- রাজধানী
- জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি থেকে কৃষিকে রক্ষা করতে হবে
চার দিনের এফএও সম্মেলন শেষ
জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি থেকে কৃষিকে রক্ষা করতে হবে

ছবি: সমকাল
বাংলাদেশ কৃষিতে বড় সফলতা অর্জন করলেও সামনে এখন অজস্র চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। এ দেশের কৃষি ব্যবস্থা সম্পূর্ণ প্রকৃতিনির্ভর। এখন সেই প্রকৃতিতে প্রভাব পড়ছে জলবায়ু পরিবর্তনের। ফলে ঝুঁকি বাড়ছে কৃষি ও কৃষকের। এই ঝুঁকি ক্রমেই খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে ফেলছে। এ অবস্থায় কৃষিকে জলবায়ু পরিবর্তনের সংকট থেকে রক্ষায় সব দেশ জোটবদ্ধ হয়ে কাজ করবে। কৃষি খাতে জলবায়ুসহিষুষ্ণ জাত উদ্ভাবন, উন্নত প্রযুক্তি, ডিজিটাল মাধ্যম ও গবেষণা বাড়াতে হবে। রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সহযোগিতাকে আরও সম্প্রসারণ করতে হবে। এ লক্ষ্যে খাদ্য ও কৃষি সংস্থাকে (এফএও) এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের ৪৬টি দেশের মধ্যে ডিজিটাল হাব স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
রাজধানীর একটি হোটেলে কৃষি মন্ত্রণালয় আয়োজিত গত মঙ্গলবার শুরু হওয়া চার দিনের জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) ৩৬তম এশিয়া ও প্যাসিফিক আঞ্চলিক সম্মেলনে (এপিআরসি) এসব কথা উঠে এসেছে। গতকাল বিকেলে সম্মেলন শেষ হয়। সম্মেলনে ডিজিটাল হাব স্থাপন, গবেষণার জন্য বিশেষ ফান্ড গঠন, সবুজায়ন বৃদ্ধি, জলবায়ু সহনশীল কৃষি, টেকসই কৃষিখাদ্য ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং মানুষ, প্রাণী ও পরিবেশের স্বাস্থ্যকে সমান গুরুত্ব ও আত্মনির্ভরশীল হিসেবে বিবেচনা করে ওয়ান হেলথ অ্যাপ্রোচকে অগ্রাধিকার দিয়ে চূড়ান্ত রিপোর্ট গ্রহণ করেছে এপিআরসির সদস্য ৪৬টি দেশ। সম্মেলনে বাংলাদেশ পরবর্তী দুই বছরের জন্য এপিআরসির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছে। পরবর্তী ৩৭তম এপিআরসি সম্মেলন শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত হবে।
শুক্রবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক চার দিনের সম্মেলনের আলোচনার বিষয় বিস্তারিত তুলে ধরেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, কৃষি সচিব সায়েদুল ইসলাম ও খাদ্য সচিব মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। আমরা যে রকমটা ভেবেছিলাম, তার চেয়ে বেশি প্রভাব পড়ছে। মানবজীবনের সবকিছুকেই এটি প্রভাবিত করবে, তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে কৃষি। আর কভিডের প্রভাবে এ অঞ্চলের কৃষি, খাদ্য ও অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলেছে। সারের উৎপাদন কমে গেছে। সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী দেশগুলো এ ব্যাপারে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মালদ্বীপ তাদের অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।
মন্ত্রী জানান, এ অবস্থায় জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব ও কভিড মোকাবিলা করে টেকসই কৃষিখাদ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে গবেষণার মাধ্যমে ফসলের নতুন জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং তা সম্প্রসারণে একসঙ্গে কাজ করার কথা রিপোর্টে বলা হয়েছে। এখানে এফএওর বিরাট ভূমিকা রয়েছে।
কৃষিতে গবেষণা ও উদ্ভাবনের জন্য একটি 'বিশেষ ফান্ড' গঠনের জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এ সম্মেলনে এটিকে চূড়ান্ত রিপোর্টের মধ্যে গ্রহণ করা হয়েছে বলে কৃষিমন্ত্রী জানান।
মানুষ, প্রাণী ও পরিবেশের স্বাস্থ্য রক্ষায় 'ওয়ান হেলথ অ্যাপ্রোচ' গ্রহণের কথা জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ওয়ান হেলথ অ্যাপ্রোচ গড়ে তুলতে অগ্রাধিকার চিহ্নিত করে রিপোর্ট চূড়ান্ত করা হয়। জুনোটিক বা প্রাণী থেকে মানুষে সংক্রমিত রোগের প্রকোপ দিন দিন বেড়ে চলেছে। চলমান কভিড এর অন্যতম উদাহরণ। এ অবস্থায় এ অঞ্চলে ওয়ান হেলথ অ্যাপ্রোচ গড়ে তুলতে সম্মত হয়েছে দেশগুলো।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের পাশাপাশি বাংলাদেশে নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যবহার, ইটভাটা ও নানা দূষণসহ মানবসৃষ্ট নানা আগ্রাসনে কৃষি ঝুঁকি পড়েছে। মানবসৃষ্ট এমন বিপর্যয় থেকে কৃষিকে বাঁচাতে করণীয় কী- এমন প্রশ্নে কৃষিমন্ত্রী বলেন, পলিথিন ও ইটভাটা বিশ্বের কোনো দেশেই এখন আর নেই। আমাদের দেশে নিষিদ্ধ পলিথিন এখনও চলছে। এসব দেখলে আপনাদের মতো আমারও খুব কষ্ট লাগে। আমি কী জবাব দেব? এ সব প্রশ্নের জবাব দেওয়া কঠিন। সমন্বিতভাবে এসব বন্ধে উদ্যোগ নেওয়া দরকার।
এ দিকে শুক্রবার সকালে সম্মেলনের সেশন শুরুর আগে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে ফিলিপাইনের কৃষিমন্ত্রী উইলিয়াম ডি ডার, শ্রীলঙ্কার কৃষিমন্ত্রী মিথালাওয়ে মাহিনদানার আলুথগামেজ ও লাওসের কৃষি উপমন্ত্রী থংপাথ ভংমানির সঙ্গে বৈঠক করেন। বাংলাদেশে উন্নতমানের রপ্তানিযোগ্য আনারসের জাত এমডি-২, জি-নাইন কলা, ডেলমন চা এবং মাকাপুনো নারকেল উৎপাদনে সহযোগিতা করবে ফিলিপাইন। এ বিষয়ে শিগগির বাংলাদেশ ও ফিলিপাইনের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হবে। বাংলাদেশ থেকে আলু আমদানির আগ্রহ প্রকাশ করেন শ্রীলঙ্কান কৃষিমন্ত্রী। এ ছাড়া শ্রীলঙ্কার নারকেল গবেষণা কেন্দ্রের সঙ্গে পারস্পরিক সহায়তা বাড়ানোর তাগিদ দেন ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। আপৎকালীন চাল সংকট মোকাবিলায় লাওস থেকে আমদানি করার আগ্রহের কথা জানালে সহযোগিতার আশ্বাস দেন থংপাথ ভংমানি।
মন্তব্য করুন