- রাজধানী
- পথের পাশে
পথের পাশে

পথের পাশে ভিক্ষা করে দুই ভাই-ছবি : লেখক
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধির সামনে তিন বছরের বেশি সময় ধরে প্রতিদিন ভিক্ষা করতে বসে শিশু আকাশ ও তার ছোট বোন চাঁদনী। রোদ-বৃষ্টি, ঝড়-তুফান যাই থাকুক না কেন, তিন বেলা খাবারের অর্থ জোগাতে তাদের একমাত্র ভরসাস্থল জাতীয় কবির সমাধির সামনে ফুটপাতের এই একটুকরো জায়গা। ভিক্ষাবৃত্তির ফাঁকে খেলা ও গল্প করেই দুই ভাইবোনের কাটে দিন। আকাশের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা থাকে ঢাকার কামরাঙ্গীরচরে। পরিবারে আছেন অসুস্থ বাবা; মা অন্যের বাসায় ঝিয়ের কাজ করেন।
কামরাঙ্গীরচরে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের স্কুলে ভর্তি হলেও যাওয়া হয়নি, স্কুলে কিংবা কাজ করতে গেলে ছোট বোনকে দেখাশোনা করার মতো কেউ থাকবে না বলেই কাজের বদলে ভিক্ষাবৃত্তির সহজ পথটা বেছে নিয়েছে আকাশ। প্রতিদিনের আয় সম্পর্কে জানতে চাইলে আকাশ বলে, 'দিনে ২০০ টাকার মতো হয়, সবাই শুধু বঙ্গবন্ধুর ছবিওয়ালা দুই টাকা ও পাঁচ টাকার নোট দেয়, কেউ আর বড় টাকার নোট দেয় না, আবার অনেক সময় অনেকে বঙ্গবন্ধুর ছবিওয়ালা এক টাকা ও দুই টাকার কয়েন দেয়।'
সরেজমিন দেখা যায়, কমতি নেই আকাশ ও চাঁদনীর ভাইবোনের ভালোবাসায়। গরম ও শীতের তীব্রতা সঙ্গী করে বোনকে বুকে আগলে রেখেই সাহায্যের জন্য মানুষের কাছে হাত পাতে আকাশ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শিক্ষার্থী মাহবুবা জান্নাত বলেন, তাদের অসহায়ত্বের মধ্যেও ভাইবোনের এই ভালোবাসা শ্রেষ্ঠ উদাহরণ।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী করিম নেওয়াজ বলেন, ‘শিশু বয়সে তাদের ভিক্ষাবৃত্তি একটি অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। মুজিববর্ষে সরকারের উচিত এমন শিশুদের পাশে এসে দাঁড়ানো। শৈশবের ভিক্ষাবৃত্তি নিয়ে অনুসন্ধান করে দেখা যায়, রাজধানীর পথঘাট, লঞ্চঘাট, হাসপাতাল, ফুট ওভারব্রিজ, কবরস্থান, হাইকোর্ট, মসজিদ ও মাজার, বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন, বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য শিশু শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়ে ভিক্ষাবৃত্তির সঙ্গে জড়িত। শিশুদের এই ভিক্ষাবৃত্তি নিরসনে সরকার দ্রুত নজরদারি করে শিক্ষার আওতায় না আনলে দেশে যেমন শিশু ভিক্ষুকের সংখ্যা বাড়বে, তেমনি কমবে সাক্ষরতার হারও। ভয়াবহ এই ভিক্ষাবৃত্তির মধ্যেই হারিয়ে যাবে কোমলমতি শিশুদের শৈশব।’
মন্তব্য করুন