রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) নিয়ম না মেনে, বৈধ কাগজপত্র ছাড়া অন্যের জমি দখল করে উত্তর কাফরুলে ভবন নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে। আমেনা মোস্তফা (৬৬) নামে এক বিধবা নারীর অভিযোগ, প্রভাব খাটিয়ে তার জায়গাতে নির্মাণ করা হয়েছে ভবনের ব্যালকনি। এই ব্যাপারে তিনি কাফরুল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।

আমেনা মোস্তফা অভিযোগ করেন, মোস্তফা কামাল, দেবাশিষ সাহা, হাফিজুর রহমান ও শাহজাহানসহ কয়েক শিক্ষক উত্তর কাফরুল এলাকার ২৩৯/৫ নম্বরে বহুতল ভবন নির্মাণ করছেন। পাশেই আমেনার একটি ছয়তলা বাড়ি রয়েছে। নিচ থেকে কিছুটা জায়গা ছেড়ে ভবন নির্মাণের ফাউন্ডেশন পিলার তোলা হলেও উপরের দিকে এসে তার ছয়তলা ভবনের ভেতরের দিকে ঢুকিয়ে ব্যালকনি নির্মাণ করা হয়েছে। 

তার আগে ২৪ ঘণ্টা গভীর নলকূপের পানি সুবিধা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে পানির ট্যাংকি বসানোর নামে কৌশলে সীমানা প্রাচীর ভেঙে ফেলে ওই বহুতল ভবনের মালিকরা। ভবন নির্মাতারা তার সঙ্গে প্রতারণার মাধ্যমে পানির ট্যাংকি বসানোর কথা বলে পাঁচ লাখ টাকাও লুটে নেন। ওই সময়ে মেয়ের শারীরিক অসুস্থতার কারণে দেশের বাইরে যান তিনি। সেই সুযোগে তারা সীমানা প্রাচীর ভাঙা জায়গাজুড়ে গভীর নলকূপ, ফাউন্ডেশন পিলার ও ব্যালকনি নির্মাণ করে। পরে দেশে ফিরে এ বিষয়ে প্রতিবাদ করলে, তারা তাকে ও তার পরিবারের সদস্যদের নানা ধরনের হুমকি-ধামকি দেয়। তাই বাধ্য হয়ে তিনি সম্প্রতি কাফরুল থানায় জিডি করেন।

এর আগে রাজউকও অবৈধভাবে ভবন নির্মাণের অভিযোগ এনে তিন দফায় কাজ বন্ধের নোটিশ দেয় ওই শিক্ষক গ্রুপের বিরুদ্ধে। এতে কর্ণপাত না করেই তারা চালিয়ে যান নির্মাণ কাজ। এরই মধ্যে ৯ থেকে ১০ তলা পর্যন্ত নির্মাণ কাজ শেষ করেছেন তারা।

আমেনার ভাতিজা সাহেদ বলেন, ‘আমরা অনেকবার তাদের আপোষে বুঝানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু তারা কর্ণপাত করে না। উল্টো আমাদের হুমকি-ধামকি দেয়।’

তিনি বলেন, ‘আমরা পর পর তিনবার রাজউকে লিখিত অভিযোগ দিই। পরে রাজউক অবৈধ অংশ ভেঙে ফেলতে তিনটি নোটিশ দেয় তাদের। তাতেও তারা কোনো কর্ণপাত করছেন না।’

অভিযোগ রয়েছে, উদ্যোক্তাদের ভবন নির্মাণ ও বিক্রিতে কোনো ধরনের বৈধ কাগজপত্র নেই। রিহ্যাব বা জয়েন্ট স্টকের লিমিটেড কোম্পানি বা একক মালিকানার প্রোপাইটারশিপ কোম্পানির কাগজপত্র নেই তাদের। নির্মিতব্য ভবন নির্মাণ উদ্যোক্তাদের চার জনের মধ্যে দু’জন স্বনামধন্য দুটি স্কুলের শিক্ষক। এছাড়া ওই দুটি স্কুল ও শিক্ষকদের নাম ভাঙ্গিয়ে বৃদ্ধার জায়গা দখলে নিয়ে রাজউকের নিয়ম ভেঙে ভবন নির্মাণ করছে। 

রাজউক সার্কেল-৩ মহাখালী জোনের অথরাইজড অফিসার সোহাগ বলেন, নিয়ম অনুযায়ী আমরা পর পর তিন বার নোটিশ করেছি, যেন তারা কাজ বন্ধ রাখেন। তারা তা মানছেন না। নিয়ম অনুযায়ী খুব শিগগিরই ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালিয়ে নিয়ম বহির্ভূত তৈরি করা অংশ ভেঙে ফেলা হবে বলে জানান তিনি।

এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ভবন মালিকদের একজন মোস্তফা কামাল বলেন, জমি দখল বা নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করার অভিযোগটি মোটেও সত্য না। নিয়ম মেনেই তারা কাজ করছেন বলে জানান তিনি।