গৃহশ্রমিকদের সুরক্ষায় কোনো আইন নেই বাংলাদেশে। আইন না থাকার সুযোগে নিয়োগকর্তারা যখন-তখন গৃহশ্রমিকদের ছাঁটাই করছেন। এ জন্য কোনো রকম পূর্ব নোটিশ কিংবা ক্ষতিপূরণও দেওয়া হয় না। মজুরি কিংবা শ্রমঘণ্টাও নির্দিষ্ট নয়। করোনা পরিস্থিতির আগেও এ প্রবণতা ছিল। করোনার বাস্তবতায় পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়ে উঠেছে। করোনাকালে ভাইরাসের সংক্রমণ এড়ানো এবং আর্থিক কৃচ্ছ্রের অংশ হিসেবে অনেক পরিবারই গৃহশ্রমিকদের ছাঁটাই করেছে।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) এক প্রতিবেদনে এই পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়েছে। যুব কর্মসংস্থানে বৈশ্বিক প্রবণতা-২০২২ নামে এ প্রতিবেদনটি জেনেভায় আইএলওর সদর দপ্তর থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার প্রকাশ করা হয়।

প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সম্পর্কে আরও বলা হয়, গৃহশ্রমিকদের বড় একটি অংশ করোনায় কাজ হারিয়েছে। এ কারণে মৌলিক প্রয়োজন মেটানোর মতো নূ্যনতম আয় তাদের ছিল না। কোনো কোনো শ্রমিক সাময়িক এবং কাউকে কাউকে লম্বা ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। এসব শ্রমিক খাদ্য এবং আশ্রয়হীন হয়ে পড়েন। গৃহশ্রমিকদের কোনো সংগঠন নেই। সংগঠন না থাকা এবং কার্যকর নজরদারি ও সুরক্ষা ব্যবস্থার অনপুস্থিতিতে গৃহশ্রমিকদের অস্তিত্ব আরও নাজুক করে তুলেছে। করোনাকালে গৃহস্থালি শ্রমিকদের ঘর থেকে বের হতে দেওয়া হয়নি। পরিবারের সদস্যদের আসতে দেওয়া হয়নি। এমনকি ওই সময়ও শ্রমিকদের স্বাস্থ্যসেবায় প্রয়োজনীয় চিকিৎসার সুযোগ ছিল না। কাজের নিরাপত্তার অভাব তাদের ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনার ক্ষতি কাটিয়ে কর্মসংস্থান বাড়াতে অনেক দেশই বিভিন্ন ধরনের নীতি সহায়তা দিয়েছে। বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে তৈরি পোশাক খাতে শ্রমিকদের নিয়মিত মজুরি পরিশোধ এবং কর্মসংস্থান ঠিক রাখতে ব্যবস্থা নিয়েছে। বাংলাদেশে যুব কর্মসংস্থানের ধরন সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশটিতে এখনও যুব কর্মসংস্থানে কৃষি, বনায়ন এবং মৎস্য খাতের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। মোট ২৮ শতাংশ যুবা এই কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত। অবশ্য সবচেয়ে বেশি ইকুয়েডরের ৭৯ শতাংশ যুবা এ কাজগুলো করেন।

বাংলাদেশে শিক্ষাক্ষেত্রে করোনার প্রভাব সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললেও অনেক শিক্ষার্থী আর শিক্ষা কার্যক্রমে ফেরেনি। সুনির্দিষ্ট করে ১২ থেকে ১৫ বছরের মেয়ে শিশুদের অন্তত ১০ শতাংশ শিক্ষা কার্যক্রম থেকে ঝরে পড়েছে। প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক শিক্ষা থেকে এই ঝরে পড়ার কারণে আগামীতে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাবে। এর অর্থ হচ্ছে, করোনা কেবল বাংলাদেশের মতো দরিদ্র দেশগুলোতে শিক্ষা কার্যক্রম সরাসরি ব্যাহত করেছে। পরোক্ষভাবে আগামীতেও এর প্রভাব থেকে যাবে।