আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগ এবং ইউনিএফপিএ বাংলাদেশের আয়োজনে একটি ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।  সোমবার এই ওয়েবনিয়ার অনুষ্ঠিত হয়।

এ বছরের আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবসের বিষয়বস্তু ছিল ডিজিটাল সমতা সকল বয়সের প্রাপ্যতা'। বিশ্ব ও বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে প্রবীণ নাগরিকদের বর্তমান অবস্থা, তাদের যথাযথ অধিকার নিশ্চিতকরণ এবং সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে সকল বয়স-শ্রেণির জনগণের জন্য ডিজিটাল সমতা কিভাবে নিশ্চিত করা যায় তা এই ওয়েবিনারে গুরুত্ব পেয়েছে।    

ওয়েবিনারের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা  মো. আশরাফ আলী খান খসরু। বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। এছাড়া সিনিয়র পলিসি এক্সপার্ট, সরকারি কর্মকর্তা, সিভিল সোসাইটি, ডেভেলপমেন্ট পার্টনার, এনজিও-এর প্রতিনিধি এবং শিক্ষার্থীসহ প্রায় ১০০ জন এই ওয়েবিনারে অংশ গ্রহণ করেন।   
   
ওয়েবিনারের প্রধান অতিথি বীর প্রতিমন্ত্রী  মো. আশরাফ আলী খান খসরু  বলেন, প্রবীণ গোষ্ঠী তুলনামুলক বেশি ডিজিটাল বৈষম্যের সম্মুখীন হয়; কারণ প্রযুক্তিতে তাদের তুলনামূলক এক্সেস কম। তিনি তার বক্তব্যে ডিজিটাল সমতা নিশ্চিতকরণে বিশ্বের সকল বয়স-শ্রেণির জনগণকে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করতে সক্ষম করে তোলার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেন।

তিনি আরও বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং 'ডিজিটাল বাংলাদেশ' নির্মাণে এর গুরুত্ব অসীম।   

ওয়েবিনারের বিশেষ অতিথি অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল তার বক্তব্যে বলেন, একবিংশ শতাব্দীর ডিজিটালাইজেশন আমাদের জীবনধারা এবং জীবনযাত্রার মানদণ্ডে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। এটি সমাজের সকল ধরণের যোগাযোগের ধারনাকে বদলে দিয়েছে। যদিও আধুনিক এই বিশ্বে মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট এবং ল্যাপটপ/কম্পিউটারের ব্যবহার খুবই সাধারণ। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমাদের প্রবীণ জনগোষ্ঠী এই আধুনিক ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহারে অনেক পিছিয়ে আছে । তাদের চাহিদা এবং আগ্রহ অনুযায়ী এই ডিজিটালাইজেশন সম্পর্কে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ এবং সুযোগ দেওয়ার এখনই উপযুক্ত সময়।  এর মাধ্যমেই আমাদের প্রবীণ জনগোষ্ঠী  সরকারের ডিজিটাল সেবা সমূহের সুবিধা, সাইবার ক্রাইম এবং সোশ্যাল মিডিয়ায়  ছড়িয়ে পরা ভুল তথ্যের মত বিষয়গুলোর ব্যাপারে সচেতন হতে পারবে।    

ওয়েবিনারে দুটি মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়।  জাপানের জাতীয় জনসংখ্যা ও সামাজিক নিরাপত্তা গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইপিএসএস) এর উপ-মহাপরিচালক ড. রিকো হায়াসি 'কোভিড-১৯ এবং প্রবীণ জনগোষ্ঠী: চ্যালেঞ্জ সমূহ এবং এর ভবিষ্যত'  শীর্ষক  প্রথম প্রবন্ধটি উপস্থাপন করে তিনি বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রবীণ জনগোষ্ঠীর অবস্থান তুলে ধরেন।  প্রবীণদের অভিজ্ঞতা, মেধা এবং দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে সমাজকে এগিয়ে যাবার উপর তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন।  ওয়েবনিয়ারে ' বাংলাদেশে একটিভ এজিং এর অবস্থা' শীর্ষক  দ্বিতীয় প্রবন্ধটি উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সে বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আমিনুল হক।   তিনি তার উপস্থাপনায় একজন মানুষের প্রবীণ বয়সে সুস্থ ও সক্রিয় থাকার সক্ষমতা ও তার অধিকার সংক্রান্ত বিষয়গুলোর উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।  

প্রবন্ধ উপস্থাপনা শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগ এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের  পপুলেশন সায়েন্স এন্ড হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থীরা  বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রবীণ জনগোষ্ঠীর অবস্থান ও তাদের জন্য ডিজিটাল সমতা কিভাবে নিশ্চিত করা যায় সেই বিষয়ে আলাদা দলীয় প্রসঙ্গ উপস্থাপন করেন।

এরপর ওয়েবনিয়ারে একটি প্যানেল আলোচনার অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এতে  বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস) এর ফরমার সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. শরিফা বেগম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম নূরুন নবী  বাংলাদেশ ও বিশ্ব প্রেক্ষাপটে প্রবীণ জনগোষ্ঠীর অবস্থান ও তাদের জন্য ডিজিটাল সমতা নিশ্চিতকরণের ব্যাপারে অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা  এবং তার সমাধান সংক্রান্ত বিষয়ে  উপস্থাপিত প্রবন্ধগুলো সম্পর্কে আলোচনা করে তাদের মতামত প্রদান করেন।   

সমাপনী অংশে, ওয়েবিনারটি দর্শকদের প্রশ্ন এবং মতামতের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।

বিষয় : আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস ওয়েবনিয়ার

মন্তব্য করুন