সাইফুল ইসলাম মনছুর। চাকরি করতে গিয়েছিলেন দুবাই। সেখানে গিয়ে স্বর্ণের নেশায় ডুবে চোরাচালানে মজেন। চট্টগ্রামের রাউজানের পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের মনছুর দেশে গড়ে তোলেন স্বর্ণবার চোরাচালানের দুর্ধর্ষ সিন্ডিকেট। ২০১৯ সালে চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরে ধরা পড়া ১৫ কেজি স্বর্ণবারের মালিকও এই মনছুর। দুবাই থেকে পাঠানো স্বর্ণবারের চালান শাহ আমানতে বুঝে নিতেন আলাউদ্দিন। বিমানবন্দর থেকে আলাউদ্দিন সেগুলো নগরের হিলভিউ আবাসিক এলাকার ২ নম্বর রোডের গোল্ডেন হাউজ ভবনের রাজিবুল ও মোক্তারের বাসায় পৌঁছে দিতেন। তাঁদের দু'জনের হিলভিউ আবাসিক এলাকার বাসার 'গুদাম' থেকে সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়া হতো চোরা স্বর্ণবার!

স্বর্ণবার চোরাচালান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি চট্টগ্রাম মেট্রো ও জেলার ইন্সপেক্টর মুহাম্মদ শরীফ বলেন, দীর্ঘ তদন্ত শেষে মনছুরের পুরো চক্রকে শনাক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। রাউজান ও ফটিকছড়ির আসামিদের গ্রামের বাড়িতে অভিযানও চালানো হয়েছে।

মনছুরের ৬ সদস্যের চোরাচালান চক্র: সিআইডির তদন্তে উঠে এসেছে, ১৫ কেজি স্বর্ণবার চোরাচালানের মূল হোতা মনছুরের চক্রে আছে রাউজান ও ফটিকছড়ির ৬ চোরাকারবারি। মনছুরের সহযোগী আলাউদ্দিন, রাজিবুল ইসলাম রাজীব ও মোক্তার। তাঁদের সবার বাড়ি রাউজানে। দেশে অবস্থানরত রাজীব চট্টগ্রাম বিমানবন্দর কেন্দ্রীয় স্বর্ণ চোরাচালান চক্রের সক্রিয় সদস্য। তাঁর সহযোগী মোক্তার ও আলাউদ্দিন। তাঁরা অন্য আরেকটি স্বর্ণবার চোরাচালান মামলার আসামি। এ ব্যাপারে তাঁরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে দুবাই থেকে শুল্ক্ক ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন যাত্রীর বিমানের টিকিট ও নগদ টাকার প্রলোভন দিয়ে স্বর্ণ চোরাচালানের কাজ করে আসছিলেন তাঁরা।

পরিচয়ের সূত্র ধরে চোরাচালান চক্রে জয়নাল: অভিযোগপত্রে সিআইডি উল্লেখ করে, ২০১৮ সালের জয়নাল আবেদীন সংযুক্ত আরব আমিরাতে যান। আমিরাতে যাওয়ার পর আসামি জয়নাল জনৈক আমজাদের অধীনে চাকরি শুরু করেন। তাঁর সঙ্গে ফটিকছড়ির নানুপুর এলাকার ডালকাটা গ্রামের সজীবের পরিচয় হয়। সজীব রাউজানের মনছুরের সঙ্গে জয়নালকে পরিচয় করিয়ে দেন। জয়নাল দেশে আসার পর সজীব ও মনুছর মালপত্রগুলো বিমানবন্দরে এক লোক ফোন দিলে তাঁকে দিয়ে দিতে বলেন। জয়নালকে আসা-যাওয়ার বিমানের টিকিটসহ কিছু টাকা দেন তারা। পরে মনছুরের দেওয়া দুটি ছোট লাগেজ নিয়ে দুবাই থেকে ২০১৯ সালের ১৮ অক্টোবর শাহ আমানত বিমানবন্দরে নামেন জয়নাল। আলাউদ্দিন বিমানবন্দরের বাইরে স্বর্ণবারগুলো নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এভাবে পরিচয়ের সূত্র ধরে স্বর্ণবার চোরাচালানে জড়িয়ে পড়েন জয়নাল।

চক্রের কার বাড়ি কোথায়: ১৫ কেজি স্বর্ণবার চোরাচালানের হোতা মনছুর রাউজানের পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মগদাই এলাকার হাজি জহির মোল্লার বাড়ির মো. হাছানের ছেলে। অপর আসামি রাজিবুল ইসলাম রাজীব রাউজানের পশ্চিম রাউজানের চোরা বটতল এলাকার জুনু ড্রাইভারের ছেলে। আসামি মোক্তার হোসেন একই উপজেলার মগদাই এলাকার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত এজলাস মিয়ার ছেলে। আসামি আলাউদ্দিন রাউজানের জানালীহাট সুলতানপুর এলাকার নুরুল আলমের ছেলে। আসামি জয়নাল আবেদীন ফটিকছড়ির সন্ন্যাসীর হাট এলাকার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের গোপালঘাটা এলাকার বাসিন্দা। আসামি মোহাম্মদ সজীব ফটিকছড়ির নানুপুর ইউনিয়ের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ডালকাটা সুজাত আলী মিস্ত্রিবাড়ির বাসিন্দা। তাঁদের মধ্যে রাজিবুল, মোক্তার ও আলাউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে মনছুর ও সজীব দুবাইয়ে আছেন।

যেভাবে উদ্ধার ১৫ কেজি স্বর্ণবার: ২০১৯ সালের ১৮ অক্টোবর চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তজার্তিক বিমানবন্দরে শারজাহ থেকে নামে এয়ার অ্যারাবিয়ার ফ্লাইট। সেই বিমানে আসা চোরাচালান চক্রের সদস্য জয়নাল বিমানবন্দরের গ্রিন চ্যানেল অতিক্রম করার সময় তাঁকে চ্যালেঞ্জ করা হয়। তারপর চার্জলাইটের ভেতর থেকে ১৫ কেজি ১৬৩ গ্রাম ওজনের ১৩০টি স্বর্ণের বার পাওয়া যায়। যার মূল্য সাড়ে ছয় কোটি টাকা। সঙ্গে ১২টি মোবাইল ফোনসেট ও আড়াই হাজার মেমোরি কার্ড পাওয়া যায়। এ ঘটনায় একমাত্র জয়নালকে আসামি করে পতেঙ্গা থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করা হয়। সিআইডি তদন্ত করে স্বর্ণ চোরাচালান মামলায় দেশ ও বিদেশের ৬ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়।