যৌতুক দাবি, যৌতুকের জন্য নির্যাতন এবং ভ্রূণ হত্যার অভিযোগে সাংবাদিক সাজিদা ইসলাম পারুলের করা মামলায় আসামি রেজাউল করিম প্লাবনকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়েছে। এদিকে প্লাবনকে গ্রেপ্তারের দাবিতে শনিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরেও মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে।

শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত এক মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে এই দাবি জানানো হয়। 'বোন পারুলের জন্য আমরা'র ব্যানারে অনুষ্ঠিত এই কর্মসূচির মূল উদ্যোক্তা ছিলেন লেখক ও প্রকাশক রবিন আহসান। বেলা ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ঘণ্টাব্যাপী এই মানববন্ধনে শিক্ষক, সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও সংস্কৃতিকর্মীরা অংশগ্রহণ করেন।

বক্তারা বলেন, পারুল রাষ্ট্রের কাছে যে বিচার দিয়েছেন, তা তিনি পাচ্ছেন না। সাংবাদিক হয়ে পারুল বিচার না পেলে অন্যরা কীভাবে বিচার পাবে? দুর্বৃত্ত, নির্যাতকারীরা সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে রয়ে গেছে। তাদের রুখতে হবে। প্লাবন একজন নির্যাতনকারী, ভ্রূণ হত্যাকারী। সারাদেশে যখন মানুষ যৌতুকের বিরুদ্ধে সোচ্চার, ঠিক সেই সময়ে প্লাবন যৌতুকের জন্য নির্যাতন করেছে পারুলকে। সেই প্লাবনকে কিছু মোড়ল নেতারা রক্ষা করতে উঠৈ পড়ে লেগেছে। অবিলম্বে প্লাবনকে গ্রেপ্তার করতে হবে, তাকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

এই কর্মসূচি আয়োজন প্রসঙ্গে উদ্যোক্তা রবিন আহসান বলেন, গত বুধবার পারুল একা প্ল্যাকার্ড নিয়ে প্রেসক্লাবের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন। তাকে একা দাঁড়াতে দেখেই তিনি কিছু একটা করার কথা ভাবেন। আর সেই ভাবনা থেকেই এই কর্মসূচির আয়োজন।

মানববন্ধনে কবি ও লেখক শাহেদ কায়েস বলেন, পুলিশ প্লাবনকে খুঁজে পায় না- এটা আমরা বিশ্বাস করি না। পুলিশ জঙ্গি থেকে শুরু করে বড় বড় আসামি গ্রেপ্তার করছে, অথচ প্লাবনকে পাচ্ছে না। পুলিশের সদিচ্ছা থাকলেই তাকে গ্রেপ্তার সম্ভব।

আইনজীবী জীবনানন্দ জয়ন্ত বলেন, পারুলের ফৌজদারী আইনের মামলায় দ্রুত প্লাবনকে গ্রেপ্তার ও দ্রুত বিচার নিষ্পত্তি করতে হবে। বাংলাদেশে নারীরা এখনও নিরাপত্তাহীন। সাংবাদিকতার নামে যেভাবে প্লাবনের মতো অপরাধীকে লালন করা হচ্ছে, তা বন্ধ করতে হবে।

লেখক সাদিয়া নাসরিন বলেন, পারুলের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়েছে। সেই ফৌজদারী মামলার আসামি প্লাবন অপরাধ করেও বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চলাফেরা করছেন। তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, প্লাবনের শক্তির উৎস কোথায়, এখনও প্লাবন কেন ধরা পড়লো না।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শেখ আদনান ফাহাদ বলেন, প্লাবনকে গ্রেপ্তার করতে বাধা কোথায়? আমাদের ধারণা সাংবাদিকদের কেউ কেউ প্লাবনকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন। যারা প্রশ্রয় দিচ্ছেন তারা সাবধান হয়ে যান। আপনারাও বিপদে পড়লে কেউ পাশে থাকবে না।

