উচ্চতা প্রায় চার ফুট। গায়ের রং কুচকুচে কালো। শরীরের পেছন দিকটায় কিছুটা উঁচু। আর মাথা থেকে ঘাড় পর্যন্ত কোঁকড়ানো ঘন কালো চুল। কোনো শিং নেই। পায়ের মাংসপেশি মোটা মোটা। ওজন ছয়শ' কেজির মতো। আকর্ষণীয় চেহারার ভিন্ন ধরনের গরুটি শোভা পাচ্ছে গাবতলী-বছিলা বেড়িবাঁধের মোহাম্মদপুর অংশে অবস্থিত আল মদিনা ক্যাটেল ফার্মে। সুদূর যুক্তরাষ্ট্র থেকে বছরখানেক আগে আমদানি করেছিলেন ফার্মের মালিক রমজান আলী। তিনি জানান, এটি ডেক্সটার জাতের গরু। এটা মূলত আয়ারল্যান্ডের। যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিমানে করে ঢাকায় এনেছিলেন তিনি। এগুলোর আকৃতি খুব বড় হয় না। তার কাছে বর্তমানে চারটি ডেক্সটার গরু রয়েছে। প্রতিটির ওজন হবে ৬০০ থেকে সাড়ে ৬০০ কেজির মতো। এগুলোর মাংস সাধারণ গরুর মাংসের চেয়ে অনেক বেশি সুস্বাদু। এ জন্য বিশ্বে ডেক্সটার গরুর মাংসের দাম সবচেয়ে বেশি। এই গরুর মাংসে আলাদা চর্বি থাকে না। চর্বিগুলো মাংসের সঙ্গে মিশে থাকে। মাংসে কোনো আঁশও পাওয়া যায় না। ভোজনরসিক মানুষ ডেক্সটার গরুর মাংস খুঁজে বেড়ান। এ জন্য দামও অনেক বেশি। বাংলাদেশে তিনিই প্রথম এই গরু আমদানি করেছেন। তার ফার্মের একটি গরু ১৭ লাখ টাকায় বিক্রিও হয়ে গেছে।

তিনি জানান, আরেকটি নতুন প্রজাতির গরু তার ফার্মে রয়েছে। সেটা যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাংগাস জাতের। এগুলোর ওজন এক হাজার ২০০ কেজির মতো। এগুলোর উচ্চতা একটু বেশি। প্রতিটির দাম ১৫ থেকে ১৭ লাখ টাকা। তার ফার্মে চারটি অ্যাংগাস জাতের গরু রয়েছে। এটিও বাংলাদেশে তিনিই প্রথম আমদানি করেছেন বলে জানান। এ জন্যই আল মদিনা ক্যাটেল ফার্মে অসংখ্য কোরবানির পশু থাকলেও মূলত দৃষ্টি কাড়ছে এই ডেক্সটার ও অ্যাংগাস জাতের গরুগুলো।

সরেজমিনে দেখা গেছে, আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহা সামনে রেখে গাবতলী-বছিলার পশু খামারগুলো পশুতে ভরা। দেশি-বিদেশি হরেক জাতের গরু, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা, মহিষ রয়েছে খামারগুলোতে। যেসব খামার কেবল দুধ বিপণনের সঙ্গে যুক্ত, সেসব খামারেও বিভিন্ন জাতের ষাঁড় গরু কোরবানি উপলক্ষে তৈরি করা হয়েছে। জাকের ডেইরি ফার্ম, বাবা ডেইরি ফার্ম, হক ডেইরি ফার্ম, জামাল ডেইরি ফার্ম, অর্গানিক ডেইরি অ্যান্ড অ্যাগ্রোভেট প্রভৃতি খামারে দেশি-বিদেশি হরেক জাতের নাদুসনুদুস পশুর ঠাঁই। তবে কেনাবেচা কম বলে জানালেন খামার মালিকরা। তারা বলেন, এবার ছোট গরুর চাহিদা একটু বেশি। জাকের ডেইরি ফার্মের সাজ্জাদ হোসেন জানান, তারা মূলত দুধ বাজারজাত করেন। ষাঁড় বাছুর হলে সেগুলো কোরবানির জন্য প্রস্তুত করেন। তাদের বেশিরভাগই অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন জাতের।

সবচেয়ে বেশি পশুর সমহার দেখা যায় সাদেক অ্যাগ্রোতে। সেখানে রজো ও টাইগার নামে দুটি গরু ক্রেতা-দর্শনার্থীদের মনোযোগ কেড়েছে। খামার কর্তৃপক্ষ বলছে, এবার এর চেয়ে বড় পশু আর দেখা যাচ্ছে না। দেখা যায়, গায়ের রং কিছুটা লালটে। তার মধ্যে কোথাও কোথাও হালকা কালো রঙের ছোঁয়া। অতি শান্ত স্বভাবের। শিং নেই। কিন্তু তার সবকিছুতেই একটি আয়েশি ভাব। চেহারায় আভিজাত্যে। সারা শরীর দিয়ে যেন তেল চুইয়ে পড়ছে। এমনই বনেদি চেহারার 'রজো'। আসন্ন কোরবানির ঈদ সামনে রেখে পশুটিকে এত দিন লালনপালন করা হয়েছে। এখন ওজন এক হাজার ৩০০ কেজি। উচ্চতা প্রায় সাত ফুট। এরই মধ্যে একজন ক্রেতা পশুটির দাম ৩৭ লাখ টাকা বলেছেন। আড়াই বছর আগে রজোকে আনা হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস থেকে। তখন এটা ছিল বাছুর। বিশেষ বিমানে করে শীতের সময় আনা হয়। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়া কিছুটা ঠান্ডা। তাকে ধীরে ধীরে বাংলাদেশের আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য শীতকালকেই বেছে নেওয়া হয়। বিমান থেকে সোজা খামারে। এরপর প্রায় ৩০ মাস তাকে অতি যত্নের সঙ্গে লালনপালন করার পর এই রোশনাই চেহারা তার।

পশুটি লালনপালনের দায়িত্বে থাকা রিয়াজ বলেন, 'মূলত দানাদার ভুসিই রজোর প্রধান খাবার। এই খাবারের মধ্যে থাকে গম, খেসারি, ছোলা, ভুট্টা ও অ্যাংকর। এ ছাড়া অল্পস্বল্প ঘাস ও খড়ও খাওয়ানো হয়। প্রতিদিন ১৫ থেকে ১৭ কেজি দানাদার খাবার খায়। সবকিছুই প্রাকৃতিক বা অর্গানিক। প্রতিদিন দুই থেকে তিনবার গোসল করানো হয়। একবার শ্যাম্পু দেওয়া হয়। মাঝেমধ্যেই পশু চিকিৎসককে দিয়ে রজোর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। গরম থেকে পরিত্রাণ দিতে মাথার ওপর একটা ফ্যান চালু রাখা হয় সর্বক্ষণ।'

এরপরই খামারটিতে আরেকটি বৃহৎ আকৃতির গরু দেখা গেল। সেটাও যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনা। নাম টাইগার। এরই মধ্যে ২৭ লাখ টাকা দাম উঠেছে। ওজন হবে এক হাজার ২০০ কেজি। উচ্চতা ছয় ফুটের ওপর।

ওয়েল টেক অ্যাগ্রোর কামাল হোসেন জানান, তার ফার্মে এক হাজার বা ৯০০ কেজির মতো ওজনের গরু রয়েছে। ব্রাহামা জাতের এগুলো যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনা। দাম চাইছেন ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা করে। এ ছাড়া দেশি গরুও আছে।

কয়েকটি ফার্মে দেখা গেল, বড় আকৃতির খাসি ছাগল। খাসি ছাগল লালনপালনকারী এরশাদ বলেন, 'তার কাছে ২২টি বড় আকৃতির খাসি আছে। সবচেয়ে বড় যে দুটি খাসি আছে, সেগুলোর ওজন প্রতিটির ১৩০ থেকে ১৪০ কেজি। এগুলো ভারতীয় বিটল প্রজাতির ছাগল। যেসব দুম্বা দেখা গেল, সেগুলোর দাম দুই লাখ ১০ হাজার থেকে দুই লাখ ৩০ হাজার টাকা। সবচেয়ে বড় ভেড়াটির ওজন ১০৩ কেজি। দাম চাওয়া হচ্ছে এক লাখ ৪০ হাজার টাকা।'

সাদেক অ্যাগ্রোর স্বত্বাধিকারী ইমরান হোসেন বলেন, 'এবার পশুর পর্যাপ্ত মজুদ আছে। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জাতের পশু আছে বেড়িবাঁধের ফার্মগুলোতে। এরই মধ্যে অনেকেই খোঁজখবর করছেন। অনেকে কিনছেনও।'