রেলওয়ের টিকিট কালোবাজারি চক্রের খোঁজে র‍্যাবের অনুসন্ধানে টিকেট কালোবাজারি চক্রের ‘হোতা’ সহজের কর্মী সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার মো. রেজাউল করিমসহ (৩৮) দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব-১।

গত মঙ্গলবার ঢাকার কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে আটক হওয়ার পর রেজাউল করিম নামের ওই কর্মীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে বলে সহজের তরফ থেকে জানানো হয়েছে।

আর যেভাবে ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি করতেন রেজাউল সে বিষয়ে বিকালে কারওয়ানবাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত তথ্য জানানো হয়েছে।

র‍্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন জানান, ছয় বছর ধরে রেলওয়ের টিকিট বিক্রির কার্যক্রমে জড়িত রেজাউল করিম। প্রতিবছর ঈদে ২ থেকে ৩ হাজার ট্রেনের টিকিট সরিয়ে নিতেন তিনি। যা কালোবাজারিতে বিক্রি করে আয় করতেন ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা। 

সহজ লিমিটেডের সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার হওয়ায় রেজাউল করিমের এজন্য অনলাইন টিকিটের সার্ভারে প্রবেশেও তার কোনো বাধা ছিল না বলেও জানান তিনি। 

আর এ সুযোগকেই কাজে লাগাতেন তিনি। সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার সুবাদে সার্ভার থেকে টিকিট বুক করে কিনে নিতেন রেজাউল। 

তার দাবি, রেলওয়ের বিভিন্ন ভিআইপিদের টিকিটের আবদার মেটানোর সুযোগে নির্বিঘ্নে তিনি এ কাজ করে আসছিলেন।

জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে র‍্যাব-১ এর কর্মকর্তা বলেন, পরিচিতজনদের কাছে ৫০০ টাকা লাভে টিকিট বিক্রয় করতেন রেজাউল। এছাড়া অন্যদের কাছে নির্ধারিত দামের চেয়ে এক হাজার থেকে ১৫০০ টাকা বেশি দামে টিকিট বিক্রি করতেন। 

র‍্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, রেজাউল পরিচিতজনদের মাধ্যমে অবৈধ উপায়ে টিকিট প্রত্যাশীদের একটি বড় শ্রেণি গড়ে তুলেছেন। এর বাইরেও কালোবাজারিতে তার টিকিট বিক্রেতা রয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে তার এ সংক্রান্ত বিভিন্ন যোগাযোগ চলতো বিভিন্ন অ্যাপসে। আর মোবাইল ব্যাংকিংয়ের পরিবর্তে লেনদেন করতেন নগদ অর্থে।

র‍্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, রেজাউল গত ৬ বছর ধরে ট্রেনের টিকিটিংয়ের সঙ্গে জড়িত। সহজ ডটকমের আগে অনলাইনে টিকিট বিক্রির দায়িত্বরত প্রতিষ্ঠান সিএনএস বিডিতেও কর্মরত ছিলেন তিনি। অভিজ্ঞকর্মী হিসেবে সহজ ডটকম তাকে নিয়োগ দেয়।

গত মার্চের শেষে বাংলাদেশ রেলওয়ের টিকেটি বিক্রির দায়িত্ব পায় সহজ-সিনেসিস-ভিনসেন জয়েন্ট ভেঞ্চার। এর আগে দেড় যুগ কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেম (সিএনএস) এ দায়িত্বে ছিল।

সহজ দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই অনলাইনে টিকেট কিনতে গিয়ে সমস্যায় পড়ার অভিযোগ করে আসছেন যাত্রীরা। ঈদের অগ্রিম টিকেট বিক্রির সময়ও অনলাইনে টিকেট না পাওয়া এবং নির্ধারিত সময়ের আগেই টিকেট মেলার মত বিষয়ও আলোচনায় এসেছে।

রেলমন্ত্রী দাবি করেছিলেন, এখন সবার এনআইডি দেখে যেভাবে টিকেট বিক্রি হচ্ছে, তাতে কালোবাজারির কোনো সুযোগই নেই। তার মধ্যেই খোদ ভেন্ডরের কর্মীর কালোবাজারির অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়ার খবর এল।

গ্রেপ্তার রেজাউল করিমকে র‍্যাব সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার বললেও সহজ-সিনেসিস-ভিনসেন জেভি’র জনসংযোগ বিভাগের ব্যবস্থাপক ফারহাত আহমেদ বলছেন, স্টেশন সাপোর্ট স্টাফ হিসেবে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।

তিনি বলেন, আটক রেজাউল গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ রেলওয়ের টিকেট বিক্রয় সংক্রান্ত সাপোর্টের কাজে নিয়োজিত ছিলেন। সহজ-সিনেসিস-ভিনসেন জেভি গত ২১ মার্চ তাকে নিয়োগ দেয়।