রাজধানীর শনির আখড়া এলাকায় ইয়াছিন আরাফাত (১৮) নামে এক তরুণকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। বৃহস্পতিবার রাতে আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার সকালে মৃত্যু হয় তার। স্বজনরা বলছেন, ধূমপান করায় কিশোর গ্যাংয়ের এক সদস্যকে চড় মেরেছিলেন আরাফাত। এর জের ধরেই খুনের ঘটনা ঘটে। এদিকে পল্লবীতে সোহানা আক্তার (৯) নামে এক শিশুকে হত্যার অভিযোগে তার সৎ মাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। একইদিনে অপর ঘটনায় গুলিস্তানে ফুটপাতে বসা নিয়ে বিরোধে তরমুজ বিক্রেতা মো. সেলিমকে (৫০) পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

কদমতলী থানার ওসি জামাল উদ্দিন মীর বলেন, কিশোর গ্যাংয়ের বিরোধের জের ধরে আরাফাতকে হত্যা করা হয় বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। এতে জড়িত ছয়জনকে আটক করেছে পুলিশ। নিহত তরুণ একটি কাপড়ের দোকানের কর্মচারী ছিলেন।

পুলিশ, স্বজন ও হাসপাতাল সূত্র জানায়, পরিবারের সঙ্গে কদমতলীর পাটেরবাগ আল-আকসা মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় থাকতেন আরাফাত। তার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার ১২ নম্বর কুতুবপুর এলাকায়। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে কর্মস্থল আয়েশা মোশারফ মার্কেট থেকে বাসায় ফিরছিলেন তিনি। এ সময় শনির আখড়ার আরএস সুপার টাওয়ারের সামনে ১৫-২০ জনের একটি দল তাকে আটকে মারধর ও ছুরিকাঘাত করে। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় রাত ১২টার দিকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসা দেওয়ার পর তাকে শেরেবাংলা নগর এলাকার আরেকটি হাসপাতালে নিয়ে যান স্বজনরা। অবস্থার অবনতি হলে আবারও তাকে ঢামেক হাসপাতালে আনা হয়। সেখানে গতকাল সকাল ৬টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

নিহতের ভাই আব্দুল হাই সোহেল জানান, রমজান মাসে স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের দলনেতা প্রিন্সের সঙ্গে থাকা এক কিশোর ধূমপান করছিল। তা দেখে ওই ছেলেকে চড় মারেন আরাফাত। ধারণা করা হচ্ছে, সেই বিরোধের জের ধরেই বৃহস্পতিবার প্রিন্স ও শুভসহ অন্যরা তাকে হত্যা করে। চার বোন ও তিন ভাইয়ের মধ্যে ছোট ছিলেন আরাফাত।

ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া জানান, আরাফাতকে তার বাবা মোহাম্মদ আব্দুল আলীম হাসপাতালে নিয়ে আসেন। তার বুকে ও পিঠে গুরুতর জখম ছিল।

পুলিশ জানায়, ঘটনাস্থলের একটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, আরাফাতকে ঘিরে ধরেছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। তাকে মারধর ও ছুরিকাঘাতের দৃশ্য ধরা পড়েছে ক্যামেরায়। সিনিয়র-জুনিয়র নিয়ে দ্বন্দে এ হত্যাকাণ্ড বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। এতে জড়িতদের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে। এরইমধ্যে আটক ছয়জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রকৃত ঘটনা জানার চেষ্টা চলছে।

পল্লবীতে শিশু হত্যা, সৎমা গ্রেপ্তার:পল্লবীর ১১ নম্বর সেকশনের আদর্শনগর এলাকায় সোহানা নামে এক শিশুকে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুক্রবার সকালে এ ঘটনা ঘটে। সৎ মা শাহিনুরের দাবি, খাট থেকে পরে মাথায় আঘাত পায় শিশুটি। স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়ার পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। তবে শিশুটির মামা বলছেন, তাকে হত্যা করা হয়েছে।

পল্লবী থানার ওসি পারভেজ ইসলাম বলেন, আঘাতের ধরন ও ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকের প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ ধারণা করছে, এটি হত্যাকাণ্ড। তবে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাবে। এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। শিশুটির সৎমাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

পুলিশ জানায়, শিশুটির বাবা মো. সোহেল পিকআপ ভ্যান চালান। তার প্রথম স্ত্রীর কুলসুমের সন্তান সোহানা। কুলসুমের সঙ্গে চার বছর আগে বিচ্ছেদের পর তিনি শাহিনুরকে বিয়ে করেন। সৎ মায়ের সঙ্গেই থাকত শিশুটি। সে স্থানীয় একটি স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ত। সোহেল আম পরিবহনের কাজে ঢাকার বাইরে ছিলেন। শাহিনুরের দাবি, তিনি ছিলেন তার বোনের বাসায়। সকাল ৬টার দিকে তিনি বাসায় ফেরেন। তখন সোহানা খাট থেকে পরে যায়। একটি মাটির পাত্রে আঘাত লেগে তার মাথায় জখম হয়। এর আগেও সে একবার গাছ থেকে পরে আঘাত পেয়েছিল। তবে বক্তব্য অসংলগ্ন মনে হওয়ায় তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

নিহতের মামা নূর হোসেন বলছেন, শিশু সোহানাকে দিয়ে গৃহস্থালীর নানারকম কাজ করিয়ে নিতেন শাহিনুর। কাজে সামান্য ভুল হলেই তাকে মারধর করা হত। সকালে তিনি জানতে পারেন, হাসপাতালে নেওয়ার পর তার ভাগ্নির মৃত্যু হয়েছে। তার ধারণা, সৎমায়ের নির্যাতনের ফলেই শিশুটির মৃত্যু হয়।

তুচ্ছ ঘটনায় ফল বিক্রেতা খুন: গুলিস্তানের বঙ্গবাজারের কাছে তুচ্ছ ঘটনায় বাকবিতণ্ডার জেরে মো. সেলিম নামে এক তরমুজ বিক্রেতাকে হত্যা করা হয়েছে। শুক্রবার সকালে এ ঘটনা ঘটে। হত্যায় অভিযুক্ত আখের রস বিক্রেতা মো. সুলতানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্র জানায়, সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ফুটপাতে দোকান বসানো নিয়ে দু'জনের বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। একপর্যায়ে সুলতান ক্ষিপ্ত হয়ে তার আখ মাড়াই মেশিনের লোহার হাতল দিয়ে সেলিমের মাথায় আঘাত করেন। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে নেওয়া হলে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। ঘটনাস্থলের খুব কাছেই পুলিশ উপস্থিত থাকলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে ঘটনার পরপরই সুলতানকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।

সেলিমের গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর সুধারাম উপজেলার খুবলী গ্রামে। তিনি বঙ্গবাজারের পাশে পুরনো রেলওয়ে কলোনি বস্তিতে পরিবার নিয়ে থাকতেন।