করোনা মহামারীর কারণে দেশে এসে আটকা পড়েছিলেন মালয়েশিয়ার এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের (এপিইউ) ছাত্রী তাজরিয়ান মোস্তফা মৌমিতা (২০)। এরপর পরিবারের সঙ্গে থাকতেন ধানমন্ডির ৮ নম্বর রোডের ভাড়া বাসায়। গত শুক্রবার বিকেলে ওই বাসার নিচ থেকেই রক্তাক্ত অবস্থায় তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিকভাবে পুলিশ বলছে, ওই তরুণী বাসার ছাদ থেকে পড়ে মারা গেছেন। কেউ তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে হত্যা করেছে কিনা, সে বিষয়ে তদন্ত চলছে।

অবশ্য পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে, মৌমিতাকে সাততলার ছাদ থেকে ফেলে হত্যা করা হতে পারে। অথবা এমন কোনো পরিস্থিতি ছাদে হয়েছিল, যেখান থেকে সে লাফিয়ে পড়তে বাধ্য হয়েছে। বাড়ি মালিকের ছেলে ফাইজার বিভিন্ন সময়ে তাকে উত্ত্যক্ত করতো। এ নিয়ে অভিযোগও দেওয়া হয়েছিল। ঘটনার সময়ে ফাইজার ও তার বন্ধুরা ছাদে ছিল।

এদিকে পুলিশ ঘটনার পর আদনান নামে এক তরুণকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। ওই তরুণ বাড়ি মালিকের ছেলে ফাইজারের বন্ধু। অবশ্য তদন্ত শেষ না করার দাবি তুলে পুরো ঘটনা নিয়েই পুলিশ মুখ খুলতে চাচ্ছেন না।

স্বজনরা বলছেন, তিন বোনের মধ্যে মেঝো ছিলেন মৌমিতা। তিনি অনেকটা চাপা স্বভাবের হলেও সব সময়ে হাসিখুশি থাকতেন। ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এইচএসসি পাস করে শিক্ষাবৃত্তি পেয়ে মালয়েশিয়ায় পড়ালেখা করছিলেন। মেয়ের জন্য বাবা-মাও সেখানে বসবাস করতেন। গত বছরের ১৮ জুলাই ঢাকায় এসে আটকা পড়লেও বাসা থেকে অনলাইনে ক্লাস করতেন।

মৌমিতার বাবা অভিযোগ করেছেন, বাড়ির মালিকের একমাত্র ছেলে ফাইজার তার মেয়েকে বিভিন্ন সময়ে উত্ত্যক্ত করতো। বাইরে থেকে নিজের বন্ধুদের নিয়ে ছাদে ও সিড়িতে মৌমিতাকে পেলেই উল্টাপাল্টা বলতো। এ নিয়ে গত সপ্তাহে মৌমিতার মা ফাইজারের মায়ের কাছে অভিযোগও দিয়েছিলেন। এতে তিনি উল্টো প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন।

তিনি বলেন, তার মেয়ে শুক্রবার বিকেল চারটার দিকে ছাদে ওঠে। তিনি জানতে পেরেছেন, ওই সময়ে বাড়ি মালিকের ছেলে ফাইজার, তার বন্ধু আদদানসহ আরও কয়েকজন ছিল। তারা এক পর্যায়ে ছাদের দরজা আটকে দেয়। সন্ধ্যা ৬টার দিকে জানতে পারেন, মেয়ের নিথর দেহ নিচে পড়ে আছে। এটি পরিকল্পিত হত্যা বলে তিনি অভিযোগ করেন।

মৌমিতার একজন স্বজন হুমায়ুক কবির বলেন, আশপাশের বাড়ির লোকজন দেখেছে শুক্রবার বিকেলে বাড়ি মালিকের ছেলেসহ অনেকেই ছাদে ছিল। সেখানে তারা মৌমিতার সঙ্গে উল্টাপাল্টা আচরণও করেছে। হয়তো তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে অথবা নিজেকে রক্ষা করতেই মৌমিত ছাদ থেকে পালাতে চেয়েছিল। তারা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চান।

অপর একজন স্বজন বলেন, পুলিশ বাড়িওয়ালার ছেলের বন্ধুকে আটক করেছে। কিন্তু তারা পুলিশের কাছে বাড়ি মালিকের ছেলেকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই সবকিছু পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন। এখন পর্যন্ত থানার পুলিশ সেদিকে যাচ্ছে না।

শনিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে মৌমিতার মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষে স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ ফরেনসিক বিভাগের সূত্র জানিয়েছে, উপর থেকে পড়ার কারণে ওই তরুণীর মৃত্যু হয়েছে বলে মনে হয়েছে। তার শরীরে ধস্তাধস্তির আলামত পাওয়া যায়নি। তবে মেয়েটি মৃত্যুর আগে ধর্ষণের শিকার হয়েছিল কি না বা বিষাক্ত কিছু খাওয়ানো হয়েছিল কি-না, তা জানতে রক্ত, ভিসেরা ও হাইভেজনাল সোয়াবের নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবে পাঠানো হয়েছে।

কলাবাগান থানার ওসি পরিতোষ চন্দ বলেন, মৌমিতার পরিবার শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তবে পুলিশ ঘটনাটি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছে। এরই মধ্যে এক তরুণকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তার মৃত্যুর প্রকৃত কারণ তদন্ত শেষ হলে এবং ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পরই জানা যাবে।