- রাজধানী
- 'এক ঘণ্টার পুলিশ'
'এক ঘণ্টার পুলিশ'

করোনা ঝুঁকির মধ্যে কোনো কাজ ছাড়াই ঘর থেকে বের হয়েছিলেন তারা। এজন্য দাঁড় করিয়ে পরস্পরকে করোনা সম্পর্কে জানানোর অভিনব শাস্তি দিয়েছে পুলিশ। ছবিটি মিরপুরের শাহ আলী থানা এলাকার - সংগৃহীত
করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে জরুরি কারণ ছাড়া ঘরের বাইরে বের হওয়া ঠেকাতে রাজধানীর মিরপুরে অভিনব এক পদ্ধতি প্রয়োগ করা হচ্ছে- ঘর থেকে বাইরে বেরোনোর যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য কারণ দেখাতে না পারলে এর 'ওষুধ' হিসেবে তাকে বানানো হচ্ছে 'এক ঘণ্টার পুলিশ'।
ব্যতিক্রমী এ পদ্ধতিতে অহেতুক বাইরে বেরোনো মানুষটিকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে একইভাবে রাস্তায় বেরোনো অন্যদের সামনে করোনাভাইরাসের ক্ষতিকর দিক এবং চলমান পরিস্থিতিতে সবার করণীয় কাজগুলো বর্ণনা করতে হচ্ছে। কেন এ সময় ঘরে থাকা দরকার, সে সম্পর্কে ঘর থেকে বের হওয়া অন্যদের সচেতন করাই তাদের 'সাজা'। মিরপুর শাহ আলী এলাকায় পুলিশকে এ পদ্ধতি প্রয়োগ করতে দেখা গেছে।
এ প্রসঙ্গে পুলিশের মিরপুর বিভাগের এডিসি মাহমুদা আফরোজ লাকি বলেন, সম্প্রতি পৃথক একটি টিম নিয়ে শাহ আলী এলাকায় দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি। সেখানে প্রথমে যাকে থামানো হয়, তিনি হাসপাতালের চিকিৎসা-সংক্রান্ত কাগজপত্র দেখান। তাই তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর শিশুকে টিকা দেওয়ার জন্য বের হওয়া এক নারীকেও বিনা বাক্য ব্যয়ে যেতে দেওয়া হয়। একজন হজের টাকা জমা দেওয়ার জন্য যাচ্ছিলেন, তাকেও যেতে দেওয়া হয়। এরপর হাঁটতে থাকা এক ব্যক্তিকে থামিয়ে বাইরে বের হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘরে মন বসছে না। তাই ভাগ্নে-ভাগ্নিকে দেখতে যেতে বের হয়েছেন। উদ্দেশ্যহীনভাবে বাইরে বেরোনো আরেক ব্যক্তি নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে জানান, তিনি এলাকার ওসির সঙ্গে সুপরিচিত। অথচ থানার সেই ওসি তখন তার অদূরেই দাঁড়িয়ে ছিলেন।
মিরপুর বিভাগের এই এডিসি জানান, এভাবে গত বুধবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ডিউটি পালনকালে দেখা গেছে, কারও কারও সত্যিই প্রয়োজন পড়েছিল বাইরে বের হওয়ার। কিন্তু অনেকে কোনো কারণ ছাড়াও বেরিয়েছিলেন। যারা বিনা কারণে বেরিয়েছিলেন, তাদের পাঁচ-ছয়জনকে 'এক ঘণ্টার পুলিশে' পরিণত করা হয়েছিল। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে পথে নামা জনগণকে সচেতন করেছেন রোগের ব্যাপারে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণজনিত পরিস্থিতিতে গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস থেকে প্রথম দফায় ১০ দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়। প্রথমে কয়েক দিন পথে মানুষকে তেমন দেখা যায়নি। তবে গত সোমবার থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় আবার একটু একটু যাত্রী ও যানবাহন বাড়তে শুরু করেছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংশ্নিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানান, ঘর থেকে বের হওয়া রুখতে শুরুতে খানিকটা কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। অনেকেই পুলিশের এমন আচরণকে 'বাড়াবাড়ি' বলে আখ্যায়িত করেন। এ অবস্থায় পুলিশ কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার নীতি থেকে খানিকটা সরে আসে। কিন্তু পুলিশের শিথিল নীতির আভাস পেয়ে লোকজন আবারও সামাজিক দূরত্ব ও অন্যান্য করণীয় উপেক্ষা করে চলাচল করছেন। এ পরিস্থিতিতে কেউ কেউ 'ডকট্রিন অব নেসেসিটির' কথা তুলে ধরে বলছেন, দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি পুলিশকে খেয়াল রাখতে হবে, কারও মানবাধিকার যেন ব্যাহত না হয়।
এমন প্রেক্ষাপটে মানুষের অবাধ চলাচলে কড়াকড়ি আরোপে পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, ঢাকার রাস্তার মোড়ে মোড়ে যানবাহন থামিয়ে পথে বের হওয়ার কারণ জানতে চাইতে হবে। গতকাল বুধবার দুপুরে ডিএমপি সদর দপ্তরে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ নির্দেশ দেন।
পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা সমকালকে বলেন, জনগণ যাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখে, সে ব্যাপারে তাদের সচেতন করছে পুলিশ। তিনি বলেন, বাইরে আসার গ্রহণযোগ্য কারণ পাওয়া না গেলে তাকে বাসায় ফেরত পাঠানো হচ্ছে।
মন্তব্য করুন