- রাজধানী
- পাইপলাইনে ডিজেল আসবে জানুয়ারিতে
পাইপলাইনে ডিজেল আসবে জানুয়ারিতে

ছবি: সংগৃহীত
আগামী বছরের শুরুতে ভারত থেকে পাইপলাইনে ডিজেল আসবে দেশে। সে জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিচ্ছে দুই দেশ। বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী পাইপলাইন স্থাপন প্রায় শেষ পর্যায়ে। ভারতের শিলিগুড়িতে চলছে ডিজেল সরবরাহের প্রস্তুতি। আর বাংলাদেশের পার্বতীপুর প্রস্তুত হচ্ছে ভারত থেকে আসা ডিজেল সংরক্ষণ ও সরবরাহের জন্য। একই সঙ্গে জ্বালানি তেল সরবরাহের কমিশনিং নিয়েও কাজ করছে দুই দেশ।
গত ২০ জুলাই নুমালীগড় রিফাইনারির পরিচালক (কারিগরি) ভাস্কর জ্যোতি পুকান গৌহাটিতে তাঁদের করপোরেট অফিসে ওই সময়ে সফররত বাংলাদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে জ্বালানি তেল সরবরাহ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তিনি বলেন, করোনা, বন্যার মতো কিছু দুর্যোগের কারণে পাইপলাইন স্থাপনের কাজে দেরি হয়েছে। তবে এখন পুরোদমে কাজ চলছে। কোনো ধরনের ব্যত্যয় না ঘটলে আগামী ডিসেম্বরের শেষে বা জানুয়ারিতে পাইপলাইনে তেল সরবরাহ করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে তেল সরবরাহের জন্য নুমালীগড় রিফাইনারি সম্পূর্ণ প্রস্তুত হয়ে আছে। প্রাথমিকভাবে নুমালীগড় রিফাইনারির উৎপাদন ক্ষমতার ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বাংলাদেশে সরবরাহ করা হবে। পরে ধীরে ধীরে এ পরিমাণ বাড়তে পারে। তিনি বলেন, ২০৩৫ সালের পরে ভারতে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমে আসবে। ফলে বাংলাদেশকে বেশি পরিমাণে ডিজেল সরবরাহ করতে পারবে নুমালীগড় রিফাইনারি।
ভারতের আসাম রাজ্যের গোলাঘাটে অবস্থিত নুমালীগড় রিফাইনারি। সেখান থেকে তেল আসবে প্রতিষ্ঠানটির শিলিগুড়ি টার্মিনালে। শিলিগুড়ি থেকে পাইপলাইনে বাংলাদেশের পার্বতীপুর তেল ডিপোতে ডিজেল সরবরাহ করা হবে। এ জন্য ১৩১ দশমিক ৫০ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ প্রায় শেষের পথে। পাইপলাইনের মাধ্যমে ডিজেল আমদানির বিষয়ে ২০১৮ সালের ৯ এপ্রিল বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়। ওই বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০০০ সালে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী পাইপলাইন স্থাপনের কাজ শুরু হয়। ভারতের শিলিগুড়ি থেকে পঞ্চগড় হয়ে তেল পৌঁছাবে দিনাজপুরের পার্বতীপুরের রেলহেড ডিপো পর্যন্ত। প্রাথমিকভাবে ১৫ বছর ধরে ডিজেল সরবরাহের চুক্তি হয়েছে দুই দেশের মধ্যে। প্রথম তিন বছর দুই লাখ টন, পরবর্তী তিন বছর তিন লাখ টন, এরপর চার বছর পাঁচ লাখ টন এবং বাকি পাঁচ বছরে ১০ লাখ টন জ্বালানি তেল সরবরাহ করবে নুমালীগড় রিফাইনারি। আন্তর্জাতিক বাজারদরের সঙ্গে প্রতি ব্যারেলে ৫ ডলার করে বেশি দাম দিতে হবে। যেদিন তেল সরবরাহ করবে নুমালীগড় রিফাইনারি, বাংলাদেশের পরিশোধের জন্য সেদিনকার আন্তর্জাতিক দর প্রযোজ্য হবে। বাড়তি পাঁচ ডলার দিতে হবে পরিবহন খরচ বাবদ।
প্রকল্পের আওতায় ৪৮ হাজার টন ধারণক্ষমতার ছয়টি অয়েল ট্যাঙ্ক স্থাপন করা হচ্ছে পার্বতীপুরে। একই সঙ্গে দুটো ফায়ার ওয়াটার ট্যাঙ্কও নির্মাণ করা হচ্ছে। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিপিসির পক্ষে মেঘনা পেট্রোলিয়াম ও ভারতের নুমালীগড় রিফাইনারি যৌথভাবে পাইপলাইন স্থাপন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫২০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ভারত সরকার অনুদান দিচ্ছে ৩০৩ কোটি রুপি। বাকি খরচ বাংলাদেশকে করতে হচ্ছে। মোট পাইপলাইনের মধ্যে বাংলাদেশ অংশে হবে ১২৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার এবং ভারতীয় অংশে হবে মাত্র ৫ কিলোমিটার। ১০ ইঞ্চি ব্যাসের এই পাইপলাইন উত্তরের সর্বশেষ জেলা পঞ্চগড়ে ৮২ দশমিক ১৭ কিলোমিটার, দিনাজপুরে ৩৫ দশমিক ৫ কিলোমিটার ও নীলফামারী জেলায় ৯ কিলোমিটার বসানো হবে।
প্রকল্পের পরিচালক ও মেঘনা পেট্রোলিয়ামের মহাব্যবস্থাপক টিপু সুলতান সমকালকে বলেন, প্রকল্পের কাজ চলছে। পাইপলাইন স্থাপনের কাজ শেষের পথে। আশা করা হচ্ছে, জানুয়ারি নাগাদ পাইপলাইনে তেল সরবরাহ শুরু হবে।
বর্তমানে পার্বতীপুর তেল ডিপো থেকে দেশের উত্তরাঞ্চলের কৃষিপ্রধান ১৬ জেলায় ডিজেল সরবরাহ করা হয়। রাজশাহীর বাঘাবাড়ী থেকে ট্রেনের মাধ্যমে পার্বতীপুরে তেল পাঠানো হয়। পাশাপাশি ভারত থেকেও মাঝেমধ্যে ট্রেনের মাধ্যমে তেল আসে। ভারত থেকে পাইপলাইনে ডিজেল এলে পরিবহন খরচ কম হবে। পাশাপাশি উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে নিরবচ্ছিন্নভাবে ডিজেল সরবরাহ সম্ভব হবে। বৈশ্বিক বাজারে জ্বালানি তেলের চাহিদা বেড়েছে। অনেক ক্ষেত্রে সরবরাহেও ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় নুমালীগড় থেকে উত্তরাঞ্চলের চাহিদার সমান ডিজেল আসা শুরু হলে জ্বালানি সরবরাহে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে সংশ্নিষ্টরা মনে করছেন।
মন্তব্য করুন