বিএনপির আমলে মূল্যস্ফীতি অনেক বেশি ছিল বলে মন্তব্য করেছেন কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেছেন, ‘বর্তমান সরকার কৃষিবান্ধব বলে গত ১৩ বছরে দেশে কোনো মঙ্গা হয়নি। এ সরকার দেশ থেকে মঙ্গাকে চিরতরে দূর করে দিয়েছে। এরপরও খাদ্যদ্রব্যে মূল্যস্ফীতি একটু বাড়লে বিরোধিতা করা হয়। ২০০৯ সালে আমরা যখন ক্ষমতায় আসি তখন মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ শতাংশ এর বেশি। বিগত ১৩ বছর ধরে একটানা আমরা মূল্যস্ফীতির হার ৬ শতাংশ এর নিচে রেখেছি। সাম্প্রতিক সময়ে করোনা পরিস্থিতি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ বৈশ্বিক সংকটের কারণে মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশ ছাড়িয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ অনেক উন্নত দেশে মূল্যস্ফীতির হার বাংলাদেশের চেয়ে বেশি।’

শনিবার সকালে রাজধানীর খামারবাড়িতে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) মিলনায়তনে 'বছরব্যাপী পুষ্টিকর ও উচ্চমূল্যের ফল উৎপাদন' শীর্ষক সেমিনারে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ একাডেমি অব এগ্রিকালচার (বাগ), কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এবং কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশন এ সেমিনারের আয়োজন করে।

ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘বিএনপি আন্দোলন করে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটাতে পারবে না। সরকারের পতন ঘটাতে চাইলে নির্বাচনের মাধ্যমে করতে হবে। ক্ষমতার মালিক দেশের জনগণ। জনগণ আমাদেরকে ভোট না দিলে আমরা ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে চলে যাব। কিন্তু জ্বালাও-পোড়াও এর আন্দোলন করে বিএনপি বর্তমান সরকারের পতন ঘটাতে পারবে না, কোনোদিন ক্ষমতায়ও আসতে পারবে না।’

কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। এই মুহূর্তে খাদ্য নিরাপত্তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সারা বিশ্বে খাদ্য সংকট হচ্ছে, মানুষ সেটি মোকাবিলা করছে। এক্ষেত্রে অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ ভাল অবস্থায় রয়েছে।’

সারের প্রসঙ্গে ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘গ্যাস না পেলেও দেশে কোনভাবেই সারের সংকট হবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সারের বিষয়টি নিয়ে আমার কথা হয়েছে। গ্যাস না পেলে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আমদানি করে কৃষকদের সরবরাহ করা হবে। সেখানে (আন্তর্জাতিক বাজারে) সারের দাম বেশি হলেও দেশে যাতে সারের সংকট না হয় সে বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।’

বাগের প্রেসিডেন্ট ও ইমেরিটাস সাইন্টিস্ট কাজী এম. বদরুদ্দোজার সভাপতিত্বে বিএআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ মো. বখতিয়ার, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বেনজীর আলম, কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক দেবাশীষ সরকার, কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক নাথুরাম সরকার, বাগের জেনারেল সেক্রেটারি এমএ মজিদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

পুষ্টিকর ও উচ্চমূল্যের ফলের ওপর পৃথক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বছরব্যাপী ফল উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক মেহেদী মাসুদ এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আব্দুর রহিম। প্রবন্ধে বাংলাদেশে পুষ্টিকর ও উচ্চমূল্যের ফল চাষের সম্ভাবনা তুলে ধরা হয়। স্ট্রবেরি, ড্রাগনফল, কাজুবাদাম, রাম্বুটান, লংগান, কফি, রকমেলন, আম, লিচু, মাল্টাসহ বিভিন্ন উচ্চমূল্যের ফল চাষের বিরাট সুযোগ রয়েছে এবং চাষ খুবই লাভজনক।  ১ হেক্টর জমিতে আম চাষে ৩ লাখ ৪০ হাজার, লিচুতে ৪ লাখ ৬৩ হাজার, ড্রাগনে ৫ লাখ ২৬ হাজার, মাল্টা চাষে ৬ লাখ ৬৮ হাজার টাকা নীট লাভ করা সম্ভব বলে জানান হয়।

দেশে ৮০ রকমের ২০০ জাতের ফল চাষ হয়। ফল উৎপাদনে বিরাট সাফল্য এসেছে, একইসঙ্গে আমদানির পরিমাণও বেড়েছে। চাহিদার প্রায় ৬০ শতাংশ ফল আমদানি করতে হয়, যাতে বছরে ৩০ বিলিয়ন ডলার খরচ হয় বলে প্রবন্ধে বলা হয়। অন্যদিকে, দেশে বছরে উৎপাদিত ফলের ৬০ শতাংশ উৎপাদন হয় মে-আগস্ট এই সময়ে। সেজন্য বছরব্যাপী ফল উৎপাদনে গুরুত্বারোপ করা হয়।