করোনা মহামারির কারণে রাজধানীতে কোরবানির পশুর হাটের সংখ্যা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। শুরুতে ২৪টি হাট বসানোর উদ্যোগ থাকলেও এখন দুই সিটি এলাকায় মাত্র ১১টি হাট বসবে। এর মধ্যে ছয়টি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এবং পাঁচটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকায়। অন্য হাটগুলোর বিপরীতে দরপত্র আহ্বান করা হলেও সেগুলো বাতিল করা হয়েছে। যেসব হাট বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেগুলোরও বেশিরভাগ নগরীর প্রান্তসীমায়। বাকিগুলো বসবে অপেক্ষাকৃত ফাঁকা স্থানে। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের বিষয়ে ইজারাদারদের বেশকিছু শর্ত বেঁধে দেওয়া হয়েছে। সেগুলো অনুসরণ না করলে ইজারা বাতিলের কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া যারা পশু কিনতে যাবেন, তাদেরও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে হাটে প্রবেশ করতে হবে। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে দুই সিটি করপোরেশন এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ডিএসসিসি জানিয়েছে, করোনা মহামারির কারণে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে এবার ডিএসসিসিতে পাঁচটি পশুহাট বসানোর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন বলেন, গতকালের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঢাকা দক্ষিণ সিটি এলাকায় এবার পাঁচটি অস্থায়ী পশুর হাট বসবে। পাশাপাশি আমরা একটি ডিজিটাল হাট বসানোরও চেষ্টা চালাচ্ছি।
ডিএসসিসি এলাকার যেসব স্থানে হাট বসবে, সেগুলো হলো- উত্তর শাহজাহানপুর মৈত্রী সংঘের মাঠসংলগ্ন খালি জায়গা, হাজারীবাগ লেদার টেকনোলজি কলেজসংলগ্ন খালি জায়গা, পোস্তগোলা শ্মশানঘাট সংলগ্ন খালি জায়গা, কমলাপুর লিটল ফ্রেন্ডস ক্লাবসংলগ্ন খালি জায়গা, আফতাবনগর ব্লক-ই, এফ, জির সেকশন ১ ও ২ নম্বর এলাকা।
এদিকে ডিএনসিসি এবার যে ছয়টি স্থানে পশুহাট বসানোর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে, তার সবগুলোই ঢাকা শহরের বাইরে। এগুলো হলো পূর্বাচল ব্রিজ সংলগ্ন মস্তুল ডুমনি, কাউলা, উত্তরার বৃন্দাবন, বসিলা, উত্তরখান ও ভাটারা। ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, করোনার কারণে মানুষের স্বাস্থ্যের দিকটি তারা সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে ভাবছেন। এ জন্য সরকার নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি দাম উঠলেও তারা অনেক স্থানে পশুহাট বসাচ্ছেন না। এতে করপোরেশনের আর্থিক ক্ষতি হলেও নগরবাসীর স্বার্থটা আগে দেখছেন। তিনি বলেন, এবার মানুষ ঘরে বসেও পশু কিনতে পারবেন। ডিএনসিসির পক্ষ থেকে একটি অনলাইন হাট চালু করা হয়েছে। যারা ডিজিটাল হাট থেকে পশু কিনবেন, প্রয়োজনে তারা মাংসও বানিয়ে নিতে পারবেন।
জানা গেছে, এবার ডিএসসিসির পক্ষ থেকে ১৪টি স্থানে পশুর হাট বসানোর জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। ডিএনসিসি করেছিল ১০টি। এই ২৪টির মধ্যে শেষ পর্যন্ত ১১টি স্থানে হাট বসতে যাচ্ছে। ফলে রাজধানীতে বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার হাটের সংখ্যা অর্ধেকেরও নিচে নেমে এলো। আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা বিষয়ে গতকাল দুপুরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যে গাইডলাইন তৈরি করছে, তা বাস্তবায়নের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নেবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সুপারিশের বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও সিটি করপোরেশন ব্যবস্থা নেবে। কোরবানির হাটের ইজারাদারদের ব্যবস্থায় হাটের প্রবেশপথে হাত ধোয়ার সুবিধা (বেসিনসহ) ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে হবে। ক্রেতাদের মাস্ক পরে হাটে প্রবেশ করতে হবে। হাটের কাছে ব্যাংক বুথ থাকবে। রাস্তাঘাটের ওপর পশুর হাট দেওয়া যাবে না। পশুর ট্রাক কোন হাটে যাবে সেটা ট্রাকের সামনে একটি ব্যানার লেখা থাকবে। ওই ট্রাক অন্য কোথাও থামানো যাবে না। পশুবাহী কোনো গাড়ি রাস্তার যে কোনো স্থানে থামানো যাবে না।
সভায় আরও সিদ্ধান্ত হয়, ঈদের সময় নদীপথে ফেরি, লঞ্চ ও জাহাজে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করা যাবে না। নদীপথে পশুবাহী ট্রলার যাতে অতিরিক্ত বোঝাই না হয় সে ব্যাপারে কোস্টগার্ড ও নৌ-পুলিশ লক্ষ্য রাখবে। পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণ ও যথাযথভাবে বিপণনের বিষয়ে শিল্প মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সভাপতিত্বে সভায় জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন, সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. শহিদুজ্জামান, আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদসহ সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।