- রাজধানী
- বিল পরিশোধের সার্টিফিকেট দিয়ে এখন বলছে বকেয়া
বিল পরিশোধের সার্টিফিকেট দিয়ে এখন বলছে বকেয়া

পানির সব বিল পরিশোধ করেছেন বাড়ির মালিক। এ জন্য ঢাকা ওয়াসা থেকে বিল পরিশোধের প্রত্যয়নপত্রও দেওয়া হয়েছে বাড়ির মালিককে। কিন্তু আকস্মিকভাবে একটি বিলের কপি গেছে ওই বাড়ির মালিকের কাছে। তাতে বলা হয়েছে, ১৯৬৩ সাল থেকে আপনার পানির বিল বকেয়া। পাশাপাশি বকেয়া বিল পরিশোধেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যথায় তার বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। বিলের কপি পেয়ে বাড়ির মালিক চোখে শর্ষে ফুল দেখছেন।
রাজধানীর নারিন্দার ৬০/বি ভগবত সাহা রোডের ওয়াসিম উদ্দিন নিয়মিত পানির বিল পরিশোধ করেছেন। ২০১৪ সালে তিনি তার বাড়িটি এটলাস ডেভেলপমেন্টস অ্যান্ড হোল্ডিং লিমিটেডকে ডেভেলপ করার জন্য দেন। ওই সময় পানির বিল পরিশোধের সার্টিফিকেটও নেন ওয়াসা থেকে। ২০১৪ সালের ১০ আগস্ট ওয়াসার দেওয়া প্রত্যয়নপত্রে উল্লেখ করা হয়, 'এই মর্মে প্রত্যয়ন করা যাচ্ছে যে, উপরোক্ত গ্রাহক ও তার উল্লেখিত হিসাব নম্বরের বিপরীতে সর্বশেষ ৩১/১২/২০১৩ ইং তারিখ পর্যন্ত পানি, পয়ঃস্টর্ম ওয়াটার রেট খাতে কোনো বকেয়া টাকা ওয়াসার প্রাপ্য নেই। আপনার সমুদয় বিল পরিশোধিত। নিয়মিত পানি, পয়ঃ পরিশোধ করার জন্য আপনাকে অত্র সংস্থার পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।' পানির বিল পরিশোধ সংক্রান্ত ওই প্রত্যয়নপত্রে রাজস্ব পরিদর্শক, সহকারী রাজস্ব পরিদর্শক ও উপপ্রধান রাজস্ব কর্মকর্তার স্বাক্ষর রয়েছে। হোল্ডিংয়ের মালিক সূত্রে জানা যায়, ভবনটির কাজ শেষে যারা বসবাস করছেন, তারা নিয়মিত পানির বিলও পরিশোধ করে যাচ্ছেন। কিন্তু সম্প্রতি ওই হোল্ডিংয়ে ওয়াসা থেকে একটি বিল পাঠানো হয়। রাজস্ব পরিদর্শক জাকির হোসেনের পাঠানো ওই বিলে বলা হয়, '১৯৬৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর সময়ে তিনটি বিল বকেয়া রয়েছে। ওই তিনটি বিলে বকেয়ার পরিমাণ ২৭ হাজার ৪৯৮ টাকা। এর মধ্যে রয়েছে ১৯৬৩ সালের জুন মাসের বিল, ২০১২ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসের বিল। বিলে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, 'আগামী ৭ (সাত) দিনের মধ্যে আপনার হোল্ডিংয়ের পানি ও পয়ঃ বিলের সম্পূর্ণ বকেয়া টাকা পরিশোধ করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বকেয়া পরিশোধ না করলে ঢাকা ওয়াসার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মহোদয়ের নেতৃত্বে আদালত পরিচালনা করে সংযোগ কর্তনসহ পিভিআর অ্যাক্টের আওতায় মামলা রুজু করা হবে। অদ্য এই নোটিশ-ই চূড়ান্ত নোটিশ হিসেবে গণ্য হবে।'
সম্প্রতি ওই জমির মালিক ওয়াসিম উদ্দিন প্রয়াত হয়েছেন। উত্তরাধিকার মেয়েজামাই জালাল উদ্দিন সমকালকে বলেন, তিনি বুঝতে পারছেন না কেন এমনটা হলো। হঠাৎ করে ৫৭ বছর আগের পানির বিল ঢাকা ওয়াসা কোথা থেকে আবিস্কার করল। তিনি জানান, নিয়মিতই তারা পানির বিল পরিশোধ করে আসছেন। কোনো বকেয়াও তাদের নেই। তাহলে কীভাবে বিল দিল ওয়াসা- এ প্রশ্ন করেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা ওয়াসার বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক উত্তম কুমার রায়কে বিলের কপি ও ওয়াসার প্রত্যয়নপত্র দেখালে তিনি বলেন, 'ওই সময় যারা বিল পরিশোধের প্রত্যয়নপত্র দিয়েছেন, তারা অবসরে গেছেন। তাদের সঙ্গে তো আর যোগাযোগ সম্ভব না। কিন্তু বিল পরিশোধের প্রত্যয়নপত্র দেওয়ার পর এত বছর আগের বকেয়া বিল কীভাবে ওয়াসা দিল, সেটা খতিয়ে দেখা দরকার।' তিনি ওই এলাকার দায়িত্ব পালনকারী রাজস্ব কর্মকর্তা তানভির সিদ্দিকীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। জানতে পারেন তানভির ওমরা পালনে সৌদি আরবে আছেন। পরে তিনি রাজস্ব পরিদর্শক ও বিল ইস্যুকারী জাকির হোসেনকে ফোন দেন। হোল্ডিংটির পানির বিলের কপির নম্বরটিও তাকে লিখে নিতে বলেন। উত্তম কুমার বলেন, জাকির হোসেনকে নির্দেশ দিয়েছি বিষয়টি তদন্ত করে জানানোর জন্য।
এ বিষয়ে জাকির হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, নির্দেশ পেয়ে তিনি বিলটি পরীক্ষা করার চেষ্টা করেন। কিন্তু ওয়াসার সার্ভারে ত্রুটি দেখা দেওয়ায় সেটা পরীক্ষা করতে পারেননি। এ জন্য কয়েকটা দিন সময় লাগবে।
মন্তব্য করুন