেনা।

এ সময় ত্রাণ দিয়ে ফটোসেশন না করার অনুরোধ জানিয়ে মেয়র আতিক বলেন, একজনের হাতে ত্রাণ দিয়ে গোল হয়ে দাড়িয়ে ফটোসেশন করা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ তা কি আমরা ভেবে দেখেছি। সেই সঙ্গে এটা ভেবে দেখেছি, এভাবে একজন অসহায় মানুষকে আমরা হেয় করছি কিনা? আমি প্রত্যেকের বাসায় একটি করে ত্রাণ পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থাপনা হাতে নিয়েছি। সেখানে হয়ত জিজ্ঞাসা করায় কেউ আগ্রহ প্রকাশ করলে ছবি তোলা হচ্ছে। এ ছাড়া নয়। আর মধ্যবিত্ত শ্রেনী এই ছবির ভয়ে সাহায্য চাইতে পারছে না। সুতরাং নিশ্চুপভাবে ত্রাণ সহায়তা দেয়াটা এখন সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ। আমি যাদের হাতে হাতে ত্রাণ দিয়ে এসেছি, শুধু তারাই জানে বিষয়টি। তাদের যতটুকু সাহায্য করতে পেরেছি এতেই আমি খুশি।

নববর্ষে এই সময় সকলের নিজের আত্মীয় ও প্রতিবেশীদের খোঁজ নেয়া উচিত এমন মন্তব্য করে মেয়র আতিক বলেন, আপনি হয়ত জানেন না, কিন্তু আপনার পাশের বাসার মানুষটি নতুন বছরের শুরুতে না খেয়ে আছে। অথবা আপনার কোন এক আত্মীয় খাবারের কষ্টে আছে। এটা খুব কঠিন সময়। আমাদের প্রত্যেকের নিজ নিজ অবস্থান থেকে পাশের মানুষটিকে সাহায্য করতে হবে। আর সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। আমরা যদি এই নিয়ম হাটে বাজারে চলাফেরায় না মানতে পারি, তাহলে তার ফলাফল হবে ভয়াবহ। সরকার প্রদত্ত নির্দেশাবলী মেনে এখন সবাই ঘরে থাকলে একদিন নিশ্চয়ই আমরা আবার বাহিরে বের হতে পারব। এই খারাপ সময় একদিন শেষ হবেই।

সহায়তা নিতে এসে এখন সহায়তা করছেন নারী বাইকার শাহনাজ। মেয়র আতিকের কাছে সহায়তার জন্য ফোন করেন সকলের পরিচিত নারী বাইকার শাহনাজ। লকডাউন শুরু হবার পর স্কুটি চালানো বন্ধ। কাজ কর্ম নেই। আর সে কারণেই মেয়র আতিকের কাছে সহায়তা চাওয়া। মেয়র আতিককে ফোন করে এই বাইকার সহায়তা চাইলে তাকে ত্রাণ কার্যক্রমের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে কাজ করতে বলেন মেয়র আতিক।

শাহনাজ বলেন, আমি তাকে ফোন করে সহায়তা চেয়েছিলাম। তখন তিনি জানান, তার ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বাইকার প্রয়োজন। আমিও রাজি হয়ে যাই। সোমবার থেকে তার এই ত্রাণ প্রদানে সহায়তা করছি আমি।

whatsapp follow image

আরও পড়ুন

×