- রাজধানী
- রেড জোনে গুরুত্বপূর্ণ ৫ এলাকাও
রেড জোনে গুরুত্বপূর্ণ ৫ এলাকাও
স্বাস্থ্যবিধি না মানায় কম জনঘনত্বের এলাকায়ও আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে

রাজধানীর জনবহুল এলাকাগুলোতে তো বটেই, যেসব জায়গায় জনসংখ্যার ঘনত্ব অপেক্ষাকৃত কম সেখানেও করোনাভাইরাস ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়েছে। সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর রাজধানীর ৪৫টি এলাকাকে রেড জোন হিসেবে ঘোষণা করেছে। তাতে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি এলাকাও রয়েছে।
এতে দেখা যায়, উত্তরা আবাসিক এলাকা, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, মোহাম্মদপুর, বনশ্রী ও ভিআইপি এলাকা হিসেবে খ্যাত গুলশানও এই তালিকায় রয়েছে। এসব এলাকা রাজধানীর অন্যান্য এলাকার চেয়ে অনেকটাই আধুনিক ও পরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে। জনসংখ্যার ঘনত্বও অনেক কম। পাশাপাশি সবচেয়ে জনবহুল হিসেবে পরিচিত রাজধানীর লালবাগ ও মিরপুরও রেড জোনের তালিকায় স্থান পেয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, এক লাখ জনসংখ্যা অধ্যুষিত কোনো এলাকায় ৬০ জন করোনা আক্রান্ত হলেই সেটাকে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। যেসব এলাকাকে রেড জোন ঘোষণা করা হয়েছে, সেগুলোকে এভাবেই তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে গঠিত কেন্দ্রীয় কারিগরি কমিটির সদস্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. শাহ মনির হোসেন সমকালকে বলেন, যেসব এলাকায় জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি সেখানে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বেশি। আবার যেসব এলাকা কম জনবহুল সেখানে ঝুঁকিও তুলনামূলক কম। কিন্তু সে ক্ষেত্রে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ না করার কারণে কম জনঘনত্বের এলাকাগুলোতেও আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এ কারণে গুলশান-উত্তরার মতো এলাকাগুলোও রেড জোনে ঢুকে পড়ছে।
যেমন রাজউকের উত্তরা মডেল টাউন অনেকটাই পরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে এবং সেখানে জনঘনত্বও কম। এখানে রয়েছে প্রশস্ত রাস্তাঘাট। পুরান ঢাকা বা গুলিস্তানের মতো এলাকার ফুটপাতে চলতে গিয়ে যেভাবে মানুষে মানুষে ধাক্কা লাগে, সে রকম হয় না অভিজাত এবং ধনীদের বসবাসের এসব এলাকায়। একইভাবে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা বেসরকারি পর্যায়ে নির্মিত সবচেয়ে আধুনিক ও পরিকল্পিত আবাসিক অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। সেখানেও জনঘনত্ব কম। একইভাবে মোহাম্মদপুর, বনশ্রীও বেশ পরিকল্পিত। তবে এসব এলাকায়ও করোনাভাইরাস ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়েছে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক ও নগর পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান সমকালকে বলেন, ২০১২ সালের হিসাব অনুযায়ী ঢাকা শহরে গড়ে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৯০ হাজার মানুষ বাস করে। আর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ হলো লালবাগ যেখানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে দেড় লাখ মানুষের বাস।
আর মিরপুরের কাফরুলে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১ লাখ ২০ হাজার মানুষের বাস। সবচেয়ে বেশি জনবহুল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১২ নম্বর ওয়ার্ড। মিরপুরের আহমদনগর, দক্ষিণ বিশিল, টোলারবাগ ও মিরপুর-১ মিলে ওয়ার্ডটি গঠিত। করোনার শুরুতেই ১২ নম্বর ওয়ার্ডের টোলারবাগকে লকডাউন করা হয়েছিল। তাতে ফলও মিলেছিল। আর তুলনামূলক কম মানুষের বসবাস নতুন করে গড়ে ওঠা এলাকাগুলোয়। এর মধ্যে রয়েছে গুলশান, বারিধারা, উত্তরা, মোহাম্মদপুর, বনশ্রী ও বসুন্ধরা।
জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর ওয়েবসাইটে দেওয়া ২০০১ সালের আদম শুমারির রিপোর্ট অনুযায়ী, গুলশান থানা এলাকার জনসংখ্যা ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯৬৯ জন। আয়তন ৮ দশমিক ৮৫ বর্গকিলোমিটার। উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে জনসংখ্যা ২ লাখ ১২ হাজার। কাজেই গুলশানে জনঘনত্ব অনেকটাই কম। অথচ গত ১৬ জুন পর্যন্ত গুলশানে করোনাভাইরাসে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ২৩৮ জন। একইভাবে মোহাম্মদপুর থানা এলাকার আয়তন ৭ দশমিক ৪৪ বর্গ কিলোমিটার। জনসংখ্যা ২ লাখ ৪১ হাজার ৩৪৩ জন। ১৬ জুন পর্যন্ত মোহাম্মদপুরে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৫৯২ জন।
উত্তরা দুটি থানার আয়তন ৩৬ দশমিক ৯১ বর্গকিলোমিটার। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী উত্তরা এলাকার লোকসংখ্যা ৩ লাখ ৪৫ হাজার। ভোটার ১ লাখ ২০ হাজার। প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৯ হাজার ৩০০ মানুষের বাস। গত ১৬ জুন পর্যন্ত উত্তরায়ও করোনা আক্রান্ত হয়েছে ৬৭৬ জন।
এ ছাড়া বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার আয়তন প্রায় ২০ বর্গকিলোমিটার। লোকসংখ্যা কয়েক লাখ। গত ১৬ জুন পর্যন্ত বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় রোগী শনাক্ত হয়েছেন ১২৯ জন। এ ছাড়া বনশ্রীতেও লোকসংখ্যার ঘনত্ব কম হলেও সেটাও রেড জোনে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
মন্তব্য করুন