সাহাবউদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনাভাইরাস পরীক্ষার অনুমতি স্থগিত করা হয়েছিল। এরপরও রাজধানীর গুলশান-২ এর এ হাসপাতালটিতে করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছিল। এ ছাড়া অনুমতি ছাড়াই র‌্যাপিড কিট দিয়ে করোনা আক্রান্ত রোগীর অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করে আসছিল হাসপাতালটি। 

এসব অভিযোগে রোববার বিকেলে র‌্যাব অভিযান চালিয়েছে এ হাসপাতালে। এ সময় হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আবুল হাসনাত ও ইনভেন্টরি অফিসার শাহরিজ কবির সাদিকে আটক করা হয়। জব্দ করা হয় কিট ও সার্জিক্যালসামগ্রী। 

অভিযানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর অংশ নেয়। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন র‌্যাব সদর দপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সারওয়ার আলম। 

তিনি বলেন, 'প্রথমে হাসপাতালটির করোনা পরীক্ষার অনুমতি দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কিন্তু তারা আরটিসিআর ল্যাব স্থাপন না করায় পরে অনুমতি স্থগিত করা হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও বলেছে, তারা কোনো পরীক্ষা করছে না। কিন্তু অভিযানের সময় করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়া গেছে। এসব রিপোর্টে হাসপাতালের লোগোও রয়েছে। অথচ তাদের এ পরীক্ষার ল্যাব নেই। অন্য জায়গায় করোনা পরীক্ষা করিয়ে এনে সাহাবউদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্যাডে লিখে রোগীদের দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া হাসপাতালটির করোনাভাইরাস অ্যান্টিবডি পরীক্ষার কোনো অনুমতি না থাকলেও  তারা অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করছে।'  

এর আগে করোনার ভুয়া টেস্ট কেলেংকারিতে উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতাল ও জেকেজি হেলথ কেয়ারে অভিযান চালায় র‌্যাব। এরপর গ্রেপ্তার করা হয় রিজেন্ট হাসপাতালের কর্ণধার মো. সাহেদ ওরফে সাহেদ করিম এবং জেকেজির ডা. আরিফ চৌধুরী ও ডা. সাবরিনা চৌধুরীকে। 

সাহাবউদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক মনসুর আলী করোনা পরীক্ষার অনুমতি স্থগিতের বিষয়টি স্বীকার করে জানান, নিজেদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অ্যান্টিবডি নির্ণয়ের জন্য বিদেশ থেকে শ'খানেক কিট আনা হয়। এখনও পরীক্ষা করা হয়েছে কি-না, তা জানা নেই তার।

র‌্যাব সূত্র জানিয়েছে, হাসপাতালের লাইসেন্সের মেয়াদ ছিল ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত। এরপর তারা সেটা নবায়ন করায়নি। এমনকি এক বছর পার হলেও তারা নবায়নের জন্য আবেদন করেনি। তবে রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযানের পর তারা গত ১৩ জুলাই লাইসেন্স নবায়নের আবেদন করেছে। তবে সেটি এখনও নবায়ন হয়নি।  অ্যান্টিবডি পরীক্ষার নামে রোগীদের কাছ থেকে তিন হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা নেওয়া হতো বলে অভিযোগ রয়েছে হাসপাতালটির বিরুদ্ধে। 

সূত্র আরও জানায়, অ্যান্টিবডি পরীক্ষার জন্য কিট কোথা থেকে আনা হয়েছে তা বলতে চাইছে না কর্তৃপক্ষের কেউ। তারা র‌্যাবের অভিযানের শুরু থেকেই বলে আসছে, এ ধরনের কোনো কিট তারা ব্যবহার করছে না। তাদের কাছে কোনো কিট বা ডিভাইস নেই। এছাড়া তারা প্যাথলজি টেস্টের উপকরণ সঠিকভাবে সংরক্ষণ করছে না। 

র‌্যাবের হাতে আটক হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আবুল হাসনাত বলেন, 'আমরা শুধু একটি অ্যান্টিবডি টেস্ট করেছি। ডা. নারায়ণ ভৌমিক এই কিট নিয়ে এসেছেন তার অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করার জন্য। প্লাজমা দেবেন বলেই তিনি এই পরীক্ষা করেছিলেন। করোনার নমুনা পরীক্ষার কোনো রিপোর্ট দেওয়া হয়নি।' অ্যান্টিবডি পরীক্ষার রিপোর্টগুলো তাহলে কীভাবে এসেছে- এ  প্রশ্নের কোনো সঠিক জবাব দিতে পারেননি তিনি।

১১ বছর আগের মেয়াদোত্তীর্ণ সার্জিক্যালসামগ্রী: হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারেও অভিযান চালায় র‌্যাব। পাঁচটি অপারেশন থিয়েটারের একটিতে ২০০৯ সালে ও ২০১১ সালের মেয়াদোত্তীর্ণ পাঁচটি সার্জিক্যালসামগ্রী পাওয়া গেছে- যেগুলো রোগীদের অজ্ঞান করার কাজে ব্যবহৃত হতো। বাকি চারটি অপারেশন থিয়েটার তালামারা। 

 অভিযানে উপস্থিত ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, এসব সার্জিক্যালসামগ্রী মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় এগুলো ব্যবহারে 'রোগীর মৃত্যুঝুঁকি' রয়েছে।

র‌্যাব জানায়, প্রতিষ্ঠানটি শুধু ভুয়া পরীক্ষা করছে না, যেসব মেডিকেল ইকুইপমেন্ট একবারের বেশি ব্যবহার করা যায় না- সেগুলো একাধিকবার ব্যবহার করছে। তাদের এসব সামগ্রী ডিটারজেন্ট দিয়ে পরিষ্কার করতে দেখা গেছে। এটাও বড় অনিয়ম।