'অনেকদিন ভালো খাওন খাই না। যহন উদ্যান আর টিএসসি দিয়া ঘুরি, ভাইয়া-আপুগো ভালো ভালো খাইতে দেহি। তাগো কাছে খাইতে চাইলে অনেক সময় খাওন দেয়, আবার খেদাইয়া দেয়। আইজকা আমারে খেদায় নাই, ডাইকা খাওন দিছে। অনেকদিন পর ভালো খাবার খাইলাম...।' ইফতারি হাতে নিয়ে কথাগুলো যেন এক নিঃশ্বাসে বলে ফেলল পথশিশু পুতুলি। সে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে থাকে মা-বাবা আর ছোট ভাইয়ের সঙ্গে। গতকাল বৃহস্পতিবার ইফতারের সময় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে 'বাংলাদেশ বাউলমনা সংগীত সংঘ' ও 'ইয়াং রাইডার্স ক্লাব' আয়োজিত পথশিশুদের সঙ্গে ইফতার মাহফিলে অংশ নেওয়ার সময় তার সঙ্গে কথা হয়।

ইফতার মাহফিলে পুতুলি ছাড়াও কথা হয় তার ছোট ভাই নয়ন, মারিয়া, শিউলি, আমিনা ও জীবনের সঙ্গে। তারা জানায়, অনেকদিন ভালোমন্দ খাওয়া হয় না। ইফতারি পেয়ে তারা অনেক খুশি। নিজের আনন্দ প্রকাশ করতে এর বেশি বাক্য ব্যবহার করা যায়, তা বোধহয় ওদের জানা নেই। তবে ওদের চোখেমুখে খুশির ঝলক আর উৎসাহ নিয়ে বলা দুটি বাক্যই যেন হাজার কথার সমান।

এই ইফতার আয়োজনের সার্বিক সহযোগিতায় ছিল ইফি অ্যান্ড নয়ন ফ্যাশন পয়েন্ট, রেয়ার সেন্স, ইন্টিগ্রেটেড রিসার্চ সেন্টার, আপন ওয়েডিং ও মেসার্স শরিফ কনস্ট্রাকশন।

ইফতারে আগত অতিথি ইন্টিগ্রেটেড রিসার্চ সেন্টারের চিকিৎসক ডা. হুমায়ুন কবির বলেন, রমজান আমাদের সংযমের শিক্ষা দেয়, সবাইকে নিয়ে ভালো থাকার শিক্ষা দেয়। রমজানের শিক্ষা নিয়ে আমাদের একে অপরকে সাহায্য করার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। এই ইফতার মাহফিল আমাদের সে কথাই মনে করিয়ে দিয়েছে।

বাউলসংগীত শিল্পী রাজু মণ্ডল বলেন, সমাজে এক শ্রেণির মানুষ পেট পুরে খাবে, আরেক শ্রেণির মানুষ না খেয়ে কিংবা অর্ধাহারে থাকবে; একজন মানুষ হিসেবে তা আমাকে পীড়া দেয়। হয়তো সবার সমস্যা একেবারে দূর করে দেওয়া সম্ভব নয়। যদি একটা দিনের জন্যও এসব মানুষের মুখে কিছুটা খাবার তুলে দিতে পারি, এটাই হবে এ আয়োজনের সাফল্য।

আয়োজকরা জানান, পাঁচ বছর ধরে তারা নিয়মিতভাবে পথশিশুদের ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে আসছেন। সেই ধারাবাহিকতায় এবারও ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। এবার অন্তত ১৫০ পথশিশু ও ছিন্নমূল মানুষের মাঝে ইফতারি বিতরণ করা হয়েছে।

ইফতার মাহফিল আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক আপেল মাহমুদ বলেন, আমাদের যতটুকু সামর্থ্য রয়েছে, এর মধ্য থেকেই আমরা এসব পথশিশু এবং ছিন্নমূল মানুষের পাশে দাঁড়াব। নিজের অবস্থান থেকে এসব মানুষের পাশে সবার দাঁড়ানো উচিত। তাহলে সমাজে আর কোনো মানুষ না খেয়ে কষ্ট পাবে না। সদস্য সচিব ও ইয়াং রাইডার্স ক্লাবের সভাপতি আহসান হাবীব দিনার বলেন, রমজান আমাদের ভ্রাতৃত্ববোধ ও সমাজের মানুষের প্রতি দায়িত্ববোধ শেখায়। এ ছাড়া এই সমাজের মানুষ হিসেবে অন্যদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। সেই দায়বদ্ধতা থেকে পাঁচ বছর ধরে আমরা এ ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে আসছি। সামনে আমাদের লক্ষ্য রয়েছে এসব পথশিশুর মাঝে ঈদ উপহার সামগ্রী বিতরণ করা।

ইফতার মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন কবি সুজাউদ্দিন কায়সার, কবি কামরুজ্জামান, কবি মাশরুরা লাকী, সাংবাদিক হাসান খান, সমাজসেবক নজরুল ইসলাম মিশা, শেখর, বেহাল মিলন, ফকির মিলন, দর্পন জামিল, অভিলাষ দাস, বলাকা সাইদুল, সাইফুল আলম, জাহিদ, বাউল শিল্পী জাহাঙ্গীর প্রমুখ।