'বাইছ্যা লন, খুইজ্যা লন, এই দিকে এই দিকে, স্টক সীমিত। যেইড্যা লন একশ', একশ।' এভাবেই হাঁকডাক দিয়ে কেনাকাটা চলছে মিরপুর-১০ নম্বরের ফুটপাতে। স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই নেই। অধিকাংশের মুখে মাস্ক থাকলেও অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলায় ভ্রুক্ষেপ নেই তেমন। এমন দৃশ্য দেখে কে বলবে লকডাউন চলছে, করোনাভাইরাস এসব এলাকায় ঘোরাঘুরি করতে পারে।

গতকাল বৃহস্পতিবার মিরপুরের একাধিক এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে, শত শত মানুষ রাস্তায়। প্রায় সব রাস্তাতেই অনেক যানবাহন চলছে। কোনো মোড়ে যানজটও। অকারণে অনেকেই অলিগলিতে আড্ডা দিচ্ছে। রাস্তায় ঘোরাঘুরি করছে অহেতুক।

মিরপুর-১০ নম্বর বি ব্লকের হোপ স্কুল ও গ্রিন ফিল্ড স্কুলের সামনে সারাবছরই ফুটপাতে পসরা সাজিয়ে বসেন দোকানিরা। দেশে করোনা সংক্রমণের পর অনেক দিন ফুটপাতে দোকান বসানো হয়নি। গত কয়েকদিনে আবারও ফুটপাতে দেদার চলছে কেনাকাটা। ভ্যানের ওপর ও রাস্তায় কয়েকশ' দোকান খুলে বসে আছেন বিক্রেতারা। যেখানে কেনাবেচার হাঁকডাক চলছে, তার অদূরেই একটি বাসার এক বাসিন্দা করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। একাধিক ক্রেতা-বিক্রেতার সঙ্গে কথা হয়। সজল হোসেন নামে এক বিক্রেতা বলেন, 'দোকান না বহাইলে খামু কী। পেট কেমনে চলব। এরই মধ্যে অনেক দেনা হয়েছে। দোকান বহাইতে পারলে পেডে খাবার যাইব।' ইসমাইল নামে আরেক বিক্রেতা জানান, অনেক দিন দোকান বন্ধ ছিল তার। স্বাভাবিক সময় ফুটপাতে দোকান বসাতে নানা ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হয়। এখন আরও ঝুঁকি নিয়ে দোকান বসিয়েছেন। প্রতিবার ঈদের আগে এই সময় কেনাবেচা বেশ জমে ওঠে। এবার করোনা সবকিছু বদলে দিয়েছে। মাইমুনা হোসেন নামে এক নারীর সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, ভাষানটেক থেকে ছেলেমেয়েদের জন্য কিছু পোশাক কিনতে এসেছেন। অল্প সময়ের মধ্যে কিনে আবার বাসায় ফিরে যাবেন।

আনোয়ার হোসেন নামে আরেক ক্রেতা জানান, বি ব্লকেই তার বাসা। গৃহকর্মীর জন্য দুই সেট পোশাক কিনতে এসেছেন। বি ব্লকের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, ফুটপাতে দোকান নিয়ে চলছে 'ইঁদুর-বিড়াল' খেলা। দোকান বসালে অল্প সময়ের জন্য পুলিশ আসে। পুলিশ এলে দ্রুত দোকান সরিয়ে নেওয়া হয়। পুলিশ চলে গেলেই আবার দোকান খোলা হচ্ছে।

১০ নম্বর বি ব্লক ছাড়াও একই এলাকার আইডিয়াল স্কুল-অ্যান্ড কলেজের সামনেও বসেছে দোকানের পসরা। সেখানেও স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই চলছে কেনাকাটা। শুধু ফুটপাত নয়, মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বরে কয়েকটি মার্কেটও খুলেছে। ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে অধিকাংশ ক্রেতা-বিক্রেতা স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না।

মিরপুর-১১ নম্বরে কাঁচাবাজারের বেহাল দশা। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, শত শত মানুষ কোনো নিয়মের তোয়াক্কা না করেই কেনাবেচা চালিয়ে যাচ্ছেন।

মিরপুরের বেনারশি পল্লি ঘুরে দেখা যায়, সেখানকার প্রায় সব দোকানপাট এরই মধ্যে খুলতে শুরু করেছে। ক্রেতার উপস্থিতি কম। মিরপুর-১০ নম্বরে সবচেয়ে বড় যে শাহ আলী মার্কেট, সেটি বন্ধ রয়েছে।