- রাজধানী
- অভিবাসনে অনিয়ম, অস্বচ্ছতা রয়ে গেছে: প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী
অভিবাসনে অনিয়ম, অস্বচ্ছতা রয়ে গেছে: প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী

বৃহস্পতিবার রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলে টাইমস মিডিয়া ভবনে অনুষ্ঠিত আইওএম-সমকাল-ডেইলি স্টার বহুপাক্ষিক সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি-মাহবুব হোসেন নবীন
পরিস্থিতির উন্নতি হলেও অভিবাসনে অনিয়ম অস্বচ্ছতা ও বিদেশ যেতে মাত্রাতিরিক্ত ব্যয় এখনও রয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ।
তিনি বলেছেন, রিক্রুটিং এজেন্সির সংখ্যা বেশি হলেও ভিসা কেনাবেচার প্রতিযোগিতায় অভিবাসন কমার বদলে উল্টো বেড়েছে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলে টাইমস মিডিয়া ভবনে অনুষ্ঠিত আইওএম-সমকাল-ডেইলি স্টার বহুপাক্ষিক সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ইমরান আহমদ বলেন, আগের চেয়ে পরিস্থিতির উন্নতি হলেও অভিবাসনে অনিয়ম অস্বচ্ছতা ও বিদেশ যেতে মাত্রাতিরিক্ত ব্যয় এখনও রয়ে গেছে।
তিনি বলেন, ‘একজন কর্মীর বিদেশ যেতে তার ১৮ মাসের বেতনের সমপরিমাণ টাকা খরচ হয়। তার মানে ১৮ তাকে বিনা বেতনে কাজ করতে হয়। তার ভিসা থাকে দুই বছরের। তাহলে সে খরচ তুলবে কবে আর সঞ্চয় করবে কীভাবে!’
ইমরান আহমদ বলেছেন, ‘আসলে শূন্য অভিবাসন ব্যয় বলে কিছু নেই। বিদেশ যেতে টাকা খরচ হবেই। প্রশ্ন হচ্ছে, টাকাটা কে দেবে। এখন কর্মীর পকেট থেকে যাচ্ছে। এ খরচ নিয়োগকারীকে দিতে হবে।’
তিনি জানান, কর্মীদের সুরক্ষায় ভালো বীমার ব্যবস্থা করতে যাচ্ছে সরকার। এখন বিদেশ যাওয়ার সময় ৪৯০ টাকা প্রিমিয়াম দিলে, কর্মক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত হলে চার লাখ টাকা পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে।
সংলাপে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী জানান, করোনার কারণে বিদেশ যাওয়া কর্মীর সংখ্যা কমেছিল। তা আবার বেড়েছে। ২০২১-২০২২ অর্থ বছরের ২২ মার্চ সাত লাখের বেশি কর্মী বিদেশ গিয়েছে। জুন নাগাদ এ সংখ্যা ১০ লাখের বেশি হতে পারে।
ইমরান আহমদ বলেন, ‘প্রকৃত সত্য হলো রেমিট্যান্স কমছে। কারণ করোনাকালে বহু কর্মী চলে এসেছে। এখন যারা যাচ্ছে, তারা কাজে স্থিতিশীল হতে পারলে রেমিট্যান্স আবার বাড়বে।’
তিনি বলেছেন, অতীতে যা হওয়ার হয়েছে। কর্মীকে সুরক্ষা দিতেই হবে। বিদেশগামী কর্মীদের সুরক্ষায় দক্ষতা বৃদ্ধির উদ্যোগ রয়েছে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার পর্যালোচনার পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, 'আমরা সব সময় রেমিট্যান্স দেখি। তার পেছনের মানুষটিকেও দেখা দরকার।'
'অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় স্বচ্ছ নিয়োগ ও বিনাখরচে অভিবাসন' শীর্ষক এ সংলাপে সংলাপে বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক ড. শামসুল আলম।
জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) আয়োজিত এ সংলাপ সঞ্চালনা করেন সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান।
সংলাপে অংশ নেন সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক, সরকারি রিক্রুটিং এজেন্সি বোয়েসেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. বিল্লাল হোসেন, রিক্রুটিং এজেন্সির সংগঠন বায়রার সাবেক প্রথম যুগ্ম মহাসচিব মিজানুর রহমান, অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রামের (ওকাপ) চেয়ারপারসন শাকিরুল ইসলাম, ওয়ারবি ডেভলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুল হক।
জর্ডান থেকে ভার্চুয়ালি অংশ নেন দেশটির গার্মেন্ট এক্সেসরিজ অ্যান্ড টেক্সটাইল এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী পরিচালক সসান আল হাবেবেহ।
