- রাজধানী
- ফুটেজ দেখার পরও গাড়িচালকের বিরুদ্ধে মামলা পুলিশের
চকবাজারের পরিকল্পিত খুন
ফুটেজ দেখার পরও গাড়িচালকের বিরুদ্ধে মামলা পুলিশের

পুরান ঢাকার চকবাজারের কমলদহ রোডের পাশে একটি সিসিটিভি ফুটেজে স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে, এক ব্যক্তি অপর একজনকে ধাক্কা দিয়ে চলন্ত কাভার্ডভ্যানের সামনে ফেলে দিচ্ছেন। এরপর গাড়িটির পেছনের চাকায় সে পিষ্ট হয়। কিন্তু পুলিশ দোষ দিচ্ছে সেই গাড়িরই! ওই ঘটনায় গাড়ির অজ্ঞাতপরিচয় চালকের বিরুদ্ধে মামলাও করেছে পুলিশ। কিন্তু ধাক্কা দেওয়া সেই ব্যক্তি দৃশ্যমান থাকলেও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি।
গত ৭ আগস্ট রাতে ওই ঘটনার পর পুলিশ জানিয়েছিল, নিহত ব্যক্তি ছিনতাইকারী। ছিনতাই করে পালানোর সময়ে গাড়িচাপায় মারা যায়। ওই ঘটনায় 'ছিনতাইয়ের শিকার' রিয়াজ উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি মামলাও করেন। তবে সমকালের অনুসন্ধানে ধাক্কা দেওয়া সেই ব্যক্তির নাম-পরিচয়ও উঠে আসে। শুক্রবার 'ডাকাতি মামলা সাজানো, আড়ালে পরিকল্পিত খুন' শিরোনামে এ বিষয়ে বিস্তারিত ছাপাও হয়।
রিয়াজ উদ্দিন নামের ওই ব্যক্তি 'ছিনতাই করে পালানোর সময়ে' নিহত মো. জয় ছাড়াও হাসিব হোসেন ওরফে আকিব, আরাফাত হোসেন পিয়াস, তাসিন, রজ্জব ও জিহাদ নামে মোট ছয়জনের বিরুদ্ধে ডাকাতির মামলা করেন। তাদের সবার বয়স ১৮ থেকে ১৯ বছর উল্লেখ করা হলেও অনুসন্ধান করে দেখা যায়, নিহত জয়সহ তিনজনই শিশু। তাদের বয়স ১৪ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে।
গাড়িচালকের বিরুদ্ধে চকবাজার থানা পুলিশের মামলায় বলা হয়, ছিনতাই করে পালানোর সময়ে গাড়িচালক জয়কে চাপা দিয়ে পালিয়ে গেছে। পরে তাকে উদ্ধার করে মিটফোর্ড হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তবে সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যাচ্ছে ভিন্ন দৃশ্য। তাতে দেখা যায়, ডাকাতি মামলার বাদী রিয়াজ উদ্দিনই সেই জয়কে মারতে মারতে নিয়ে আসেন। এরপর কমলদহ রোড দিয়ে দ্রুতগতিতে আসা একটি কাভার্ডভ্যানের সামনে তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। এতে জয় গাড়িটির বাম পাশের বডিতে সজোরে ধাক্কা খেয়ে গাড়ির নিচে চলে যায়। গাড়িটির বাম পাশের চাকা তার ওপর দিয়ে উঠিয়ে চলে যায়।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, গাড়ি ওই সময়ে সড়কের ডানে বা বামে মোড় নেয়নি। সোজা লেন ধরেই সড়কে চলছিল। রিয়াজ উদ্দিন তাকে ধাক্কা না দিলে সে গাড়ির নিচে পড়ার কথাও নয়।
জানতে চাইলে চকবাজার থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কবির হোসেন সমকালকে বলেন, ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে টাকা কেড়ে নেওয়ায় রিয়াজ উদ্দিন মামলা করেছেন। বাদীসহ জনতা ওই ডাকাত দলের সদস্যদের ধাওয়া দিলে একজন গাড়িচাপায় মারা যান। গাড়ির নম্বর প্লেটও বোঝা যায়নি। তাই পুলিশ নিয়ম মেনেই গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা করেছে।
কিন্তু সিসিটিভি ফুটেজে এক ব্যক্তিকে তো ধাক্কা দিতে দেখা যাচ্ছে এবং গাড়ি লেন ধরেই চলছিল- এমন তথ্য জানালে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ঘটনার পর পরই ওই মামলাটি হয়েছিল। পুলিশ এখন সিসিটিভি ফুটেজ নিয়ে কাজ করছে। তদন্তে যা আসবে, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে ওই ঘটনায় শিশু-কিশোরদের বয়স লুকিয়ে ডাকাতি মামলার আসামি বানানোর বিষয়ে সমকালে প্রতিবেদন প্রকাশের পর তা নিয়ে তোলপাড় চলছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে অনেকেই এমন কার্যক্রম নিয়ে সমালোচনাও করছেন।
পুলিশের এমন কর্মকাণ্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার জসিম উদ্দিন মোল্লা এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বিষয়টি নিয়ে চকবাজার থানার ওসির সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দিয়ে বলেন, সিসিটিভি ফুটেজ আছে, সেটা ওসি দেখেছেন। কিছু থাকলে সহকারী কমিশনার, অতিরিক্ত উপকমিশনার রয়েছেন- তারা বিষয়টি দেখবেন।
এদিকে নিহত জয়ের স্বজনেরা বলছেন, জয়কে ধাক্কা দিয়ে গাড়ির নিচে ফেলা রিয়াজ উদ্দিন ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাকে কিছুই বলছে না। জয়কে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তারা আদালতে হত্যা মামলা করার প্রস্তুতিও নিচ্ছেন।
মন্তব্য করুন