- রাজধানী
- শুরুতেই ক্রেতার আস্থা অর্জন করতে চেয়েছি
শুরুতেই ক্রেতার আস্থা অর্জন করতে চেয়েছি

বিদ্যুৎ কুমার ভৌমিক, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর, বসুন্ধরা হাউজিং
দেশের মানুষের আবাসন সমস্যার সমাধানে প্রায় তিন যুগ ধরে কাজ করছে বসুন্ধরা হাউজিং। বসুন্ধরার পরিকল্পনার পাশাপাশি আবাসন খাতের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা নিয়ে সমকালের সঙ্গে কথা বলেছেন বসুন্ধরা হাউজিংয়ের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর এবং হেড অব ডিভিশন (সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং) বিদ্যুৎ কুমার ভৌমিক।
- আবাসন খাতের বর্তমান অবস্থা কেমন?
-- করোনার প্রাদুর্ভাব, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ডলারের দামে অস্থিরতা সব মিলিয়ে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে আবাসন খাত। করোনার আগে আবাসন খাতের ব্যবসা ভালো ছিল। কিন্তু ভবন নির্মাণে ব্যবহূত উপকরণ রড, সিমেন্ট, ইট, বালু প্রভৃতির দামই বিগত কয়েক মাস ধরে বাড়ছে। গড়ে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে। এই মূল্যবৃদ্ধির চাপটা শেষমেশ ক্রেতা তথা ভোক্তার কাঁধেই চাপে। এক্ষেত্রে স্বভাবতই বেচাবিক্রি কমে। আর একটা সমস্যা তৈরি হয় সেটি হচ্ছে, অনেকে নির্দিষ্ট দামে ফ্ল্যাট বুকিং দিয়েছেন, নির্দিষ্ট সময় পর তারা ফ্ল্যাট বুঝে পাবেন।
কিন্তু হঠাৎ করে ২ থেকে ৫ শতাংশ নয়, ৩০-৩৫ শতাংশ দাম বাড়লে আবার ব্যবসায়ীর জন্য প্রজেক্ট সফলভাবে শেষ করা ভীষণ কঠিন হয়ে পড়ে। নির্মাণসামগ্রীর দাম বাড়ার এ প্রবণতা সত্যিকার অর্থেই আবাসন খাতের জন্য নেতিবাচক বার্তা বহন করে। সরকারের নীতিনির্ধারকরা নিশ্চয়ই এ বিষয়গুলো দেখছেন, নির্মাণসামগ্রীর দাম সহনীয় না রাখতে পারলে এ খাতের ব্যবসা মখু থুবড়ে পড়তে পারে।
- আসন্ন বাজেটে আপনাদের কোনো পর্যবেক্ষণ কিংবা প্রস্তাবনা?
-- বাজেট নিয়ে আমাদের আবাসন খাতের সংস্থা রিহ্যাব প্রতি বছরই কাজ করে থাকে। এ বছরও নিশ্চয় রিহ্যাব থেকে সরকারের কাছে দাবি-দাওয়া থাকবে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, খুব বেশি যে সরকারের তরফ থেকে সহযোগিতা পাওয়া যায় তা কিন্তু নয়। এবারের বাজেটে নির্মাণসামগ্রীর দাম সহনীয় রাখতে সুনির্দিষ্ট উদ্যোগ নিতে হবে। নির্মাণসামগ্রীর ওপর থেকে আরোপিত ট্যাক্স-ভ্যাট কমিয়ে হলেও দাম কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে।
আরেকটি বিষয়, দুই বছর আগেও আবাসন খাতে বিনিয়োগে টাকার উৎস জানতে চাওয়া হতো না। এ খাতে অপ্রদর্শিত টাকা বিনিয়োগের অবাধ সুযোগ ছিল। আমরা মনে করি, আবাসন খাতকে টিকিয়ে রাখতে এ সুযোগ আরও কয়েক বছর রাখা উচিত। সরকার এ সুযোগ রাখলে আবাসন খাত ফের চাঙ্গা হয়ে উঠবে, যা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্যই মঙ্গলজনক হবে।
- আবাসনে বসুন্ধরা কোন দিকে বেশি গুরুত্ব দেয়?
