ঢাকা রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫

জলবায়ুর ক্ষতিপূরণ আদায়ে সরকারকে জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান

জলবায়ুর ক্ষতিপূরণ আদায়ে সরকারকে জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান

জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশে অতিথিরা। ছবি: সমকাল

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০২৩ | ১৯:৩৫ | আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২৩ | ১৫:৩১

ধনী দেশগুলোকে বৈশ্বিক জলবায়ু উষ্ণতার জন্য দায়ী করে তাদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ে সরকারকে জোরালো পদেক্ষপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তৃণমূলের প্রতিনিধিরা। তারা বলেছেন, ৩০ নভেম্বর দুবাইয়ে শুরু হতে যাওয়া বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে (কপ-২৮) জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী ধনী দেশগুলোর কাছ থেকে ক্ষতিপুরণ আদায়ে সরকারকে জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে। ক্ষতিপুরণ প্রদানের ক্ষেত্রে সমবন্টন নিশ্চিত করতে হবে।

শুক্রবার রাজধানীর স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধেশ্বরী ক্যাম্পাসে আয়েজিত দুইদিনব্যাপী জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন।

সমাবেশ প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক বিশিষ্ট মানবাধিকার নেত্রী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামালের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর জলবায়ুবিষয়ক বিশেষ দূত এবং পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী এমপি। ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিলের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ফাতিনাজ ফিরোজ, এশিয়ান পিপলস্ মুভমেন্ট অন ডেট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (এপিএমডিডি) সমন্বয়ক লিডি ন্যাকপিল, ব্রতী সমাজকল্যাণ সংস্থার প্রধান নির্বাহী শারমিন মুরশীদ, জাপান থেকে আগত প্রতিনিধি মাকিকু আরিমা, নেপাল থেকে আগত প্রতিনিধি অর্জুন কারকি, ‘তারা ক্লাইমেট ফাউন্ডেশন’ এর ডেপুটি রিজিওনাল প্রোগ্রাম ডিরেক্টর কাইনান হাউটন, ইউএনডিপি’র সহকারী আবাসিক প্রতিনিধি আনোয়ারুল হক, সিইআর প্রতিনিধি চৌধুরি মোহাম্মদ শাহরিয়ার আহমেদ, আইইইএফএ’র প্রতিনিধি শফিকুল আলম, কোস্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম চৌধুরী, সিপিআরপি’র প্রধান নির্বাহী মো. শামসুদ্দোহা, আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের চেয়ারম্যান ড. আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার, সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারি অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী, রিভার বাংলার সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ, নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ইবনুল সাঈদ রানা প্রমুখ।

সমাবেশের প্রধান অতিথি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে কম দায়ীরাই বেশি ভুক্তভোগী হচ্ছে। আবার যারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত, জলবায়ু অভিযোজনে তারাই সবচেয়ে কম সক্ষমতা সম্পন্ন। তাই এই সংকট মোকাবেলায় জলবায়ু ন্যায্যতার দাবি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জলবায়ু ন্যায্যতা নিশ্চিতকরণে ধনী দেশগুলোকে বাধ্য করতে সম্মিলিত অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান তিনি।

মানবাধিকার নেত্রী সুলতানা কামাল বলেন, বর্তমানের যে জলবায়ু সংকট, তা মানবসৃষ্ট। নানাভাবে আমরা পরিবেশকে নষ্ট করছি। সংরক্ষিত বনাঞ্চলগুলো বিভিন্ন লাভজনক প্রকল্পের আওতায় এনে প্রতিনিয়ত তা ধ্বংস করছি। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছি। এই সমাবেশ থেকে নিজেদের করণীয় খুঁজে বের করে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে। জলবায়ু সংকটের জন্য দায়ী ধনী দেশগুলোকে জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণে বাধ্য করতে সমন্বিত প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।

এপিএমডিডি’র সমন্বয়ক লিডি ন্যাকপিল বলেন, বিজ্ঞানীদের ধারণার চেয়েও কয়েকগুণ বেশি গতিতে জলবায়ু পরিবর্তন সংঘটিত হচ্ছে। পৃথিবীর গড় তাপমাত্রার ১ দশমিক ৫ ডিগ্রীর মধ্যে রাখার যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিলো, ধনী দেশগুলো ক্রমাগত কার্বন নিঃসরণের ফলে তা আপাতদৃষ্টিতে প্রায় অসম্ভব। ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিউট্রাল হওয়ার কথা থাকলেও এখনো সেই নির্দেশনা বাস্তবায়নের ধারে কাছেও নেই আমরা। আগামী দুই-তিনটি বছর আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতি প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে ধনী দেশগুলোকে বাধ্য করতে হবে।

সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব শরীফ জামিল বলেন, ভ্রান্ত উন্নয়ন নীতির মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতার প্রতি চরম অবহেলার সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। এই সম্মেলনের মাধ্যমে দেশি-বিদেশি স্বার্থন্বেষী মহলকে আমরা একটি বার্তা পৌঁছে দিতে চাই, যা জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের ক্ষোভ ও দুর্দশার কথা তুলে ধরবে।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই বিশিষ্ট জলবায়ু বিশেষজ্ঞ সলিমুল হকের স্বরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। এসময় তার স্মৃতিচারণ করেন সলিমুল হকের ছেলে সাকিবুর রহমান সাকিব হক। এর আগে সকাল ৯টায় বর্ণাঢ্য র‌্যালির মধ্য দিয়ে সমাবেশ শুরু হয়। উদ্বোধন শেষে ‘জীবিকা, খাদ্য এবং স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব’, ‘বিশুদ্ধ শক্তি, জল এবং কর্মসংস্থানের অধিকার: জীবাশ্ম জ্বালানি প্রকল্পের সম্প্রসারণের প্রভাব’ এবং ‘বদ্বীপ বাস্তুতন্ত্রের উপর প্রভাব ও সর্বশেষ জলবায়ু ন্যায্যতায় তরুণদের ভাবনা’ শীর্ষক বিশেষ আলোচনা হয়।

বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন (কপ-২৮) উপলক্ষে আয়োজিত দুই দিনের এই আলোচনায় দেশি-বিদেশি ৯ শতাধিক প্রতিনিধি অংশ নেন। আগামীকাল শনিবার বেলা ৩টায় ঘোষণাপত্র গ্রহণের মধ্য দিয়ে এই সমাবেশ শেষ হবে।

আরও পড়ুন

×