ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জোবায়ের আহম্মেদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু দেলোয়ার হোসেন সাঈদী (২৪)। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নাম ব্যবহার করে দীর্ঘদিন সবুজবাগ ও মাদারটেক এলাকায় চাঁদাবাজি এবং সন্ত্রাসী কর্মাকাণ্ড চালিয়ে আসছিলেন সাঈদী।

সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে বুধবার রাত ৩টার দিকে সবুজবাগ এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-৩-এর একটি দল। অভিযান শেষে তাকে নিয়ে র‌্যাব সদস্যরা ফেরার পথে জোবায়েরের নেতৃত্বে দেড় শতাধিক ব্যক্তি পথরোধ করে। মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকার দিয়ে রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে সাঈদীকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। অভিযানে বাধা দেওয়ার অভিযোগে এর পর জোবায়েরকেও গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের হামলায় র‌্যাবের দুই সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানানো হয়। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

র‌্যাব-৩-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ সমকালকে বলেন, সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজির অভিযোগে সাঈদীকে গ্রেপ্তার করার পর তাকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন জোবায়ের। অভিযানে বাধা দেওয়ার পাশাপাশি ফেসবুক লাইভে অপ্রাসঙ্গিক কথা বলতে থাকেন। সাঈদীর চাঁদাবাজি নিয়ে একাধিক পত্রিকায় এর আগে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এলাকার লোকজন তাদের কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ।

র‌্যাবের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাঈদীকে গ্রেপ্তারের সময় তার কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, দুই রাউন্ড গুলি ও ৫৭৮ পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের পর সাঈদী চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন র‌্যাবের কাছে।

সরকারি কাজে বাধা ও র‌্যাবের ওপর হামলার অভিযোগে জোবায়েরের বিরুদ্ধে পৃথক মামলা হয়েছে। ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে তাকে। এ ছাড়া সাঈদীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, অস্ত্র ও মাদকের মামলা হয়েছে।

জানা গেছে, সাঈদী এক সময় সবুজবাগ থানা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। চাঁদাবাজি ও মাদকের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ২০১৯ সালে তাকে পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এর পর তিনি আর কোনো পদে আসতে না পারলেও ছাত্রলীগের পরিচয় দিতেন। চলাফেরাও ছিল ছাত্রলীগের নেতাদের সঙ্গে।

এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরেই সাঈদী ও তার সাঙ্গোপাঙ্গরা এলাকায় চাঁদাবাজি করে আসছিলেন। চাঁদা না পাওয়ায় সম্প্রতি এক চা ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলামকে পিটিয়ে গুরুতর জখম করা হয়। ওই ঘটনায় তার বিরুদ্ধে সবুজবাগ থানায় মামলাও হয়েছে। ওই হামলায় সাঈদী ছাড়াও তার সহযোগী কাউসার, বাদশা, আশিক, রিমন, সেলিমসহ আরও কয়েকজন জড়িত ছিলেন। এ ছাড়া এলাকার বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে মাসিক নির্দিষ্ট হারে চাঁদা তোলেন সাঈদী ও তার রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষক জোবায়ের। বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচির নাম করেও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় এবং দাবি করেন তারা। এলাকার ফুটপাত বাণিজ্যে তাঁর সিন্ডিকেট বড় ধরনের প্রভাব রেখে আসছে।

সবুজবাগ থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন্স) আমিনুল বাশার বলেন, সাঈদীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির দুটি নতুন মামলা হয়েছে।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান বলেন, সাঈদী ছাত্রলীগের কেউ নন। বর্তমানে তার কোনো পদ-পদবি নেই। ছাত্রলীগ নেতা জোবায়েরের ঘনিষ্ঠজন তিনি। শুনেছি সাঈদীকে র‌্যাব গ্রেপ্তার করতে গেলে সেখানে কোনো একটি ঝামেলা তৈরি হয়। ওই ঘটনায় জোবায়েরও গ্রেপ্তার হন।

বিষয় : দক্ষিণ ছাত্রলীগ জোবায়ের আহম্মেদ

মন্তব্য করুন