- রাজধানী
- টিসিবির রমজানের পণ্য বিক্রি শুরু, প্রথম দিনেই লম্বা লাইন ক্রেতাদের
টিসিবির রমজানের পণ্য বিক্রি শুরু, প্রথম দিনেই লম্বা লাইন ক্রেতাদের

এই সময়ে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম হাতের নাগালের বাইরে যাওয়ায় এ পরিস্থিতিতে টিসিবি বৃহস্পতিবার থেকেই রমজান উপলক্ষে বাজারদরের চেয়ে কিছুটা কম দামে পণ্য বিক্রি শুরু করেছে। এসব পণ্য কিনতে দীর্ঘ লাইনে ভিড় করছেন সাধারণ মানুষ- সমকাল
দুই সপ্তাহ পরে শুরু হচ্ছে রমজান। এই সময়ে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামে উত্তাপ বইছে। এ পরিস্থিতিতে টিসিবি বৃহস্পতিবার থেকেই রমজান উপলক্ষে বাজারদরের চেয়ে কিছুটা কম দামে পণ্য বিক্রি শুরু করেছে। এসব পণ্য কিনতে দীর্ঘ লাইনে ভিড় করছেন সাধারণ মানুষ।
অন্যান্য বছর দেখা গেছে, রমজানের জন্য আগেভাগেই ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) পণ্য বিক্রি শুরু করলেও ক্রেতার তেমন দেখা মেলে না। কিন্তু এবার প্রথম দিনেই চৈত্রের খরতাপ সহ্য করে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য কিনেছেন অনেকে। স্বল্প মূল্যে পণ্য কিনতে এসে মানছেন না সামাজিক দূরত্বও। পণ্য কেনার প্রতিযোগিতায় করোনা ঝুঁকির তোয়াক্কাও করছেন না ক্রেতারা।
বৃহস্পতিবার টিসিবির গুদাম থেকে পণ্য ছাড় করে অনেক দেরিতে এসেছিল মিরপুর-১ নম্বরে টিসিবির পণ্যের ট্রাক। ভরদুপুরে ঠায় অপেক্ষায় বসে ছিলেন ক্রেতারা। বিকেল পৌনে ৪টায় সিটি করপোরেশন মার্কেটের সামনে আসে ট্রাক। ট্রাক আসার সঙ্গে সঙ্গে লাইনে দাঁড়ান ক্রেতারা। ট্রাক আসার পরে সময় যত বাড়তে থাকে, লাইনও তত দীর্ঘ হয়েছে। শুধু মিরপুর নয়, রাজধানীর অন্যান্য স্থানেও টিসিবির ট্রাকে লাইন অনেক বড় ছিল।
টিসিবির ডিলার আব্দুল কুদ্দুস সমকালকে বলেন, গুদাম থেকে বিকেল ৩টার পরে পণ্য দেওয়া হয়েছে। এ কারণে বাজারেও বিকেলে আনা হয়েছে। তিনি দাবি করেন, পণ্য পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা নিয়ে এসে ক্রেতাদের কাছে ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করছেন।
আগারগাঁও ৬০ ফিট রোডে ভরদুপুরে রোদে পুড়ে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে টিসিবির ট্রাক থেকে পণ্য কিনছেন সাধারণ ভোক্তারা। তবে এই ট্রাকে শুধু পেঁয়াজ ও ভোজ্যতেল ছিল। তাও পরিমাণে সামান্য। নিয়মানুযায়ী থাকার কথা পাঁচটি পণ্য। জানতে চাইলে বিক্রেতা বলেন, অন্য পণ্য আগেভাগেই বিক্রি শেষ হয়েছে। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিনি আগের দিন টিসিবির গুদাম থেকে পণ্য তুলেছেন। তখন ভোজ্যতেলের বিক্রির মূল্য ছিল ৯০ টাকা। তাই তিনি তেল বিক্রি করেননি। তবে অন্যগুলো বিক্রি করেছেন। ওই তেল বৃহস্পতিবার ১০০ টাকায় বিক্রি করেছেন তিনি।
