- রাজধানী
- বাঙালি সাংস্কৃতিক জাগরণে তালেবানি সংস্কৃতি প্রতিহত করতে হবে
নির্মূল কমিটির আন্তর্জাতিক ওয়েবিনার
বাঙালি সাংস্কৃতিক জাগরণে তালেবানি সংস্কৃতি প্রতিহত করতে হবে

বাঙালির নিজস্ব সংস্কৃতি রয়েছে। এরসঙ্গে অন্য কোন সংস্কৃতির বিরোধ থাকার কথা নয়। তবুও যদি তালেবানি সংস্কৃতি এ দেশে মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে চায়, তাহলে তা এ দেশীয় সাংস্কৃতিক জাগরণের মাধ্যমেই প্রতিহত করতে হবে।
বুধবার 'মৌলবাদের বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক আন্দোলন' শীর্ষক আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারে বিশিষ্টজনরা এসব কথা বলেন। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি'র সাংস্কৃতিক স্কোয়াড এই ওয়েবিনার আয়োজন করে।
সংগঠনের সাংস্কৃতিক স্কোয়াডের সভাপতি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সঙ্গীতশিল্পী মনোরঞ্জন ঘোষালের সভাপতিত্বে ওয়েবিনারে প্রধান বক্তা ছিলেন নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির। আরও বক্তব্য দেন- স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সঙ্গীতশিল্পী বুলবুল মহলানবীশ, লালন সঙ্গীত সম্রাজ্ঞী ফরিদা পারভীন, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সহসভাপতি সঙ্গীতশিল্পী মাহমুদ সেলিম, আবৃত্তিশিল্পী রাশেদ হাসান, আদিবাসী বিষয়ক জাতীয় কোয়ালিশনের সংগঠক সাংবাদিক আসাদুল্লাহ সরকার, জাগরণের গানের সংগঠক সঙ্গীতশিল্পী অরিত্র রতন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য সংস্কৃতিকর্মী রেমন্ড আরেং, গণসঙ্গীতশিল্পী আরিফ রহমান, টুয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি ফোরাম ফর হিউম্যানিজম, তুরস্কে সাধারণ সম্পাদক শাকিল রেজা ইফতি, সংস্কৃতিকর্মী পিন্টু সাহা ও ভারতের সঙ্গীতশিল্পী শিউলি ভট্টাচার্য।
অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, 'বঙ্গবন্ধুর ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশে তালেবানি সংস্কৃতির প্রভাব প্রতিহত না করলে আমাদের অবস্থাও একদিন আফগানিস্তানের মতো হতে পারে।'
সঙ্গীতশিল্পী মনোরঞ্জন ঘোষাল বলেন, 'জঙ্গীবাদ-মৌলবাদীদের অপচেষ্টা ব্যর্থ করতে সংস্কৃতি কর্মীদের নিরলস সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডই যথেষ্ট কার্যকর ভূমিকা পালনে সক্ষম। অবশ্যই এটা সারা দেশব্যাপী চলতে হবে। তাহলেই সাংস্কৃতিক বিপ্লব তার নিজস্ব গতিতে লক্ষ্যের দিকে ধাবিত হবে।'
লালন সঙ্গীত সম্রাজ্ঞী ফরিদা পারভীন বলেন, 'আমাদের বাঙালি সংস্কৃতি একটি মানবিক সংস্কৃতি। ফকির লালন শাহ মানবধর্মকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরেছেন। তার দর্শন জাত-পাতের উর্ধ্বে মানবতাকে প্রতিষ্ঠিত করে। বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে অন্য কোন সংস্কৃতির বিরোধ থাকার কথা না। তবুও যদি মৌলবাদ মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে চায়, তবে তা আমাদের প্রতিহত করতে হবে।'
সঙ্গীতশিল্পী বুলবুল মহলানবীশ বলেন, 'যে বাঙালি কখনোই সাম্প্রদায়িক ছিল না তারা কী করে সাম্প্রদায়িক হয়ে ওঠে? সংখ্যালঘু বলে যারা চিহ্নিত, তাদের ওপর হামলা, ঘরবাড়ি দখল, লুটতরাজ, জোর করে ধর্মান্তরিত করা সবই মুক্তিযুদ্ধের পরিপন্থী।'
মাহমুদ সেলিম বলেন, 'সাংস্কৃতিক কার্যক্রম মানুষকে শিক্ষিত করে, সচেতন করে, নতুন করে ভাবতে শেখায়, মৌলবাদী অন্ধত্বের বিনাশ ঘটায়। সেজন্যেই জঙ্গী মৌলবাদীদের প্রধান টার্গেট সংস্কৃতি ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম।'
আবৃত্তিশিল্পী রাশেদ হাসান বলেন, 'পুর্ববাংলার পলিবিধৌত সাধারণ মানুষের শেকড় নিঃসৃত যে সংস্কৃতি তাতে আমরা দেখেছি, গ্রামীণ যাত্রাপালা, পুতুল নাচ, কবির লড়াই, নানাবিধ উৎসব ও লোকগান-এসব কিছুই মানুষের মানস গঠন করেছে।'
সঙ্গীতশিল্পী জান্নাত-ই- ফেরদৌসী বলেন, 'রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে পারলে মানবতাবাদী সমাজ গঠন সম্ভব।'
সাংবাদিক আসাদুল্লাহ সরকার বলেন, 'জাতিকে তার সংস্কৃতি আলোর পথে পরিচালিত করে। একমাত্র সংস্কৃতিই পারে মৌলবাদকে প্রতিহত করতে।'
সঙ্গীতশিল্পী অরিত্র রতন বলেন, 'ফরমায়েশি সাংস্কৃতিক কার্যক্রম দিয়ে মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার মগজ পরিস্কার করা সম্ভব নয়। এ জন্য প্রয়োজন যাদের মগজে সাংস্কৃতিক সৃষ্টিশীলতা বিরাজমান, সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের প্রতি যাদের ভক্তি ও ভালোবাসা আছে, সেই সব জনসাধারণের অংশহ্রহণমুলক সাংস্কৃতিক আন্দোলন।'
সংস্কৃতিকর্মী রেমন্ড আরেং বলেন, 'মৌলবাদ পরিশীলিত, সৃষ্টিশীল ও মানবিক সমাজ গঠনে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এই অবস্থা থেকে আমাদের সমাজকে উত্তরণ ঘটাতেই হবে, নতুবা এই সমাজ কারো জন্য বাসযোগ্য থাকবে না।'
গণসঙ্গীতশিল্পী আরিফ রহমান বলেন, 'সাম্প্রদায়িক অন্ধকার চিরতরে বিতাড়িত করে একটি আলোকিত সমাজে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম বেড়ে উঠবে এটাই আমাদের স্বপ্ন।'
শাকিল রেজা ইফতি বলেন, সাইবার জগতেও জঙ্গিদের সচল তৎপরতা বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়। সরকারকে এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে।
সংস্কৃতিকর্মী পিন্টু সাহা বলেন, 'দেশে মৌলবাদ আর জঙ্গিবাদের চাষের ফলাফল কতটা ভয়াবহ তার প্রমাণ গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গিদের ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড।'
ভারতের সঙ্গীতশিল্পী শিউলি ভট্টাচার্য বলেন,'সাংস্কৃতিক আন্দোলনের কন্ঠরোধ করার জন্য উগ্র মৌলবাদীরা দেশে দেশে কবি, শিল্পী, সাহিত্যিকদের হত্যা করে মানুষের মনে ভীতির বাতাবরণ সৃষ্টি করে।'
মন্তব্য করুন