- রাজধানী
- সবাই এখন 'ফেরিওয়ালা'
সবাই এখন 'ফেরিওয়ালা'

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অফিস সহায়ক, ডেকোরেটর কর্মী, কারখানার শ্রমিক বা রিকশাচালক ছিলেন তারা। করোনা পরিস্থিতিতে সবাই বেকার হয়ে পড়েন। কোনো উপায় না পেয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে টিকে থাকার লড়াইয়ে শেষতক তারা বেছে নেন নতুন পেশা। সবাই হয়ে ওঠেন ফেরিওয়ালা। কেউ ভ্যানে সবজি নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিক্রি করছেন, কেউ ফল, আবার কেউ মাছ। এতেও যে স্বচ্ছন্দে জীবনধারণ করতে পারছেন তা নয়। কোনোদিন ২০০ টাকা লাভ হয় তো কোনোদিন হতাশার চিত্র। তবু তাদের সান্ত্বনা যে, 'কোনোরকম' বেঁচে থাকতে পারছেন।
এদিকে করোনাকালে নিজের পরিবারকে বাঁচানোর পাশাপাশি এই ফেরিওয়ালারা সহজ করে দিয়েছেন অনেকের জীবনযাত্রা। ভাইরাস সংক্রমণের মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে আর বাজারে যাওয়ার দরকার পড়ছে না। ভিড় এড়িয়ে বাসার সামনেই কিনে নেওয়া যাচ্ছে প্রয়োজনীয় মাছ-সবজি-ফল।
রাজধানীর লালমাটিয়া এলাকার এস এম জাকির ডেকোরেটরের কর্মী ছিলেন জয়নাল আবেদিন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে খাবার পরিবেশনের কাজ করতেন। করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় বন্ধ হয় সব অনুষ্ঠান। তার হাতেও আর কোনো কাজ নেই। পরিবার নিয়ে তিনি থাকেন রায়েরবাজারের আজিজ খান রোডের বস্তিতে। স্ত্রী রোকেয়া বেগম আগে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতেন। করোনায় বেকার হয়ে পড়েছেন তিনিও। ফলে অনাহারে থাকার দিন শুরু হয়। এর মধ্যে বস্তির এক বাসিন্দা তাকে পরামর্শ দেন ভ্যানে করে কিছু ফেরি করার। তিনি আড়ত থেকে কলা কিনে ধানমন্ডি-লালমাটিয়া এলাকায় বিক্রি শুরু করেন। প্রতিদিন দেড় থেকে দুই হাজার টাকার কলা বিক্রি হয়। লাভের টাকায় চাল-ডাল কিনে ফেরেন বাড়িতে। অবশ্য সব দিন একরকম যায় না। কোনোদিন বিক্রি কম হয় বা বাধ্য হয়ে কম দামে বিক্রি করতে হয়। সেদিন লাভ থাকে না। তখন বিপদে পড়ে যান। স্থানীয় কাউন্সিলরের লোকজন তাদের জাতীয় পরিচয়পত্রের অনুলিপি নিয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত কোনো সহায়তা পাননি তারা।
জয়নাল আবেদিন জানান, করোনায় কাজ হারিয়ে ফেরিওয়ালা হওয়া মানুষের সংখ্যা অনেক। তার পরিচিতদের মধ্যে মোহাম্মদপুরের চাঁদ উদ্যান এলাকার সেলিম ও বাদল আগে ডেকোরেটরে কাজ করতেন। তারা দু'জনই এখন রিকশা চালান। আজিজ খান রোডের ইমরান একটি রেস্টুরেন্টের হয়ে ইফতারি বিক্রি করছেন।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অফিস সহায়ক ছিলেন এরশাদ। করোনাকালে প্রতিষ্ঠানটি তাদের কার্যক্রম চালানোর মতো তহবিল সংগ্রহ করতে পারছে না। ফলে বন্ধ রয়েছে অফিস। অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বেতন। এ পরিস্থিতিতে এরশাদ প্রথমে দুই ছেলেমেয়েকে গ্রামের বাড়ি রংপুরে পাঠিয়ে দেন। স্বামী-স্ত্রী থাকছেন রায়েরবাজার এলাকার একটি বাসায়। প্রতিদিনের খাবারের টাকা জোটাতে তিনি ভ্যানে করে ডাব বিক্রি করছেন।
মোহাম্মদপুরের টাউন হল এলাকায় ভ্যানে সবজি বিক্রি করেন বাবুল মিয়া। এটা অবশ্য তার জন্য নতুন নয়। তিনি আগে রিকশা চালালেও মাঝেমধ্যে সুবিধা বুঝে সবজি বিক্রিসহ নানারকম কাজই করেছেন। করোনাকালে রিকশায় তেমন যাত্রী মেলে না। তাই তিনি সবজি বিক্রি করছেন। তিনি জানান, কারওয়ান বাজার থেকে সবজি কিনে রিকশাভ্যানে বিক্রি করেন। দিনে ৩০০-৫০০ টাকা পর্যন্ত লাভ থাকে। কাঁচা সবজি সংরক্ষণ করা যায় না বলে অনেক সময় লোকসানেও পড়েন।
তরুণ উন্নয়নকর্মী সৈয়দ সাইফুল আলম শোভন সমকালকে বলেন, 'সরকারি-বেসরকারি-ব্যক্তিগত পর্যায়ে অনেক উদ্যোগ নেওয়ার পরও বহু মানুষ সহায়তা কার্যক্রমের বাইরে রয়ে গেছেন। করোনাকালে তাদের জীবনযুদ্ধ অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে। আবার তারা কাজ করছেন বলেই আমরা সহজে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে পারছি। মানুষকে নিরাপদে ঘরে থাকার সুযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের এই কাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।'
মন্তব্য করুন