টিসিবির মুখপাত্র হুমায়ুন কবির বলেন, কোনো ডিলার আগের দিনের কম দামে নেওয়া পণ্য বেশি দামে বিক্রি করতে পারেন না। এমনটা কোনো ডিলার করে থাকলে তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, এবার রমজানে অন্য সব বছরের চেয়ে অনেক বেশি পণ্য ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করবে টিসিবি। ইতোমধ্যে খেজুর ছাড়া সব পণ্য বাজারে বিক্রি হচ্ছে। আগামী সপ্তাহ থেকে খেজুর বিক্রি শুরু হবে।
বৃহস্পতিবার সারাদেশে ৫০০ ট্রাকে টিসিবির পণ্য বিক্রি হয়। রাজধানীতে ১০০টি ট্রাকসহ ঢাকা জেলায় ১৩৫ ট্রাকে পণ্য বিক্রি হয়েছে। চট্টগ্রাম শহরে ২০টি এবং অন্যান্য বিভাগ ও জেলায় বাকি ট্রাকে পণ্য বিক্রি শুরু করেছে। প্রত্যেক ডিলারকে ট্রাকে এক হাজার থেকে ১২০০ লিটার ভোজ্যতেল, প্রায় সমপরিমাণ পেঁয়াজ, ৮০০ কেজি চিনি, ৬০০ কেজি মসুর ডাল ও ৪০০ কেজি ছোলা দেওয়া হয়।
পুরো রমজান ও ঈদ পর্যন্ত ডিলারদের মাধ্যমে খোলা ট্রাকে এ পণ্য বিক্রির বিশেষ কার্যক্রম চালু রাখবে টিসিবি। গতকাল থেকে রমজানের এই পণ্য আগের চেয়ে সামান্য দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে টিসিবি। এখন প্রতি কেজি চিনি, মসুর ডাল ও ছোলা ৫৫ টাকা ধরে, সয়াবিন তেল ১০০ টাকা ও পেঁয়াজ ২০ টাকা। গত বুধবার তেল ৯০ টাকা লিটার ছিল। তবে অন্যান্য পণ্যের দাম একই ছিল। এর আগে এক দফায় কেজিতে চিনি, মসুর ডাল ও পেঁয়াজের দাম ৫ টাকা এবং তেল ১০ টাকা বাড়ানো হয়।
টিসিবির নিয়ম অনুযায়ী একজন ভোক্তা ২ থেকে ৪ কেজি চিনি, ২ কেজি ডাল, ২ থেকে ৫ লিটার সয়াবিন তেল, ছোলা ২ থেকে ৩ কেজি ও খেজুর ১ কেজি কিনতে পারবেন।
এদিকে রাজধানীর খুচরা বাজারে সপ্তাহের ব্যবধানে মোটা চালের দাম কেজিতে এক টাকা বেড়েছে। আগের চেয়েও বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে সয়াবিন তেল। এই দুই পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে চাপে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। বৃহস্পতিবার প্রতি কেজি মোটা চাল ৪৮ থেকে ৫১ টাকায় বিক্রি হয়।
এ ছাড়া ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল ৬৩০ থেকে ৬৫০ টাকায় বিক্রি হয়। যা আগে ৬২০ থেকে ৬৪০ টাকা ছিল। এ ছাড়া রমজানে বেশি চাহিদার পণ্য অ্যাঙ্কর ডাল কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা হয়েছে।
চালের দাম নিয়ন্ত্রণে খোলাবাজারে বিক্রি শুরু করেছে খাদ্য অধিদপ্তর। সংস্থাটির ট্রাকে জনপ্রতি ৫ কেজি করে ৩০ টাকা কেজি দরে এ চাল বিক্রি হয়। বাজারে চড়া দাম থাকায় চালের ট্রাকেও দীর্ঘ লাইন ধরেছেন ক্রেতারা।
মন্তব্য করুন