- রাজধানী
- ছোট্ট সাফা এখনও জানে না বাবা-মা-ভাই কেউ বেঁচে নেই
ছোট্ট সাফা এখনও জানে না বাবা-মা-ভাই কেউ বেঁচে নেই

ছোট্ট সাফা এখন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন।
রাজধানীর পূর্ব বেরাইদে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে দগ্ধ শিশু সাফা (৯) শুয়ে আছে হাসপাতালের বিছানায়। তার শরীরের ক্ষত ধীরে ধীরে সেরে উঠছে। তবে তার মন ভালো নেই। ছোট্ট মেয়েটি এখনও জানে না, সেই ভয়াল আগুন চিরতরে কেড়ে নিয়েছে তার মা, বাবা ও ভাইকে।
স্বজনরা তাকে বলছেন, সবাই ভালো আছে, দু'-একদিন পরই দেখা হবে। এই মিথ্যে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে কেঁপে উঠছে তাদের কণ্ঠস্বর। ছোট্ট মেয়েটিকে মর্মান্তিক খবর দেওয়ার সাহস করে উঠতে পারছেন না কেউ।
মঙ্গলবার সকালে তার ছোট ভাই সাফিয়ানও (৭) মারা গেছে। সন্ধ্যায় মা-বাবার পাশেই তাকে দাফন করা হয়েছে।
রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা চলছে সাফার। গত ২৩ মার্চ ভোরে বাড্ডার বেরাইদ পূর্বপাড়া এলাকার বাসায় ভয়াবহ বিস্ফোরণে সে ও তার পরিবারের তিন সদস্য দগ্ধ হয়।
ঘটনার পরপরই তাদের উদ্ধার করে এই হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেদিন রাতেই শিশুটির বাবা সাইদ হাসান মারা যান। সোমবার ভোরে তার মা রেখা আক্তারের মৃত্যু হয়।
রেখা আক্তারের চাচা নূর ইসলাম সমকালকে জানান, ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করার পর চারজনকে আলাদাভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়। ফলে একজন অপরজনের খবর জানতে পারেননি। স্বামীর মৃত্যুর খবর না জেনেই মারা যান রেখা। একইভাবে সাফওয়ানও তার মা-বাবার মৃত্যুর কথা না জেনেই দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে। ছোট্ট সাফাকে এসব খবর জানানো হচ্ছে না। কারণ সে হয়তো এই শোকের ধাক্কা সামলাতে পারবে না।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার শারীরিক অবস্থা অনেকটা ভালো। এ অবস্থায় পরিবারের তিনজনের মৃত্যুর খবরে তার অবস্থার অবনতি হতে পারে।
বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক এস এম আইউব হোসেন জানান, শিশু সাফিয়ানের শরীরের ২৫ ভাগ পুড়ে গিয়েছিল। শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। সেখানে গতকাল সকাল সাড়ে ৮টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
এর আগে সোমবার মারা যাওয়া রেখার শরীরের ৩০ ভাগ দগ্ধ হয়েছিল। আর সাইদের পুড়েছিল ৯৫ ভাগের বেশি। চিকিৎসাধীন সাফার শরীরের ১১ ভাগ পুড়েছে।
এ কারণে তাকে সারিয়ে তোলার ব্যাপারে আশাবাদী চিকিৎসকরা।
সাফার বাবা সাইদ পেশায় মাংস ব্যবসায়ী ছিলেন। পুরান ঢাকার কাপ্তান বাজারে তার দোকান রয়েছে। তার বাবার নাম হাফিজ উদ্দিন, মা সোলেমা খাতুন। মৃত রেখা ছিলেন গৃহবধূ। তার দুই সন্তানের মধ্যে ছেলে সাফিয়ান স্থানীয় স্কুলের প্রথম শ্রেণিতে পড়ত। আর মেয়ে সাফা পড়ে তৃতীয় শ্রেণিতে।
স্বজনরা জানান, ঘটনার দিন ভোরে বাসার ভেতর গ্যাসের প্রচণ্ড গন্ধ পেয়ে রান্নাঘরে যান সাইদ। তার ধারণা ছিল, ভুল করে কেউ চুলা খুলে রেখেছে। কিন্তু সেখানে গিয়ে তিনি চুলা বন্ধ দেখতে পান। পরে চুলার রেগুলেটর নাড়াচাড়া করার সময় ভুলে সেটি চালু হয়ে যায়। এতে ঘরে জমে থাকা গ্যাস বিস্ফোরণ ঘটায়। রান্নাঘরের দেয়াল ধসে পড়ে।
সাইদের বড় ভাই জাকির হোসেন বলেন, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হওয়ায় আগুনের তীব্রতা ছিল বেশি। মুহূর্তে পুরো বাসায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এতে পরিবারের সবাই দগ্ধ হয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মী ও আশেপাশের লোকজন গিয়ে তাদের উদ্ধার করে।
সাইদের ভাতিজা সজীব হোসেন জানান, পূর্ব বেরাইদ এলাকার কবরস্থানে এর আগে সাইদ ও রেখাকে দাফন করা হয়। মঙ্গলবার মাগরিবের নামাজের পর তাদের কবরের পাশেই সাফিয়ানকে দাফন করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন