তেঁতুলতলা মাঠের দেয়ালের আড়ালে ঢাকা পড়েছে শিশুর স্বপ্ন। প্রতিবাদ ও আপত্তির মুখে শেষ পর্যন্ত রাজধানীর কলাবাগানের এই মাঠের উত্তর পাশের পুরো এলাকাজুড়ে দেয়াল তৈরির কাজ শেষ করলো পুলিশ। মাঠের এক পাশে সামান্য কিছু জায়গা খালি রাখা হয়েছে। ওই পাশ দিয়ে মাঠে প্রবেশ করা যায়। বুধবার রাতে দেয়াল তৈরির কাজ শেষ করা হয়েছে। 

অর্ধশতাব্দী ধরে যে মাঠে প্রজন্মের পর প্রজন্ম খেলে বেড়ে উঠেছে, সেই মাঠ ফিরে পেতে কয়েকদিন ধরেই প্রতিবাদে শামিল হন আটককাণ্ডের সেই সৈয়দা রত্নাসহ দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা। আন্দোলনে হাতে হাত রাখেন পরিবেশকর্মী, সংস্কৃতিকর্মীসহ অগণিত মানুষ। এত এত মানুষকে পাশে পেয়ে শিশুরাও হারিয়ে যায় পুরোনো স্মৃতিতে। ব্যাট-বল হাতে মেতে ওঠে ক্রিকেট খেলায়। পড়ন্ত বিকেলে মাঠে পাশের দেয়ালে লেখা হয়, 'তেঁতুলতলা মাঠে শিশুরা খেলবে, থানা নয়'। টানিয়ে দেওয়া হয় নতুন সাইনবোর্ড। তবুও শঙ্কা কাটেনি। প্রতিবাদের মধ্যেই শেষ পর্যন্ত মাঠটিতে দেয়াল তৈরির কাজ শেষ করলো পুলিশ। 


বুধবার বিকেলে তেঁতুলতলা মাঠে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে মাঠ শিশু-কিশোরদের ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন মানবাধিকার, পরিবেশ আন্দোলন ও সাংস্কৃতিককর্মীরা। অন্যথায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ঘেরাওসহ কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তারা।

এছাড়া মাঠে দেয়াল নির্মাণ বন্ধে গতকাল সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন আন্দোলনকারীরা। বৈঠক শেষে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমরা একটি জায়গা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে দেখিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটি চিঠি দেব। মন্ত্রী জানিয়েছেন- সেই চিঠি তিনি পৌঁছে দেবেন। মন্ত্রী আমাদের হতাশ করেননি। আমরা কিছুটা আশা পাচ্ছি।

প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, তেঁতুলতলা কখনও মাঠ ছিল না, এটা পরিত্যক্ত সম্পত্তি ছিল, সেজন্য সিদ্ধান্ত হয়েছে থানা নির্মাণের। এখন বিকল্প জায়গা পেলে অন্য স্থানে থানা করার বিষয় বিবেচনা করা হবে। তবে নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, তেঁতুলতলা মাঠ কখনোই পুলিশের ছিল না, এখনও নেই। মাঠ ফিরে পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা আসে গতকালের কর্মসূচি থেকে।

দু'পক্ষের অনড় অবস্থানে স্থানীয়দের শঙ্কা, মাঠ সংকটের এ নগরীতে মানুষের প্রতিবাদ জয়ী হবে, নাকি আরও একটি প্রজন্ম হারিয়ে যাবে সবুজের ছোঁয়া থেকে।