কবি ও লেখক কাজী নুসরাত শারমিন বলেন, পারুল একটি সাহসের নাম। পারুল নিজের বিচারের জন্য একাই প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু তাকে একা কেন দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে রাষ্ট্রকে।

দেশে এখনও নারীর জন্য পরিবেশ তৈরি হয়নি- এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, রাস্তা-ঘাটে, বাসে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে নারীরা। নারীর জন্য এমন একটা ক্ষেত্র তৈরি হোক যাতে তারা মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারে।

মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ফারাহ তানজীর তিতিল, মানবাধিকার কর্মী ওয়ালিদ শিকদার প্রমুখ।

যৌতুক দাবি, যৌতুকের জন্য নির্যাতন এবং ভ্রূণ হত্যার অভিযোগে গত ১১ মে হাতিরঝিল থানায় প্লাবনসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন পারুল। মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ২ এপ্রিল যুগান্তরের স্টাফ রিপোর্টার প্লাবনের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল তার। বিয়ের পর যৌতুক হিসেবে প্লাবন ঢাকায় একটি ফ্ল্যাট দাবি করেন পারুলের কাছে। একাধিক নারীর সঙ্গে প্লাবনের অনৈতিক সম্পর্ক থাকার কথা জেনে যান পারুল। অনৈতিক সম্পর্কে বাধা ও যৌতুক না দেওয়ায় তাকে নির্যাতন করা হয়। মারধরের কারণে পারুলের গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়ে যায়। ৫ মে তিনি প্লাবনের গ্রামের বাড়ি গেলে সেখানেও মারধরের শিকার হন। প্লাবনের বড় ভাই এমএ আজিজ, ছোট ভাই এসএম নিজামউদ্দিন এবং বাবা সামসুল হক ও মারধর করেন পারুলকে।

এরই মধ্যে প্লাবনকে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একাধিক সংগঠন বিবৃতি দিয়ে আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে।

তবে মামলার করার দেড় মাস পরও পুলিশ প্লাবনকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চেয়ে গত বুধবার প্রেস ক্লাবের সামনে প্ল্যাকার্ড হাতে একাই দাঁড়িয়ে যান পারুল।

সমকালের নাসিরনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি জানান, রেজাউল করিম প্লাবনকে গ্রেপ্তার করে দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবিতে শনিবার মানববন্ধন করেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল ও নাসিরনগর উপজেলার সচেতন নাগরিকেরা।

প্লাবনকে গ্রেপ্তার করে দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবিতে শনিবার মানববন্ধন করেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল ও নাসিরনগর উপজেলার সচেতন নাগরিকেরা -  সমকাল

শনিবার বেলা ১১টার দিকে নাসিরনগর উপজেলা সদরের কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে তারা মানববন্ধন করেন। মানববন্ধনে তাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একদল সাংবাদিক অংশ নেন।

সরাইল উপজেলার বিশিষ্ট সমাজকর্মী এম. মনসুর আলীর সভাপতিত্বে মানববন্ধনে অংশ নিয়ে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন নাসিরনগর প্রেস ক্লাবের সহসভাপতি আকতার হোসেন ভূঁইয়া, প্রথম আলোর ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি শাহাদাৎ হোসেন, ডেইলি স্টারের ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি মাসুক হৃদয়, বাংলা নিউজের ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট মেহেদী নূর, নাসিরনগরের স্কুল শিক্ষক সঞ্জয় দেব, ছাত্রনেতা চৌধুরী মোহাম্মদ আশিক, কলেজ শিক্ষার্থী মো. শফিক মিয়া ও মুর্শেদ মিয়া।

বক্তারা বলেন, দেড় মাস আগে রেজাউল করিম প্লাবনের বিরুদ্ধে রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় মামলা হলেও এখনও তাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। প্লাবন ঢাকা শহরে ঘুরে বেড়ালেও তাকে নাকি খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ, যা খুবই দুঃখজনক। তারা অতি দ্রুত প্লাবনকে গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান।