- রাজধানী
- 'কোনোদিন ভাবি নাই আমাগো জন্য টিকার ব্যবস্থা হইব'
'কোনোদিন ভাবি নাই আমাগো জন্য টিকার ব্যবস্থা হইব'

টিকা পেয়ে খুশি কড়াইল বস্তির সাধারণ মানুষ- সমকাল
'টিকা নিতে রেজিস্ট্রেশন করা লাগে। এইডা ঝামেলার কাম। পড়ালেখা জানি না। কীভাবে রেজিস্ট্রেশন করতে হয়, তাও জানি না। তাই টিকা নেই নাই। কিন্তু সকালে জানলাম, ভোটার আইডি নিয়া কেন্দ্রে গেলেই টিকা পামু, তখন আর দেরি করি নাই।'
খুশিমনে একনাগাড়ে কথাগুলো বললেন ষাটোর্ধ্ব আব্দুর রহিম। তিনি রাজধানীর কড়াইল বস্তির বাসিন্দা। মঙ্গলবার সেখানে বিশেষ ব্যবস্থায় করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই নির্ধারিত কেন্দ্রগুলোতে দীর্ঘ ভিড় পড়ে যায়। কেন্দ্রগুলোর একটি পল্লীবন্ধু এরশাদ বিদ্যালয়। টিকার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অধিকাংশের হাতেই ছিল জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্মনিবন্ধন সনদ। তাদের কেন্দ্রেই নিবন্ধন করে টিকা দেওয়া হয়। এই কেন্দ্রে আগেই নিবন্ধন করে টিকা নিতে আসা মানুষের সংখ্যা খুবই কম।
পেশায় কাঠমিস্ত্রি জাহাঙ্গীর মিয়া বলেন, 'কোনোদিন ভাবি নাই আমাগো জন্য টিকার ব্যবস্থা করা হইব। বস্তির গরিব মানুষের খবর কে রাখে? কিন্তু সরকার আমাদের জন্য টিকার ব্যবস্থা করছে। আমরা খুব খুশি।'
জাহাঙ্গীর মিয়ার দাবি, তার মতো যেন বস্তি অঞ্চলে বসবাসকারী সবাই টিকা পায়। টিকাকেন্দ্র লাগোয়া একটি চায়ের দোকানে বসে কথা হচ্ছিল ষাটোর্ধ্ব আব্দুল হাইয়ের সঙ্গে। বস্তি অঞ্চলে টিকাকেন্দ্র স্থাপন করে তাদের টিকার ব্যবস্থা করায় তিনিও খুব খুশি। আব্দুল হাই বলেন, 'আমরা বস্তির মানুষ, গরিব মানুষ। আমাগো খবর কে লয়? আমাগো টিকা না দিলে তো কিছু করতে পারতাম না। কিন্তু এখন টিকা বাসার কাছেই চইলা আইছে, আর আমরা নিমু না? এইডা কি হয়? এর চাইয়া আর খুশির খবর কী হইবো আমাগো জন্য?'
পাশের মুদি দোকানি আবুল কালাম প্রথম দিন টিকা নেননি। তিনি জানালেন, কাল-পরশুর মধ্যে টিকা নেবেন। শুরুতে টিকা নিয়ে অধিকাংশের মধ্যে এক ধরনের ভয় কাজ করলেও তা কেটে গেছে। এখন সবাই টিকা নিতে আগ্রহী।
কড়াইল বস্তিতে আটটি কেন্দ্রের ২৫টি বুথে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টিকাদান কার্যক্রম চলবে। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলেছেন, এই বস্তিতে বসবাসকারী তিন লাখ মানুষকে টিকার আওতায় আনা হবে। এ জন্য সাত থেকে ১০ দিন এ অঞ্চলে টিকাদান কার্যক্রম চালানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
তবে বস্তি অঞ্চলের টিকাকেন্দ্রগুলো ঘুরে যে চিত্র দেখা যায়, অধিকাংশ মানুষের মুখে মাস্ক নেই। সামাজিক দূরত্ব মেনেও চলা হচ্ছে না। বস্তি অঞ্চলের বাসিন্দা কাদের খান বলেন, করোনার শুরু থেকে এ পর্যন্ত তিনি কোনোদিন মাস্ক পরেননি। তার মতো বস্তিতে বসবাসকারী অধিকাংশ মানুষ মাস্ক পরেন না। দু-একজনের জ্বর হলেও তারা সুস্থ হয়ে গেছেন।
টিকাকেন্দ্রগুলোতে পুরুষের তুলনায় নারীদের উপস্থিতি ছিল বেশি। পুরুষের উপস্থিতি কম থাকার কারণ সম্পর্কে বস্তির চায়ের দোকানি মালেক মিয়া বলেন, সকালে পুরুষদের বেশিরভাগ কাজে চলে যায়। তাই উপস্থিতি কম। শুক্রবার কাজ থাকে না। অনেকের শনিবারও কাজ থাকে না। এ দু'দিন টিকা দিলে পুরুষের ভিড়ও বাড়বে।
কড়াইল বস্তির বাসিন্দাদের প্রথম দিনে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেওয়া হয়েছে।
সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১৮ বছরের ওপরের বয়সী সবাই টিকা পাবেন। কড়াইল
বস্তিতে টিকাদান কার্যক্রম পরিদর্শনে এসে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের
প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা সাংবাদিকদের বলেন, প্রথম দিন ১৫
হাজার টিকা এসেছে। আগামীকাল থেকে ২০ হাজার করে টিকা মজুদ থাকবে।
শুক্র-শনিবারও টিকাদান কর্মসূচি চলবে। প্রাথমিকভাবে সাত দিন কর্মসূচি
চালানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। তবে প্রয়োজন হলে সময় বাড়ানো হবে।
মন্তব্য করুন