স্বাগত বক্তৃতা করেন আইওএমর ভারপ্রাপ্ত মিশন প্রধান নুসরাত ফাতেমা গাজ্জালী। এছাড়াও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থাসহ (আইএলও) বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
কর্মী তৈরিতে কারিগরি প্রতিষ্ঠানের মান নিয়ে প্রশ্ন
প্রবাসে দক্ষ কর্মী পাঠাতে দেশে বেশকয়েকটি কারিগরি প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম চালু করলেও তার মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম।
তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে আর অদক্ষ কর্মীর চাহিদা থাকবে না। দেশে অনেক কারিগরি প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়েছে। কিন্তু এগুলোর মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ভারত আইআইটি করে দক্ষ কর্মী তৈরি করে আন্তর্জাতিক সংস্থায় পাঠাচ্ছে।’
অভিবাসনে স্বচ্ছতা ও বিদেশ যেতে খরচ কমাতে দক্ষতা বৃদ্ধিতে জোর দিতে বলেন প্রতিমন্ত্রী।
শামসুল আলম বলেন, কর্মী পাঠানো সরকারের কাজ নয়। বিদেশ থেকে চাহিদাপত্র এনে কর্মী পাঠানোর ব্যবসা রিক্রুটিং এজেন্সিকেই করতে হবে। কিন্তু সরকারকে নজদারী করতে হবে- তারা অতি মুনাফা করছে কিনা। কর্মীকে শোষণ করছে কিনা।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, করোনার কারণে অনেকের ধারণা ছিল রেমিট্যান্সে ধস নামবে। কিন্তু সৌভাগ্য রেমিট্যান্স ১৮ থেকে বেড়ে ২৫ বিলিয়ন ডলার হয়েছে।
তিনি জানান, করোনায় গত বাজেটে ৬ শতাংশ ঘাটতি ছিল। ৪০ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে টিকার জন্য। তারপরও খুব বেশি ঘাটতি হয় রেমিট্যান্সের কারণে। রেমিট্যান্সের ৯০ ভাগ গ্রামে খরচ হয়। সে কারণেই করোনায় অর্থনীতি সচল ছিল।
‘প্রবাসী কর্মীর অধিকারে আরও কঠোর হতে হবে’
অভিবাসন ব্যয় বিষয়ে জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থার উপদেষ্টা শহীদুল হক বলেছেন, ভারত ও নেপালে অভিবাসনে সুশাসন তৈরি হয়েছে, কারণ তারা একটি প্রক্রিয়া তৈরি করতে পেরেছে। সেখানে কোনো এজেন্সি কর্মী ঠকালে, বেশি টাকা নিলে, তাকে সোজা জেলে যেতে হয়। বাংলাদেশ সরকারও সেই অবস্থানে যেতে হবে।
বিল্লাল হোসেন বলেন, বোয়েসেল সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে শতভাগ স্বচ্ছ অভিবাসন করে। মাত্র ৩৭ হাজার টাকা করে খরচে ১০ জন কর্মী আজই (বৃহস্পতিবার) ক্রোয়েশিয়া পাঠানো হয়েছে। সমস্যা হলো এর প্রচার নেই। প্রধানমন্ত্রীও তা বলেছেন। কীভাবে কত টাকায় বিদেশ যাওয়ায় তার সঠিক তথ্যের প্রচার থাকতে হবে।
সসান আলম হাবেবেহ বলেন, বাংলাদেশি কর্মী স্বচ্ছ অভিবাসন প্রক্রিয়ায় জর্ডান আসছেন। তারা সবাই ভাল আছেন। নানা ট্রেড ইউনিয়নসহ নানাবিধ সুবিধা পাচ্ছেন।
রিক্রুটিং এজেন্সি মালিক মিজানুর রহমান বলেছেন, এক সময় সৌদি আরবে ১২ লাখ টাকায় কর্মী যেত। এখন এক লাখ ২০ হাজার টাকায় যাচ্ছে। রিক্রুটিং এজেন্সিই পাঠাচ্ছে।
এজেন্সির সামনে যেসব প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, সেগুলো দূর করলে আরও কমে কর্মী পাঠানো সম্ভব বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সাইফুল হক বলেন, দক্ষ কর্মীকে ভিসা কিনে বিদেশ পাঠাতে হয় না। যতদিন ভিসা কেনাবেচা থাকবে ততদিন অভিবাসন ব্যয় কমবে না। এর সমাধান কর্মীর দক্ষতা বাড়াতে হবে।
নুসরাত ফাতেমা বলেছেন, অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় অভিবাসনকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারপরও অভিবাসীরা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। জোরপূর্বক শ্রম আদায়, অস্বচ্ছ প্রক্রিয়া বিদেশ পাঠানোর মতো ঘটনা ঘটেই চলেছে।
অনুষ্ঠানের সমাপ্তি টেনে আবু সাঈদ বলেন, সমকাল আশা করে সরকার অভিবাসনে সকল অনিয়ম অস্বচ্ছতা দূর করতে শক্ত পদক্ষেপ নেবে। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় এ ধরনের উদ্যোগ নিলে সমকাল তা লেখনীর মাধ্যমে সমর্থন জানাবে।
মন্তব্য করুন