- রাজধানী
- লকডাউনের ভয় শহর ছাড়া করছে
লকডাউনের ভয় শহর ছাড়া করছে

গাদাগাদি করে বাড়ি যাচ্ছে মানুষ। কাওরান বাজার থেকে মঙ্গলবার রাতে তোলা ছবি- সমকাল
খুলনার ব্রহ্মঘাতীর গ্রামের কিশোর আব্দুর রহিম ঢাকার মিরপুরে ফার্নিচারের দোকানে রঙ পালিশের কাজ করে। লকডাউনে দোকানে কাজ কমে গেছে। কিন্তু মেসে থাকা বাবদ মাসে চার হাজার ৩০০ টাকা তাকে দিতেই হবে। বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হতে যাওয়া কঠোর লকডাউনে দোকান বন্ধ হলে কাজ ও রোজগার দুই-ই হারাতে হবে রহিমকে। মেসের খরচ কোথা থেকে আসবে? তাই মেস ছেড়ে গ্রামের বাড়ি চলে যাচ্ছেন তিনি। কিন্তু যাবেন কিভাবে? বাস তো বন্ধ। মিরপুরে সহকর্মীদের কাছ থেকে জেনেছেন, কাওরানবাজারে সবজি নিয়ে আসা ট্রাকের ফিরতি যাত্রায় কম ভাড়ায় যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। এ আশায় মিরপুর থেকে তল্পিতল্পা নিয়ে কাওরান বাজারের সার্ক ফোয়ারা মোড়ে চলে এসেছেন।
মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে রহিমের সঙ্গে কথা হয়। জানালেন, সঙ্গে শ পাঁচেক টাকা রয়েছে। যশোর, খুলনার ট্রাক পেলে যেভাবেই বাড়ি চলে যাবেন। ঢাকায় কর্মহীন বসে থেকে মেসের ভাড়া গোনার চেয়ে বাড়ি চলে গেলে রক্ষা। বাড়িতে অন্তত দু মুঠো খাবারের জোগাড় আছে। ঢাকায় থাকলে মেস ভাড়া দেওয়ার পর খাবার জুটবে না। দোকান বন্ধ থাকলে মালিক বেতন দেবে না। আর দেবেই বা কী করে? আয় থাকলে মালিক বেতন দেওয়ার টাকা কই পাবে? লকডাউন উঠলে ঈদের পর চলে আসবেন।
রহিমের মতো অন্তত হাজার খানেক মানুষকে সার্ক ফোয়ারা মোড়ের ইউটিসি ভবনের সামনে জমায়েত হয়েছেন। সবারই উদ্দেশ্য সবজির ট্রাকে গ্রামে ফেরা। তাদের একজন মো. সুমন। তার বাড়ি পাবনার সুজানগরে। ঢাকায় রিকশা চালান। বৃহস্পতিবার থেকে কঠোর লকডাউনে রিকশাও চলবে না। ঢাকায় কর্মহীন বসে থেকে পেট চালানোর সামর্থ্য তেইশ চব্বিশ বছর বয়সী সুমনের নাই। তাই তিনিও গ্রামে ফেরার উপায় খুঁজতে এসেছেন। কথা বলতে বলতে একটি পিকআপ এসে থামে। যাবে টাঙাইল। জনপ্রতি ১০০ টাকা ভাড়ায় তাতে হুড়োহুড়ি করে আট দশজন উঠলেন। তাদের মধ্যে একজন নারীও ছিলেন। পিকআপে চড়ে বসাদের একজন জানালেন, টাঙাইল গেলে একটা না একটা কিছু পাওয়া যাবেই, তাতে বগুড়া যাবেন।
আষাঢ় চলছে। মঙ্গলবার দিনভর ভারী বৃষ্টি হয়েছে। রাতেও বৃষ্টির শঙ্কা রয়েছে। খোলা ট্রাক পিকআপে গেলে ভেজার আশঙ্কা রয়েছে। ভিজে জ্বর সর্দি হতে পারে। তা নিয়ে ভয় নেই লকডাউনের ভয়ে ঢাকা ছাড়তে মরিয়া নিম্নবিত্তের শ্রমজীবী মানুষের। তারা বলছেন, ঢাকায় বেকার বসে না খেয়ে থাকার চেয়ে বাড়ি চলে যাওয়াই ভাল। অন্তত ঘর ভাড়া, মেস ভাড়া দেওয়ার চাপ থেকে রক্ষা হবে।
গ্রামে ফিরতে মরিয়া শ্রমজীবীর ট্রাক পিকআপ আসতে দেখলেই হাত উচু করে ইশারায় থামার অনুনয় করেছিলেন। যাত্রী পরিবহন করলে পুলিশ ধরবে, এ ভয়ে অধিকাংশ খালি ট্রাক অনুনয়ে সাড়া না দিয়ে চলে যায়। দুই একটি থামছিল। কিন্তু জনপ্রতি তিনশ চারশ টাকা ভাড়া দাবি করছিল। একটি ট্রাক বগুড়া যেতে এসে জনপ্রতি দুইশ টাকা চাইলেন চালকের সহকারী। জনা পঞ্চাশেক মানুষ তাতে লাফিয়ে উঠলেন। খোলা ট্রাকে গাদাগাদি করে বসলেন। করোনা সংক্রমণের ভয় তাদের নেই। তারা বলছেন, লকডাউনে না খেয়ে মরার চেয়ে করোনা হলে হবে। করোনার চেয়ে ক্ষুধা ভয়ঙ্কর।
মন্তব্য করুন