খুলনার রূপসা উপজেলার শিয়ালী গ্রামে সংখ্যালঘু পরিবারের বাড়ি-ঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ওপর হামলা এবং মন্দিরের বিগ্রহ ভাংচুরের ঘটনায় দোষী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানানো হয়েছে।

মঙ্গলবার দেশের ২০ বিশিষ্ট নাগরিক এক বিবৃতিতে এ দাবি জানান।

বিবৃতিতে বলা হয়, ১০টি সংখ্যালঘুদের দোকান ভাঙচুর করে এবং বেশ কয়েকটি বাড়িতে হামলা চালিয়ে লুটপাট করা হয়। এছাড়াও গোবিন্দ মন্দির, শিয়ালী পূর্বপাড়া হরি মন্দির, শিয়ালী পূর্বপাড়া দুর্গা মন্দির, শিয়ালী মহাশ্মশান মন্দিরের বেশিরভাগ প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়। এ সময় কয়েকজন বাধা দিতে গেলে তাদের পিটিয়ে আহত করা হয় বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এটা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, করোনাকালীন সময়ে সংখ্যালঘুদের ওপর যে অত্যাচার হয়েছে এটা তারই আর একটি লজ্জাজনক উদাহরণ।

এই বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীরা হলেন- অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, বিচারপতি মো. নিজামুল হক, খুশী কবির, ড. ইফতেখারুজ্জামান, অ্যাডভোকেট রাণা দাশগুপ্ত, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না, অ্যাডভোকেট তবারক হোসেন, ড. আবুল বারকাত, রোবায়েত ফেরদৌস, ড. জোবাইদা নাসরীন, ফারহা তানজীম তিতিল, ড. মেঘনা গুহঠাকুরতা, কাজল দেবনাথ, সঞ্জীব দ্রং, দীপায়ন খীসা, এড. সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, ব্যারিস্টার সারা হোসেন এবং শামসুল হুদা।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ২০০১ সালের নির্বাচনের পর সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিভিন্ন কৌশল আমরা দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এর মাত্রা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা পাবনার সাঁথিয়া (২০১৩ সাল), কক্সবাজারের রামু (২০১২ সাল), ব্রাহ্মনবাড়ীয়ার নাসিরনগর (২০১৬ সাল), ভোলার মনপুরা (২০২০), সুনামগঞ্জের শাল্লা (২০২১) ঘটনাগুলো জানি এবং বারংবার এ ধরণের ঘটনা বন্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনের কথা বলছি। সেইসঙ্গে দায়ী ব্যক্তিদের যথাযথ বিচারের দাবি করে আসছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত বেশিরভাগ ঘটনার তদন্ত শেষ হয়নি এবং প্রকৃত অপরাধীরা কখনোই আইনের আওতায় আসেনি।

অপরদিকে, খুলনার রূপসায় দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনার কথাটি প্রশাসন জানা সত্ত্বেও অপ্রীতিকর ঘটনা বন্ধে বা সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে কেন কোন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করলনা? স্থানীয় সরকার দলীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ অন্যান্য সামাজিক সংগঠনের সদস্যগণও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তাদের পাশে দাঁড়ায়নি। এ উত্তেজনার কথা সকল পক্ষই জানত।

বিবৃতিদাতারা বলেন, সংখ্যালঘুদের ওপর এ ধরনের আক্রমণের ঘটনা এবারই প্রথম নয়। আমাদের কাছে প্রতীয়মান হয় যে, সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণের ক্ষেত্রেই পুলিশ ঘটনা ঘটার আগে বিষয়টি জানলেও তাদের নিস্কৃয়তা বা সময়ক্ষেপন এসকল ঘটনা ঘটার সুযোগ করে দিচ্ছে। দুঃখজনক ও দুর্ভাগ্যের বিষয়টি হলো, বিগত দিনের প্রায় প্রতিটি ঘটনার মত এবারও তাৎক্ষণিক নয়, প্রশাসনের পক্ষ হতে সময় নিয়ে বৈঠকের প্রস্তাব ও প্রস্তাবিত বৈঠকের এক বা দুদিন আগে পরিকল্পিত হামলা এবং হামলার পর প্রশাসনের তথাকথিত তৎপরতার একই চিত্র পরিলক্ষিত হলো।

বিবৃতিদাতারা আরও বলেন, প্রশাসন, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারার দায়ও এড়াবেন কিভাবে। এটাও লক্ষনীয় যে সব ধরণের সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনার ব্যাপারে সরকারি ও বিরোধী দলের মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলির নীরবতা ও নিস্ট্ক্রিয় ভূমিকা দুর্বৃত্ত ও সাম্প্রদায়িক শক্তির ঔদ্ধত্য ক্রমাগত বাড়িয়ে চলছে। খুলনার রূপসায় সংঘটিত সংখ্যালঘু নির্যাতন, তাদের হয়রানি এবং মানবাধিকার লংঘনের ঘটনাসহ পূর্বে সংখ্যালঘু নির্যাতনের যে সকল ঘটনা ঘটেছে তার তীব্র প্রতিবাদ জানাই এবং অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তারসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি জানাচ্ছি। এ ধরনের ঘটনা যাতে আর পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে জন্য রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি যে কোন ধরনের সাম্প্রদায়িক হামলা, নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে জনগণকে সম্পৃক্ত করা জন্য সরকারকে উদ্যোগী ভূমিকা নিয়ে আসার জন্য আমরা দাবি জানাচ্ছি।