চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অস্ত্রবাজিতে সরাসরি জড়িত ৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। এ অস্ত্রধারীরা ফুলবিক্রেতা, মাইক্রোবাসচালক, নিরাপত্তাকর্মী ও চাকরিজীবী বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীটি।

মঙ্গলবার কারওরান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, র‌্যাবের বিভিন্ন ব্যাটালিয়ন চট্টগ্রাম, বান্দরবান ও ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৮ জনকে গ্রেপ্তার করে। তারা দুইজন প্রার্থীর অনুসারী হয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়েছিল। নিজেরাই উত্তেজিত হয়ে নিজেদের প্রার্থীকে জেতাতে তারা মরিয়া হয়ে ওঠে। প্রার্থীরা তাদের সহিংসতা চালাতে নির্দেশনা দিয়েছিল কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

গ্রেপ্তার ৮ জন হলো—সহিংসতায় জড়িত নাসির উদ্দিন, মোরশেদ, কোরবান আলী, ইসমাইল, জসিম উদ্দিন, মো. মিন্টু, মো. কায়েস ও নুরুল আবছারকে। 

সহিংসতা হওয়া সাতকানিয়ার ছয়টি ইউপির মধ্যে দুটির ফল স্থগিত রয়েছে। মূলত আওয়ামী লীগ ও এর বিদ্রোহী প্রার্থীদের অনুসারীদের মধ্যে এই সহিংসতা হয়।

র‌্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, এরা মূলত বিভিন্ন পেশার লোক। নির্বাচনে নিজের প্রার্থীকে জেতাতে সহিংসতায় অংশ নেয়। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত এই গ্রুপটির নেতা কায়েস। সাতকানিয়াতে আধিপত্য বিস্তার করতে একটি গ্রুপ লালন পালন করতো। নির্বাচনের দিন কায়েস হামলায় নেতৃত্ব দেয়। আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্রগুলো কায়েস বিভিন্নভাবে সংগ্রহ করে।

তিনি আরও জানান, কায়েস চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতো। নির্বাচনে সহিংসতা করার পর সে ঢাকায় পালিয়ে আসে। সহিংসতার পর নাছির উদ্দিন চট্টগ্রামের একটি জঙ্গলে পালিয়ে ছিল। সে একসময় শাহবাগে ফুল বিক্রি করতো। নূরুল আবছার ঢাকায় থাকলেও ইউপি নির্বাচনে কায়েসের কথায় সাতকানিয়া যায়। গ্রেপ্তার জসিম একজন রাজমিস্ত্রী। সে গোলাবারুদ নিয়ে মোরশেদের পাশে ছিল। গ্রেপ্তার মিন্টু মাইক্রোবাস চালক। সে অর্ধশত সন্ত্রাসী নিয়ে ঘটনাস্থলে যায়। কোরবান আলী একজন নিরাপত্তাকর্মী, ইসমাইল সহিংসতায় লাঠিসোটা নিয়ে অংশ নিয়েছিল। চট্টগ্রাম বন্দরে একটি কোম্পানির কর্মী নাসির এই হামলায় যৌথভাবে নেতৃত্ব দেয়। কায়েসের সংগ্রহ করা অস্ত্র তার কাছে রাখা হতো।

কমান্ডার মঈন বলেন, ‘সব সময় প্রার্থী বলে না, সমর্থকরাও অনেক সময় উত্তেজিত হয়ে যায়। তারা তাদের প্রার্থীদের জয়ী করতে সহিংসতা করে। সন্ত্রাসীরা অনেক সময় টাকার বিনিময়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে থাকে। তারা বিভিন্ন জনের জয়ে কাজ করে। তবে প্রাথমিকভাবে প্রার্থীদের নির্দেশনার বিষয়টি আমরা এখনও পাইনি।’

গত ৭ ফেব্রুয়ারি ভোটের দিন সাতকানিয়া উপজেলার খাগরিয়া, বাজালিয়া, নলুয়া, সোনাকানিয়াসহ কয়েকটি ইউনিয়নে রক্তক্ষয়ী সংঘাতের ঘটনা ঘটে। প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া দেয় বিভিন্ন প্রার্থীর সমর্থকরা। বাজালিয়া ইউনিয়নে এক চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষে গিয়ে গোলাগুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন বহিরাগত এক ব্যক্তি। নলুয়ায় এক শিশুকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে খাগরিয়া ইউনিয়নে দু'টি ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। এসব সহিংসতার ঘটনায় অন্তত ২১টি মামলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত জড়িত অর্ধশত ব্যক্তি গ্রেপ্তার হয়েছে।

র‌্যাব কর্মকর্তারা জানান, ওই সহিংসতায় ব্যবহৃত অস্ত্রের সচিত্র প্রতিবেদন গণমাধ্যমে আসার পরই র‌্যাব জড়িতদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারে তৎপর হয়। এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখার তত্ত্বাবধানে র‌্যাব-২, র‌্যাব-৭ ও র‌্যাব-১৫ অভিযান শুরু করেছিল। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার আসামিরা সহিংসতার সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি স্বীকার করেছে।