বর্তমানে টিকা প্রদানের রোডম্যাপ অনুযায়ী যেভাবে সরকার অগ্রসর হচ্ছে তাতে ২০২২ সালের মার্চ মাসের মধ্যে ২৫ বছরের উপরের জনগোষ্ঠীকে টিকা দেয়া সম্ভব হবে। ইতিমধ্যে চীনের সিনোফার্মের সাথে ইনসেপ্টা ও সরকারের যে ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা চুক্তি হয়েছে তা বাস্তবায়িত হলে ৩ মাসের মধ্যে দেশেই টিকা উৎপাদন শুরু হবে। তবে এটি জিটুজি প্রক্রিয়ায় হওয়া উচিত। এছাড়া বঙ্গভ্যাক্সও বানরের ওপর ভ্যাকসিনের ট্রায়াল শুরু করেছে। অন্যদিকে সুইডেনের সঙ্গে বাংলাদেশের ন্যাজাল ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এগুলো সফল হলে টিকা উৎপাদনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আরো একধাপ এগিয়ে যাবে এবং টিকা নিয়ে আজকের যে সংশয় তা অচিরেই দূরীভুত হবে। 

বৃহস্পতিবার  রাজধানীর তেজগাঁওস্থ এফডিসিতে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে 'করোনার ভ্যাকসিন নিশ্চিতকরণ' নিয়ে ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ এসব কথা বলেন।

অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ আরো বলেন, করোনার বিভিন্ন কোম্পানির টিকার মান নিয়ে জনমনে যে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে তা যথার্থ নয়। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে সব টিকার মান প্রায় সমান। শুধু সংরক্ষণের তারতম্যের কারণেই গ্রামে ফাইজার বা মর্ডানা দেয়া হচ্ছে না। এতে বিভ্রান্তির কোনো সুযোগ নেই। কাজেই যেখানে যে টিকা নেয়ার সুযোগ পাওয়া যাবে সেটাই গ্রহণ করা উচিত।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, ভ্যাকসিন পেতে দেরি হলে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাই কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করে সঠিক সময়ে টিকা সংগ্রহের মাধ্যমে সকল রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন, জনপ্রতিনিধি, এনজিও, শিক্ষক, চিকিৎসকসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করে অতিদ্রুত টিকা প্রদান করা জরুরি। এজন্য সরকারের উচ্চ পর্যায়ে সমন্বয় জরুরি। একেক জন একেক কথা বলার কারণে যাতে টিকা নিয়ে জনগণের আস্থা নষ্ট না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

পরে ছায়া সংসদ অনুষ্ঠানে করোনা ভ্যাকসিন নিশ্চিতকরণে তিনি ১০ দফা সুপারিশ প্রদান করেন। সুপারিশগুলো হচ্ছে- ১. করোনার ভ্যাকসিন প্রদানে একেক সময়ে একেক কথা না বলে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করা; ২. দেশের ভাসমান মানুষসহ নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র নাই তাদের টিকা প্রদানের ব্যবস্থা করা; ৩. মানসম্পন্ন টিকা দ্রুত প্রাপ্তির জন্য ভূ-রাজনীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে টিকা উৎপাদনকারী দেশ ও প্রতিষ্ঠানের সাথে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করা; ৪. টিকা সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিতরণে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরি করা। একই সঙ্গে টিকাকেন্দ্র বৃদ্ধিসহ কেন্দ্রগুলোতে বুথের সংখ্যা ও সময় বাড়ানো। প্রয়োজনে টিকা প্রদানে এনজিওগুলোকে সম্পৃক্ত করে, ভ্রাম্যমাণ টিকাকেন্দ্র স্থাপন করে টিকা প্রদান করা; ৫. টিকাদান কর্মসূচি সফল করার জন্য জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব ও সুশীল সমাজকে সম্পৃক্ত করা; ৬. ভ্যাকসিন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুল-বিভ্রান্তিকর তথ্য, অপপ্রচারমূলক স্ট্যাটাস ও ভিডিও না দেওয়া; ৭. প্রবীণ, প্রতিবন্ধী ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীকে টিকা প্রদানের জন্য কেন্দ্রগুলোতে বিশেষ লাইনের ব্যবস্থা করা; ৮. ভ্যাকসিন রেজিস্ট্রেশনের পর ম্যাসেজ পেয়ে সঠিক সময়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে টিকা নেওয়ার জন্য টিকাকেন্দ্রে যাওয়া; ৯. টিকা উৎপাদনের জন্য সিনোফার্ম ও ইনসেপ্টার সঙ্গে সরকারের যে ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা চুক্তি হয়েছে তা স্পষ্ট করা; ১০. অভিবাসন খাতের আয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে বিদেশগামীদের টিকা প্রদানে অগ্রাধিকারের বিষয়টি নিশ্চিত করা।

প্রতিযোগিতায় প্রাইমএশিয়া ইউনিভার্সিটিকে পরাজিত করে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি চ্যাম্পিয়ান হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মোহাম্মদ রইস, সাংবাদিক জান্নাতুল বাকেয়া কেকা, সাংবাদিক রাসেল আহমেদ, সাংবাদিক ফালগুনী রশীদ এবং ডা. সামিউল আউয়াল স্বাক্ষর। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলের মাঝে ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি।