‘মানুষের জীবন নিয়ে কেন এই হেলাফেলা? কে নেবে এর দায়? আমাদের পরিবার ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল। কোনো নিরাপত্তাবেষ্টনী ছিল না। দায়ীদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।’

সোমবার রাজধানীর উত্তরায় বিআরটি প্রকল্পের উড়াল সড়কের গার্ডারচাপায় পাঁচ স্বজনকে হারানো রেজাউল করিম হৃদয় বিচার চেয়ে এসব কথা বলেন। তিনিও চাপাপড়া প্রাইভেটকারে ছিলেন। ওই দুর্ঘটনায় প্রাণে বেঁচেছেন শুধু তিনি এবং তার নবনিবাহিত স্ত্রী রিয়া।  

আজ মঙ্গলবার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গের সামনে স্বজনদের লাশ নেওয়ার আগে হৃদয় আরও বলেন, ‘সবাই প্রাইভেটকারের মধ্যে অনেক মজা করছিল। শিশুরাও আনন্দ পাচ্ছিল। উত্তরার জসীম উদ্‌দীন রোড পার হওয়ার পর পরই হঠাৎ গার্ডার প্রাইভেটকারের ওপর আছড়ে পড়ে। পরে স্থানীয় লোকজন রিয়া ও আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়।’



মর্মন্তুদ দুর্ঘটনায় রিয়া হারিয়েছেন তাঁর মা, খালা, খালাতো ভাইবোনসহ চারজনকে, আর হৃদয় বিদায় জানিয়েছেন বাবাকে। এই দম্পতি কে কাকে সান্ত্বনা দেবেন? একই দুর্ঘটনায় মৃত্যুর দরজা দেখে অলৌকিকভাবে ফেরেন তাঁরা! তবে আহত হয়েছেন খানিকটা। হাসপাতালের বিছানা থেকে স্বজনদের শেষবার দেখতে সরাসরি চলে আসেন মর্গে। 

স্বজনদের হারিয়ে রিয়ার কষ্টের অভিব্যক্তি- ‘মায়ের সঙ্গে শেষ কথাটাও বলা হলো না। গার্ডার পড়ে প্রাইভেটকার যখন পিষ্ট, তখন আমার হাতের ওপর ঢলে পড়েন মা। তাঁর নাক-মুখ দিয়ে ঝরছিল রক্ত। কথাও বের হচ্ছিল না। চোখ দুটিই জানান দিচ্ছিল তীব্র যন্ত্রণায় কাতর তিনি। এর পরই নিস্তেজ। আর কিছু মনে নেই।’ 

রিয়া বললেন, ‘মাকে বাঁচাতে পারলাম না এই আক্ষেপ সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হবে। কে সামলাবে আমাদের পরিবার? কত কষ্ট করে মা আমাদের বড় করেছেন। অল্প সময়ে শ্বশুরও আমাকে আপন করে নিয়েছেন। নিজেই গাড়ি চালিয়ে বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছেলেন। শ্বশুরকেও হারালাম।’

সোমবার বিকেলে ক্রেন দিয়ে বিআরটি প্রকল্পের একটি গার্ডার তোলার সময় সেটি প্রাইভেটকারের ওপর পড়ে। গাড়িটিতে ছিলেন সাতজন। এর মধ্যে পাঁচজন ঘটনাস্থলেই মারা যান। তাঁরা হলেন- হৃদয়ের বাবা নুরুল ইসলাম রুবেল (মামলায় আইয়ুব আলী), তাঁর শাশুড়ি ফাহিমা খাতুন, ফাহিমার বোন ঝরনা আক্তার এবং ঝরনার দুই সন্তান জান্নাত ও জাকারিয়া। শনিবার রিয়াদের আশুলিয়ার বাসায় বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে নববধূকে বরের বাড়িতে তুলে আনা হয়। বউভাত উপলক্ষে কনেপক্ষের লোকজন সোমবার খিলক্ষেতের কাওলায় হৃদয়ের বাসায় যান। দুপুরে খাওয়া-দাওয়া শেষে আবার নতুন বউকে গাড়িতে করে আশুলিয়ায় তাঁদের বাড়িতে পৌঁছে দিচ্ছিলেন তাঁর শ্বশুরপক্ষ।