- রাজধানী
- প্রতারণার জন্য ১০ কোটি টাকা দেনমোহরে ব্যাংকারকে বিয়ে
প্রতারণার জন্য ১০ কোটি টাকা দেনমোহরে ব্যাংকারকে বিয়ে

কোটি টাকার নিচে যেন কোনো লেনদেনই করতেন না আলমগীর হোসেন। প্রতারণার জন্য রাজধানীর গুলশানে আল-তাকদীর নামে যে ‘ভুয়া’ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খুলেছিলেন সেখানেও খরচ করেছেন প্রায় দেড় কোটি টাকা। এরপরই শুরু হয় আলমগীরের প্রতারণা। হাজার হাজার কোটি টাকার ভুয়া ওয়ার্ক অর্ডার তৈরি করে সাপ্লাইয়ারদের আকৃষ্ট করতে থাকে আলমগীরের লোকজন। নানা কৌশল ব্যবহার করে প্রতারণার মাধ্যমে মানুষের কাছ থেকে অন্তত ১০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন আলমগীর ও তার লোকজন।
এসব প্রতারণার কাজে লেনদেনের সূত্রে সালমা সুলতানা সুইটি নামে একটি বেসরকারি ব্যাংকের এক কর্মকর্তা সঙ্গে আলমগীরের পরিচয় হয়। একপর্যায়ে ওই নারীর সঙ্গে তার সখ্যতাও গড়ে ওঠে। ওই ব্যাংক কর্মকর্তা নিজে গ্রান্টার হয়ে ব্যাংকের মাধ্যমে দুই হাজার কোটি টাকার এলসি, এক হাজার ২০০ কোটি টাকা ক্যাশ করে দেবে বলে আলমগীরকে আশ্বস্ত করেন।
এমন আশ্বাস পেয়ে গত বছরের জুলাইয়ে আলমগীর তার প্রথম স্ত্রীকে না জানিয়ে সালমা সুলতানা সুইটিকে তার দাবি অনুযায়ী ১০ কোটি টাকা কাবিনে বিয়ে করেন আলমগীর। সম্প্রতি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে আলমগীরের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের এসব তথ্য।
আলমগীরের বিরুদ্ধ ডজন খানেক মামলা রয়েছে। এসব মামলায় আলমগীর ও তার দুই সহযোগীকে বুধবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। গ্রেপ্তারকৃত অপর দুজন হলেন- শফিকুল ইসলাম ও ইমরান হোসাইন।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আলমগীরের প্রতারণার বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি ইমাম হোসেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সালমাকে বিয়ের পর মাসে দুই লাখ টাকা ভাড়া চুক্তিতে গুলশানের একটি বাসা ভাড়া নিয়ে তারা বসবাস শুরু করেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে এলসি না হওয়ায় দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে মনমালিন্য হয় তার। এক পর্যায়ে গত নভেম্বরে বিচ্ছেদ হয় তাদের। তখন ১০ কোটি টাকা দেনমোহরের মধ্যে নগদ ৪ কোটি টাকা এবং ৭৫ লাখ টাকা স্বর্ণলাঙ্কার দেওয়া হয় সালমাকে। এদিকে দেনমোহরের বাকি টাকা আদায়ে আলমগীরের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন ওই নারী ব্যাংকার।
সিআইডি জানিয়েছে, আলমগীরের গুলশানের অফিসে কাজের চুক্তি করতে আসা ব্যবসায়ীদের নামিদামি রেস্টুরেন্টে শত পদের খাবারে আপ্যায়ন করা হতো। এছাড়া তাদের বিভিন্ন রিসোর্টে নিয়ে কয়েকবার বড় ধরনের পার্টির আয়োজনও করা হয়। এমনকি সাব ঠিকাদারদের বিশ্বস্ততা অর্জন করতে প্রজেক্ট এলাকায় বালি সরবরাহের নিজস্ব ডাম্পিং পয়েন্ট উদ্বোধন অনুষ্ঠান করে আলমগীর। এভাবে ফাঁদে ফেলে কাজের চুক্তির নামে সাপ্লায়ারদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিতো সে।
জালিয়াতি করে টাকা আত্মসাতের পর আত্মগোপনে চলে যান আলমগীর ও তার সহযোগীরা। এদিকে বালি ফেলার জন্য আলমগীরের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পান ভুক্তভোগীরা। এমনকি গুলশানে আল-তাকদীর নামের প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করে সেখানেও তালা ঝুলতে দেখেন। এরপরই তারা প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পারেন। তখন সিআইডিকে বিষয়টি জানান তারা।
মন্তব্য করুন