করোনা নিয়ন্ত্রণে দেশজুড়ে কঠোর লকডাউন চলছে। এর মধ্যেই রোববার থেকে দেশের রপ্তানিমুখী শিল্প কারখানা খুলে দেওয়া হয়েছে। যার ফলে লকডাউন ও কোরবানির ঈদের আগে বাড়ি ফেরা শ্রমজীবী মানুষরা ঢাকায় ফিরতে হুমড়ি খেয়ে পড়েন শনিবার রাত থেকে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমবঙ্গ থেকে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া দিয়ে ফেরিতে গাদাগাদি করে ঢাকায় ফিরছিলেন সবাই। এ ছাড়া উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকেও ট্রাকে, ভ্যানে, হেঁটে যে যেভাবে পারেন ঢাকায় ফেরার চেষ্টা করেন। এমন পরিস্থিতিতে লকডাউনের মধ্যেই শ্রমজীবী মানুষদের ফেরাতে ১৬ ঘণ্টার জন্য গণপরিবহন চালু করে সরকার। তাতে ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকায় নিজ নিজ কর্মস্থলে ফিরতে হুমড়ি খেয়ে পড়েন শ্রমজীবীসহ অন্যান্যরা।

এমন পরিস্থিতিতে রোববার দুপুর পর্যন্ত গণপরিবহন চালু রাখার কথা থাকলেও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায় রাতেও গণপরিবহন চলছে। এসব পরিস্থিতি সামাল দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়। সবকিছুর মধ্যেও চাপ বাড়তে থাকে ঢাকার পথে। সোমবার সকালে রাজধানীতে যানযট ও যানবাহনের চাপ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। ধানমন্ডি ২৭, শাহবাগ, বিজয় স্মরণী, তেজগাঁও, মোহাম্মদপুর, মিরপুর ১০ সহ বিভিন্ন এলাকায় যানজট স্বাভাবিক সময়ের মতো মনে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন লকডাউনে অফিসগামীরা।

আইরিন সুলতানা নামের এক সেবিকা বলেন, ‘আমার বাসা মোহাম্মদপুর। আর কাজ করি মিরপুরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে। লকডাউনে প্রতিদিনকার মতো আজও অফিসের গাড়িতে করে অফিসে এসেছি। তবে সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে এত যানজট দেখে মনে হয়েছে ঢাকায় কোনো লকডাউনই নেই।’

অন্যান্য দিনের লকডাউনের চেয়ে সোমবার লকডাউন ঢিলেঢালাভাবে পালন হচ্ছে, রাস্তায় মানুষ ও গাড়ির চাপ বেড়েছে: সমকাল

মেহেদী হাসান নামে অফিসগামী একজন সাংবাদিক বলেন, ‘অন্যান্য দিনের লকডাউনের তুলনায় বেশ ঢিলেঢালাভাবে পালিত হচ্ছে আজকের লকডাউন। সড়কের যেসব পয়েন্টে পুলিশ চেকপোস্ট ছিল তা তুলে নেওয়া হয়েছে। অনেক মানুষ অকারণে ঘরের বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। সড়কের বিভিন্ন জায়গায় ট্রাফিক পুলিশ থাকলেও তারা পরিস্থিতি পুরোপুরি সামাল দিতে পারছেন না বলে মনে হলো।’

তেজগাঁওতে দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট মো. মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, ‘অন্যান্য দিনের তুলনায় সড়কে সোমবার সকাল থেকেই গাড়ির চাপ রয়েছে। অনেকেই বাড়ি থেকে ফিরছেন। আবার গার্মেন্টসসহ অন্যান্য রপ্তানিমুখী শিল্প-কারখানায় কর্মরতরা আজও রাজধানীর বিভিন্ন স্থান দিয়ে তাদের বাসায় এবং কর্মস্থলে ফিরছেন।’

রাস্তায় মানুষ ও গাড়ির চাপ বেড়েছে: সমকাল

শহরে যানবাহনের চাপে এবং অনেকের অকারণে ঘোরাফেরার কারণে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত হচ্ছে জানিয়ে পুলিশের পদক্ষেপের কথা জানতে চাইলে পুলিশ কর্মকর্তা মঞ্জুরুল বলেন, ‘সরকারের নির্দেশে এবং উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় আমরা কঠোরভাবে দায়িত্ব পালন করছি। শুধুমাত্র যেসব মানুষ জরুরি প্রয়োজনে বের হচ্ছেন তাদেরকে ছাড়া অন্যান্যদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। তারপরও অনেক মানুষ বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে বাইরে বের হচ্ছেন।’

এদিকে কঠোর লকডাউন চললেও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থেকে ট্রাকসহ অন্যান্য যানবাহনে মানুষ ঢাকায় ফিরছেন বলে জানা গেছে। যার বড় প্রভাব পড়ছে ঢাকাসহ এর আশপাশের এলাকায়। যানজট বাড়ছে। সেই সঙ্গে উপেক্ষিত হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি। এর ফলে করোনা সংক্রমণ আরও বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের চিকিৎসক আশরাফুজ্জামান বলেন, করোনা নিয়ন্ত্রণে সরকার যে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে তা সঠিকভাবে মানা হচ্ছে না। টেলিভিশন ও পত্র-পত্রিকা খুললেই চোখে পড়ছে- স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষো করে গাদাগাদি করে ঢাকায় ফিরছেন মানুষ। এর ফলে তারা নিজেরা যেমন সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ছেন, তেমনি দেশের একটা বিরাট কমিউনিটি এর মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।’