- রাজধানী
- রেশন-বোনাসের টাকায় অসহায়ের পাশে পুলিশ ফাঁড়ির ৩১ সদস্য
রেশন-বোনাসের টাকায় অসহায়ের পাশে পুলিশ ফাঁড়ির ৩১ সদস্য

রেশন-বোনাসের টাকায় অসহায়ের পাশে পুরো পুলিশ ফাঁড়ির ৩১ সদস্য
করোনাভাইরাসের চলমান সংকটে পুলিশ আইন শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি নানা সামাজিক দায়িত্বও পালনে নানা উদাহরণ সৃষ্টি করে চলেছে। এবার ঈদ সামনে রেখে মানবিকতার ভিন্ন উদাহরণ সৃষ্টি করছে ঢাকা মহানগর পুলিশের বংশাল থানার একটি ফাঁড়ির সদস্যরা।
বংশাল পুলিশ ফাঁড়ির ওই সদস্যরা নিজেদের ঈদ বোনাস আর রেশন বিক্রির টাকায় এলাকার অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
ওই ফাঁড়ির সদস্যরা বলছেন, ফাঁড়িতে একজন উপপরিদর্শকের নেতৃত্বে, এএসআই, হাবিলদার, নায়েক আর কনস্টেবল মিলিয়ে তারা সদস্য সংখ্যা ৩১ জন। ঈদ সামনে রেখে সবাই বোনাস পেয়েছেন, তুলেছেন মাসিক রেশনও। কিন্তু করোনাভাইরাস রোধে টানা দায়িত্ব পালন করতে হওয়ায় ছুটিও মেলেনি। এতে গ্রামের বাড়ি যেমন যেতে পারবেন না, তেমনি যাদের পরিবার ঢাকায় রয়েছেন কোয়ারেন্টিনের কারনে তাদের কাছেও যেতে পারছেন না। এজন্য নিজেদের বোনাস আর রেশনে টাকা দিয়ে এলাকার অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন তারা। ফাঁড়ি এলাকার দুই শতাধিক পরিবারকে ঈদ উপহার পাঠিয়েছেন পুলিশের এই সদস্যরা। এর বাইরে ওই এলাকার ১৫টি মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিনকে ঈদ উপহার দেওয়া হয়েছে রেশন ও বোনাসের টাকায়।
বংশাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক মো. নুর আলম মিয়া সমকালকে বলেন, বিভিন্ন সময়েই তার মোবাইল ফোনে এলাকার অসহায় লোকজন খাবারের জন্য, ত্রাণের জন্য ফোন ও ম্যাসেজ পাঠাতেন। তিনি দানশীলদের সহায়তায় তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছেন। সম্প্রতি ঈদ সামনে রেখে কিছু ম্যাসেজ পান, যাদের সবাই মধ্যবিত্ত পরিবারের। কখনও কারো কাছে চেয়ে খায়নি এসব পরিবার। কিন্তু চলমান বন্ধে পরিবারগুলোর কাজ বন্ধ রয়েছে, কেউ ছোট ছোট চাকরি করলেও বোনাস তো দূরের কথা নিয়মিত বেতনও হয়নি তাদের। এজন্য তারা সাময়িক অসুবিধায় পড়েছেন। এইধরনের অন্তত ২০০ পরিবারের বাসায় গিয়ে গোপনে তারা ঈদ উপহার হিসেবে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন।
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, এক-দুটি পরিবারকে সহায়তার মাধ্যমে কার্যক্রমটা তিনি একাই শুরু করেছিলেন। কিন্তু তার ফাঁড়ির সদস্যরা শুনেও এই কাজে অংশ নেন। পুলিশের অপর ৩০ সদস্য তাদের রেশনের পণ্য নিয়ে তার সঙ্গে যুক্ত হন। কেউ বোনাসের টাকার একটা অংশ দিয়ে দেন। সেই টাকা নিয়েই পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়ানো সম্ভব হয়। তিনি বলেন, বংশাল পুলিশ ফাঁড়ির এই মানবিক কার্যক্রম দেখে অন্য থানা বা ফাঁড়ির সহকর্মীরাও এগিয়ে আসেন। এলাকার বিত্তবানরাও এগিয়ে এসেছেন। অনেকেই তাদের জাকাতের টাকা দিয়ে দিচ্ছেন ফাঁড়ির ফান্ডে। এখন আরও বেশি মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারছেন তারা।
বংশাল থানার ওসি শাহীন ফকির সমকালকে বলেন, ওই পরিবারগুলো ছাড়াও লকডাউনে রয়েছেন-এমন পরিবারকেও খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। এ ছাড়া ১৫টি মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিন ও এলাকার অসহায় মানুষকেও ঈদ সামনে রেখে সহায়তা করা হচ্ছে। ফাঁড়িতে চালু হওয়া কার্যক্রমটি এখন তারা বংশাল থানাজুড়েই মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন।
মন্তব্য করুন