-- ১৯৮৭ সাল থেকে বসুন্ধরা হাউজিং কোম্পানি হিসেবে আবাসন নিয়ে কাজ করছে। গ্রাহকের আস্থা অজর্ন করে তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে সুনামের সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা করছি আমরা। শুরুতে আমরা প্লট বিক্রি করতাম। পরে আমরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রজেক্ট চালু করি। আমরা যখন শুরু করি তখন কিন্তু সংগঠিত আবাসন কোম্পানি খুব বেশি ছিল না। সারাদেশে বিশেষ করে ঢাকা শহরের আবাসন সমস্যা সমাধানে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে বসুন্ধরাকে বলা যায় পথিকৃৎ। বারিধারায় কূটনৈতিক জোনের কাছে যে বসুন্ধরা আবাসিক প্রকল্প, এত বড় আধুনিক ও সফল প্রকল্প পুরো ঢাকা শহরেই নেই। আমরা যদি বলি, বসুন্ধরা হাউজিং দেশের ১ নম্বর আবাসন কোম্পানি সেটি মোটেও অত্যুক্তি হবে না।
প্রকল্পটি রাজউক অনুমোদিত ১১ হাজার বিঘা, আরও ৪ হাজার বিঘা বর্ধিত করার পরিকল্পনা নিয়ে আমরা কাজ করছি। রাজধানীতে একেকটি প্রকল্পে ১৫ হাজার বিঘা এটি কিন্তু যেনতেন কথা নয়। আমরা শুরুতেই ক্রেতার আস্থা অর্জন করতে চেয়েছি, আমরা নিশ্চয়তা দেই বসুন্ধরায় কেউ প্লট কিংবা ফ্ল্যাট কিনলে প্রতারিত হবেন না। সময়মতো প্লট বা ফ্ল্যাট বুঝে পাবেন। অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যেখানে হয়তো প্লট কিনেছেন, কিন্তু জীবদ্দশায় সেখানে বাড়ি তৈরি করতে পারবেন কিনা তার নিশ্চয়তা নেই। আমাদেরও যে ত্রুটি-বিচ্যুতি নেই তা নয়, কিন্তু বসুন্ধরা শুরু থেকেই এ বিষয়ে সচেতন থেকেছে যেন স্বার্থ সংরক্ষিত থাকে। পাশাপাশি আমরা আমাদের আবাসন প্রকল্পে ভোক্তাদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করি। তাঁরা যেন নির্বিঘ্নে সব সময় চলাফেলা করতে পারেন, পরিবার নিয়ে নিরাপদ থাকেন। প্লট কিংবা ফ্ল্যাট বুঝে পাওয়ার নিশ্চয়তা এবং নিরাপত্তা এবং আদর্শ আবাসন বলতে যা বোঝায় আমাদের প্রকল্পে গ্রাহক সে অভিজ্ঞতা পান- এ বিষয়গুলোই আমাদের প্রতি ভোক্তাদের আস্থার অন্যতম কারণ বলে বিশ্বাস করি।
-আপনাদের 'টার্গেট কাস্টমার' কারা?
-- আমরা এই সেক্টরে প্রায় ৩৫ বছর আছি। আমরা যখন শুরু করি তখন গুলশান, বনানী, ধানমন্ডি ছিল উচ্চবিত্তদের এলাকা। কিন্তু আমাদের প্রকল্প শুরুই করলাম এমনভাবে, যেন মধ্যবিত্তরা আমাদের প্রকল্পে তাঁর স্বপ্টেম্নর ঠিকানা খুঁজে পান। আমাদের বসুন্ধরা প্রকল্পে এখন যে দাম, ৩৫ বছর আগে সেটি কোথায় ছিল ভাবুন! এখন মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে, আবাসন খাতে চাহিদাও তৈরি হয়েছে। দাম বাড়লেও কিন্তু মধ্যবিত্তের নাগালের মধ্যেই রয়েছে।
- প্লট ক্রয় করে প্রতারিত হয়েছেন, দাম শোধ করেও বছরের পর বছর ঘুরে কাঙ্ক্ষিত প্লটটি বুঝে পাননি- এ রকম অনেক উদাহরণ আছে। অনেক ভূঁইফোঁড় কোম্পানি এখনও আছে যারা এ ধরনের প্রতারণার সঙ্গে জড়িত। মানুষ আসলে কীভাবে বুঝবে কে প্রতারক, কে প্রতারক না?
-- অধিকাংশ মানুষ কিন্তু তাঁর সারাজীবনের কষ্টার্জিত অর্থে প্লট কিংবা ফ্ল্যাট কিনতে চান। ফলে এ খাতে বিনিয়োগের নিরাপত্তা সবাই আগে খুঁজবে- এটাই স্বাভাবিক। এ ক্ষেত্রে আমরা বসুন্ধরা এত বছরে একটা জায়গা তৈরি করতে পেরেছি, আমাদের থেকে কেউ প্লট কিংবা ফ্ল্যাট কিনলে প্রতারিত হবেন না। এখানে কোম্পানির রেপুটেশনটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
মন্তব্য করুন