রাজধানীর পল্লবী ও মিরপুর এলাকার অপরাধজগতে একসময়ের চেনামুখ মফিজুর রহমান মামুন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার মুখে ২০০৪ সালের দিকে তার প্রকাশ্য সন্ত্রাসী তৎপরতা কিছুটা স্তিমিত হয়ে পড়ে। তারপরও ওই এলাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের একাংশের নিয়ন্ত্রণ ছিল তার হাতেই।

২৭ মামলায় ১৫টি গ্রেপ্তারি আর দুটি সাজা পরোয়ানা নিয়ে ভারতে পালিয়ে থেকেও অপরাধের কলকাঠি নাড়ত মামুন। ফোনে চাঁদা দাবি করত প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের কাছে। কিন্তু পুরো এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিতে দেশে এসেই গোয়েন্দা ফাঁদে পড়ে এই শীর্ষ সন্ত্রাসী। 

সোমবার সকালে পল্লবীর বাইতুন নূর জামে মসজিদ এলাকা থেকে কাউন্টার টেররিজম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের একটি দলের হাতে ধরা পড়ে সে।

মফিজুর রহমান মামুনের বিরুদ্ধে পল্লবীসহ মিরপুরের বিভিন্ন থানায় চাঁদাবাজি, খুন, মাদক, অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার ও ডাকাতির অভিযোগে ২৭টি মামলা রয়েছে। যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত মামুন পুলিশের তালিকায় মিরপুর-পল্লবী এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসীদের একজন।

২০০১ সালের দিকে মামুন একবার গ্রেপ্তারও হয়েছিল। কিন্তু কিছুদিন কারাভোগের পর জামিনে বেরিয়ে আত্মগোপনে চলে যায় সে। একপর্যায়ে ২০০৪ সালের দিকে পালিয়ে যায় ভারতে। পাসপোর্ট জালিয়াতি ও অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে সেখানে ২০০৮ সালের দিকে গ্রেপ্তার হয় মামুন। কারাভোগের পর ভারতে বসেই মিরপুর-পল্লবীর সন্ত্রাসীদের একাংশকে নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে সে।

সম্প্রতি মামুন বিদেশে পলাতক মিরপুরের অপর শীর্ষ সন্ত্রাসী ইব্রাহীম ও শাহাদাত বাহিনীর প্রধান শাহাদাতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ গড়ে তোলে। ওই দুই শীর্ষ সন্ত্রাসীর সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে ঢাকায় থাকা সন্ত্রাসীদের ঐক্যবদ্ধ করে মিরপুরের আন্ডারওয়ার্ল্ডকে সক্রিয় করে তুলতে সম্প্রতি দেশে আসে সে।

কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের ইনভেস্টিগেশন বিভাগের ডিসি মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম সমকালকে বলেন, রাষ্ট্রবিরোধী একটি সন্ত্রাসী চক্র টার্গেট কিলিং ও সহিংসতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে বলে তাদের কাছে খবর ছিল। চক্রটি চোরাবাজার থেকে অবৈধভাবে আগ্নেয়াস্ত্র সংগ্রহের চেষ্টাও করছিল। ভারত থেকে দেশে এসে তালিকাভুক্ত পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী মফিজুর রহমান মামুনের নেতৃত্বে এসব অপতৎপরতা চলছিল।

কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের এই কর্মকর্তা বলেন, এক মাস আগে মামুন দেশে আসে বলে তাদের কাছে তথ্য রয়েছে। সোমবার সকালে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেদিনই তাকে আদালতে হাজির করে চার দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদের পর তার বিষয়ে আরও তথ্য পাওয়া যাবে।

অপর একজন কর্মকর্তা বলেন, ১৯৯০-৯১ সালের দিকে পল্লবী এলাকায় বিএনপির মনোনয়নে ওয়ার্ড কমিশনারও হয়েছিল। অপরাধজগতে অবস্থানকে সুসংহত করতে দেশে এলেও বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ারও চিন্তা ছিল তার। সম্প্রতি করোনায় মৃত ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসানের জায়গায় সক্রিয় হতে চেয়েছিল সে। এ ব্যাপারে বিএনপির কয়েকজন নেতার সবুজ সংকেতও পেয়েছিল। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এসব জানিয়েছে মামুন।

ওই কর্মকর্তা বলেন, মামুনের ছোট ভাই জামিলের বিরুদ্ধেও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মামলা রয়েছে। সর্বশেষ পল্লবী থানায় বিস্ম্ফোরিত বোমাগুলোও সরবরাহ করেছে সে। ধারণা করা হচ্ছে, জামিলও ভারতে পালিয়ে গেছে।