মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অন্যতম ট্রাস্টি ডা. সারওয়ার আলীকে হত্যার জন্য দুর্বৃত্তরা তার বাড়ির দারোয়ান ও গাড়িচালককে ম্যানেজ করেছিল দুই লাখ টাকার চুক্তিতে। ওই চুক্তি অনুযায়ী চালক হাফিজেরও বাসায় 'অপারেশনের' সময়ে দুর্বৃত্তদের সঙ্গে থাকার কথা ছিল। দারোয়ান হাসানের দায়িত্ব ছিল দুর্বৃত্তদের বাসায় ঢুকতে ও বের হতে সার্বিক সহায়তা করা। সারওয়ার আলীর সাবেক গাড়িচালক নাজমুল ওই দু'জনের সঙ্গে এমন চুক্তি করেছিল। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ ও আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে হাফিজ ও  হাসান এ কথা জানিয়েছে। পুলিশ সূত্রে সমকাল এসব তথ্য পেয়েছে।

৫ জানুয়ারি রাতে উত্তরা-৭ নম্বরের সেক্টরের বাড়িতে ঢুকে দুর্বৃত্তরা ডা. সারওয়ার আলীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যার চেষ্টা চালায়। তবে বাসার লোকজন ও প্রতিবেশীদের তৎপরতায় তিনি প্রাণে রক্ষা পান। ওই ঘটনায় পুলিশ তার গাড়িচালক হাফিজ ও দারোয়ান হাসানকে গ্রেপ্তার করে। এরপর উত্তরা-পশ্চিম থানা পুলিশ ওই দু'জনকে দুই দিনের রিমান্ডে নেয়। হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হলে গত শুক্রবার তাদের আদালতে হাজির করে ঘটনায় নিজেরা পরিকল্পনায় জড়িত থাকার স্বীকারোক্তি দেয়। বর্তমানে দু'জন কারাগারে থাকলেও ওই ঘটনায় নাজমুলকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। যদিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখন পর্যন্ত তাকে মূলহোতা মনে করছে।

রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ ও আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তির তথ্য উদ্ৃব্দত করে তদন্তসংশ্নিষ্ট পুলিশ সূত্র জানায়, হাফিজ ও হাসানের তথ্যে বেরিয়ে আসে তারা ঘটনার পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত ছিল। কিন্তু কেন ডা. সারওয়ার আলীকে বাসায় ঢুকে হামলা বা তাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল তা তারা জানত না বলে দাবি করেছে। তারা এও দাবি করেছে, সাবেক গাড়িচালক নাজমুল তাদের জানিয়েছিল, সারওয়ার আলীর বাসায় অনেক টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার রয়েছে। এসব সম্পদ লুট করা হবে। তাদের এ কাজে সহযোগিতা করলে দুই লাখ টাকা দেওয়ার চুক্তিও হয়।

মামলার তদন্ত-সংশ্নিষ্ট পুলিশ ও ডা. সারওয়ার আলীর সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে, ওই দু'জনের কথা এখনই তারা পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারছেন না। কারণ ঘটনার রাতে দুই দুর্বৃত্ত বাসায় ঢুকেছিল। তারা চাইলেই বাসায় লুটপাট চালাতে পারত। তা না করে প্রথমে চারতলা বাড়ির তৃতীয় তলায় সারওয়ার আলীর মেয়ের ফ্ল্যাটে গিয়ে অস্ত্রের মুখে সবাইকে জিম্মি করে তারা। মালপত্র লুট না করে সেখানে সারওয়ার আলীকে খুঁজতে থাকে। না পেয়ে তাদের একজন চতুর্থ তলায় সারওয়ার আলীর বাসায় যায়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই এক দুর্বৃত্ত তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে গলায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যাচেষ্টা চালায়। 'জানে শেষ করে দেব' বলে হুমকি দেয়। গ্রেপ্তার দুই আসামির দেওয়া তথ্যের সঙ্গে বাসার লোকজনের তথ্যের গরমিল রয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি, ছায়ানটের নির্বাহী সভাপতি ডা. সারওয়ার আলী গতকাল শনিবার রাতে সমকালকে বলেন, 'ঘটনার সময়ে তার বাসায় লুট করার সুযোগ দুর্বৃত্তরা পেয়েছিল। সেটা না করে আমাকে হত্যাচেষ্টা চালানো হলো। কেন এটা করা হলো, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে চাই আমি।'

জানতে চাইলে উত্তরা-পশ্চিম থানার ওসি তপন চন্দ্র সাহা সমকালকে বলেন, 'গ্রেপ্তার দুই আসামির ভাষ্যে উঠে এসেছে ডা. সারওয়ার আলীর সাবেক গাড়িচালক নাজমুল পুরো ঘটনার মূলহোতা। দুই আসামি জিজ্ঞাসাবাদ ও স্বীকারোক্তিতে বলেছে, তারা জানত বাসায় লুট চালিয়ে টাকা ভাগাভাগি করা হতো। সেটা না করে সারওয়ার আলীকে কেন হত্যার চেষ্টা করা হলো, সে রহস্য বের করা যায়নি এখনও।'