- রাজধানী
- প্রেমিককে ৫ টুকরো করে লাশের পাশে ৫ ঘণ্টা
অনৈতিক সম্পর্কের নিষ্ঠুর পরিণতি
প্রেমিককে ৫ টুকরো করে লাশের পাশে ৫ ঘণ্টা

নিহত সজিব হাসান ও শাহনাজ পারভীন
রাজধানীর ওয়ারীর স্বামীবাগের একটি বাড়ির চারতলার ছোট্ট কক্ষ বছর পাঁচেক আগে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে ভাড়া নিয়েছিলেন পরিবহনকর্মী সজিব হাসান ও শাহনাজ পারভীন। তবে বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টার দিকে পুলিশ আকস্মিক ওই বাসায় অভিযান চালানোর পর যে দৃশ্য দেখা যায়, তাতে বাড়ির মালিক ও আশপাশের বাসিন্দারা হতবিহ্বল হয়ে পড়েন। ৪২ বছর বয়সী শাহনাজ পাঁচ টুকরো লাশের পাশে ভাবলেশহীনভাবে বসে আছেন। পুরো ঘর রক্তাক্ত। লাশের টুকরোগুলো সজিবের।
নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের পর বেরিয়ে এলো তারা অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন। সে সম্পর্কের জের ধরেই ওই পরিবহনকর্মীর কিছু অপকর্ম জানতে পারেন শাহনাজ। এ নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত শাহনাজ একাই কেএম দাস লেনের ১৭/১ নম্বর বাসার ভেতর সজিবকে হত্যার পর লাশ টুকরো করে তা নিয়ে পাঁচ ঘণ্টা বসে ছিলেন।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তিনি হত্যার কথা স্বীকারও করেছেন। পুলিশকে আরও জানিয়েছেন, তার স্বামী একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তাদের সংসারে দুই মেয়ে। এক মেয়ে কলেজপড়ুয়া। আরেক মেয়েকে স্কুলে নেওয়ার সময় বছর পাঁচেক আগে শ্যামলী পরিবহন কাউন্টারের স্টাফ সজিবের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। প্রথমে টুকটাক কথা হতো। একপর্যায়ে তারা অনৈতিক সম্পর্কে জড়ান। তাকে স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দিয়ে স্বামীবাগে বাসাও ভাড়া নেন। প্রায় প্রতিদিন দিনের বেলায় ওই বাসায় এসে সময় কাটাতেন। আর সন্ধ্যায় স্বামীর বাসায় ফিরতেন। বুটিকসের কাজ শেখার কথা বলে নিয়মিত বের হতেন তিনি। তার প্রকৃত স্বামী জসীম ও সজিবের বাসা ওয়ারীতে।
তিনি পুলিশকে আরও জানান, সম্পর্কের কথা অন্যদের জানিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে সে প্রায়ই টাকা আদায় করত। তার মেয়ের ওপরও কুনজর পড়েছিল। আরও কয়েক নারীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক ছিল। সে যে কোনো সময় তাদের সম্পর্ক কাউকে জানিয়ে দিতে পারে- এ ভয় থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখেন তিনি। আবার স্বামীর সঙ্গেও তার সুসম্পর্ক ছিল না। দু'জন প্রায়ই ঝগড়ায় জড়াতেন।
জানা যায়, গত সোমবার স্বামী ও দুই সন্তান রেখে সজিবের বাসায় গিয়ে ওঠেন শাহনাজ। তার খোঁজ না পেয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় জিডি করা হয়। পুলিশ জিডির তদন্তও শুরু করে। প্রযুক্তিগত ও অন্যান্য তথ্য বিশ্লেষণ করে পুলিশ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টার দিকে তার অবস্থান নিশ্চিত করে। এরই মধ্যে হত্যাকাণ্ডের পর শাহনাজ তার স্বামী জসীমকেও ফোন করে জানান, খুব বিপদে আছেন। তাকে উদ্ধারের জন্য অনুরোধ করেন। বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়। বিকেল ৩টার দিকে পুলিশ স্বামীবাগের ওই বাসায় যায়। এরপর দুই হাত ও দুই পা কেটে বিচ্ছিন্ন করা লাশ উদ্ধার করা হয়। লাশের টুকরোগুলো স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মর্গে রাখা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, শাহনাজ গৃহিণী। তার বাবার বাড়ি চাঁদপুরে। আর গ্রামে থাকা মা-বাবা ও পরিবারের কারও সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল না সজিবের। স্বজনরা জানতেন, ঢাকায় এক বয়স্ক নারীকে বিয়ে করে সংসার করছেন।
পুলিশের ওয়ারী বিভাগের সহকারী কমিশনার হানান্নুল ইসলাম সমকালকে জানান, সজিব একজন বহুমুখী প্রতারকও। ভাড়াটিয়ার তথ্য ফরমে তিনি স্ত্রীর নাম 'মৌসুমী' বলে উল্লেখ করেন। তবে এ নামে তার কোনো স্ত্রীর অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। লোকজন এতকাল জানতেন, শাহনাজই তার স্ত্রী। চরম ক্ষোভ থেকেই হত্যার পর লাশ আবার পাঁচ টুকরো করেছিলেন তিনি। এটা এক ধরনের মানসিক বিকৃতির পরিচয়ও। তার হাতেও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। হয়তো শাহনাজের আশঙ্কা ছিল, সজিব তাকে মেরে ফেলতে পারেন। তাই ঝগড়ার সময় এলোপাতাড়ি আঘাত করেন।
পুলিশের ওয়ারী অঞ্চলের অতিরিক্ত উপকমিশনার কামরুল ইসলাম বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে শাহনাজ পুলিশ কর্মকর্তাদের বলেন, তিন দিন আগে ব্যাগভর্তি কাপড়চোপড় নিয়ে স্বামীবাগের বাসায় স্থায়ীভাবে থাকার জন্য আসেন। স্বামীর বাসা থেকে স্বর্ণালংকার ও টাকা-পয়সাও নিয়ে এসেছিলেন। আরেকজনের সঙ্গে সম্পর্ক করার চেষ্টা নিয়ে সকাল ১০টার দিকে কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে সজিব তাকে লাঠিপেটা করেন। ছুরি দিয়ে আঘাতও করেন। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে তার হাতে ছুরির আঘাত লাগে। এরপর তিনি ছুরি কেড়ে নিয়ে তাকে উপর্যুপরি আঘাত করতে থাকেন। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর পর্যায়ক্রমে পাটার ওপর হাত ও পা রেখে ছুরিতে শিল দিয়ে আঘাত করা হয়। এভাবে কনুই থেকে তার দুই হাত ও হাঁটু থেকে পা কেটে বিচ্ছিন্ন করা হয়। রক্তমাখা ছুরি ও শিলপাটা উদ্ধার করা হয়েছে।
ওয়ারী থানার পরিদর্শক (অপারেশন) সাজ্জাদ রোমান বলেন, সকালে ঘুম থেকে উঠে শাহনাজের স্বর্ণের গহনা বিক্রি করতে বলেন সজিব। বাস কাউন্টারের কাজ ছেড়ে দিয়ে ওই টাকায় ব্যবসা করতে চেয়েছিলেন। শাহনাজ এতে না করে দেন। এ নিয়েই দু'জনের মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়।
মন্তব্য করুন