শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের নির্দেশে আন্ডারওয়ার্ল্ডের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার উদ্দেশ্যে দেশে এসেছিল মাজহারুল ইসলাম শাকিল ওরফে শাকিল মাজহার। জিসানের অন্যতম এ সহযোগী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। ওই হাসপাতালে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির পরিকল্পনা ছিল তার। তবে সেই প্রচেষ্টা নস্যাৎ করে দিয়ে রাজধানীর মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-২।

শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারওয়ার-বিন-কাশেম বলেন, জিসানের 'ডানহাত' হিসেবে পরিচিত সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজ শাকিল গত ১২ জানুয়ারি দেশে আসে। গোপন খবরের ভিত্তিতে জানা যায়, সে মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এরপর র‌্যাব সদস্যরা ওই এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে সন্দেহভাজন ব্যক্তি ও যান তল্লাশি শুরু করে। একপর্যায়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশা থেকে শাকিলকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তার কাছে দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন ও ছয় রাউন্ড গুলি পাওয়া যায়।

র‌্যাবের এ কর্মকর্তা জানান, শাকিল দীর্ঘদিন ধরে জিসানের পক্ষে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও চাঁদাবাজি করে আসছিল। দেশে ফিরে সে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে ভর্তি হয় এবং নাশকতার উদ্দেশ্যে কয়েকবার হাসপাতালের সিসিইউর সামনে ঘোরাফেরা করে। সেখানে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে গ্রেপ্তার সাবেক যুবলীগ নেতা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট চিকিৎসাধীন। এর আগে ২০১৬ সালের জুনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সহসম্পাদক রাজিব হত্যা মামলায় শাকিলের নাম আসার চার দিন পর সে চীনে চলে যায়। ২০১৭ সাল পর্যন্ত চীনে কার্গো সার্ভিসের কাজ করে। ২০১৮ সালে সে দুবাই যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত সেখানেই ছিল। দুবাইয়ে থাকার সময় জিসানের সঙ্গে তার পরিচয় হয় এবং সে জিসানের সঙ্গে কাজ করত। দুবাইয়ে সে জিসানের সঙ্গে একই ভবনে থেকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা করত এবং দেশে থাকা সহযোগীদের নির্দেশনা দিত।

শাকিলকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র‌্যাব জানায়, ২০০৫ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় সে ছাত্ররাজনীতি শুরু করে। ২০০৯ সালে জড়িয়ে পড়ে যৌথ ঠিকাদারি কাজে। রেলওয়ে বিভাগের ছোট ছোট কাজের টেন্ডার নিয়ে কাজ করত। ২০১৩ সালে সে গ্রামের বাড়ি ফেনী চলে যায়। ২০১৫ সালে আবারও ঢাকা আসে এবং রাজনীতি শুরু করে। এ সময় যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভুঁইয়ার সঙ্গে রেলওয়ের টেন্ডার কাজ নিয়ে বিরোধ তৈরি হয় তার।

জিসানের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে সারওয়ার-বিন-কাশেম বলেন, 'ইন্টারপোলের মাধ্যমে জানতে পেরেছি জিসানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। তবে শাকিলের কাছ থেকে এ ব্যাপারে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।'