রাজধানীতে এক মতবিনিময় সভায় বিশিষ্টজন বলেছেন, রাজশাহীতে দুই আদিবাসী কৃষকের আত্মহত্যার ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত করতে হবে। সেচের পানিতে নিশ্চিত করতে হবে কৃষকের ন্যায্য হিস্যা। আদিবাসীদের প্রতি রাষ্ট্রের বৈষম্যমূলক নীতি দূর করারও দাবি জানিয়েছেন তারা।

বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে আদিবাসী ও সংখ্যালঘুবিষয়ক সংসদীয় ককাস এ সভার আয়োজন করে। ককাসের আহ্বায়ক ফজলে হোসেন বাদশার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন অধ্যাপক মেজবাহ কামাল, সাংসদ র. আ. ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান, প্রথম আলোর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হাসান প্রমুখ। দুই আদিবাসী কৃষকের আত্মহত্যার ঘটনার বর্ণনা দেন বিমলচন্দ্র রাজওয়ান ও আশরাফুল হক তোতা।

অধ্যাপক মেজবাহ কামাল বলেন, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্পে শত শত গভীর নলকূপ বসিয়ে কৃষকদের কাছে চড়া দামে পানি বিক্রি করা হচ্ছে। এক শ্রেণির মধ্যস্বত্বভোগী মুনাফাখোরের কাছ থেকে কৃষকদের পানি কিনতে হয়। অর্থাৎ বরেন্দ্র অঞ্চলে প্রান্তিক চাষিরা বর্তমানে বিএমডিসি কর্তৃপক্ষের পানি ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি। দুই কৃষকের আত্মহত্যার জন্য এই সংস্থাই দায়ী। এই আত্মহত্যা মামলাটি ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছেন সেখানকার প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ ও পুলিশ প্রশাসন।

উবায়দুল মোকতাদির বলেন, সেচের পানির অভাবে ভারতে বিভিন্ন এলাকায় কৃষকদের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে। আফ্রিকার কোনো কোনো এলাকায় সেচের পানির অভাবে কৃষকরা আত্মহত্যা করেছে। বাংলাদেশ সেচের পানির জন্য দু'জন কৃষকের আত্মহত্যার ঘটনা এটাই প্রথম। এটা দেশের জন্য একটি অশনিসংকেত। সেজন্য আসল ঘটনা উদ্ঘাটন করতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত জরুরি।

আবু সাঈদ খান বলেন, আদিবাসীরা এমনিতেই বৈষম্যের শিকার। প্রান্তিক এই জনগোষ্ঠীর জন্য রাষ্ট্রীয় বিশেষ সুরক্ষার প্রয়োজন। বরং দেখা যাচ্ছে, আদিবাসী কৃষকেরা তাদের প্রাপ্য পানি পাচ্ছে না। পানি না দিয়ে এই কৃষকদের আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত জরুরি। একই সঙ্গে পানির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার দিকে জোর দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

ফজলে হোসেন বাদশা বলেছেন, দুর্বৃত্তদের কারণে সরকার কৃষির প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছে না। কৃষিকে গুরুত্ব সহকারে দেখা ও প্রান্তিক কৃষকদের রক্ষা করার ক্ষেত্রে সরকারকে বিশেষ পরিকল্পনা নিতে হবে। তা না-হলে আমাদের প্রতিদিন এ ধরনের আত্মহত্যার কথা শুনতে হবে।

সোহরাব হাসান বলেন, ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার বন্ধ করা দরকার। উত্তরাঞ্চল মরূকরণের দিকে যাচ্ছে। এই সংকট থেকে বের হয়ে আসতে যৌথ নদীগুলোতে বাংলাদেশের পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করে নিতে হবে।