বর্তমান সরকারের অগ্রাধিকার খাতের মধ্যে অন্যতম সামাজিক নিরাপত্তা। এ খাতের অধীনে সমাজের অসহায় ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী বিশেষ সুবিধা পেয়ে থাকে। আর সরকারের কাছ থেকে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী কীভাবে তথ্য ও সুবিধা পেতে পারে, তার আইনগত উদ্যোগ ছাড়াও মানবাধিকার এবং সুশাসন নিয়ে কাজ করছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা 'মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন'। সংস্থাটি আজ শনিবার ২০ বছর পূর্ণ করল।
২০০২ সালের ৩ সেপ্টেম্বর যাত্রা শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত চার শতাধিক সহযোগী সংগঠনের মাধ্যমে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন-এমজেএফ সারাদেশের প্রায় ৩০ লাখ দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ে ভূমিকা রেখেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্নিষ্টরা। তাঁদের দাবি, সংস্থাটির মাধ্যমে প্রায় ২২ লাখ মানুষ বিভিন্ন ধরনের সরকারি সেবা ও সুবিধা পেয়েছেন। দারিদ্র্যকে জয় করেছেন প্রায় ৪ লাখ মানুষ। ৮৫ হাজার প্রান্তিক শিশু শিক্ষার সুযোগ পেয়েছে। ৫০ হাজার মেয়ে বাল্যবিয়ে থেকে রক্ষা ছাড়াও প্রায় ৪ লাখ শ্রমিকের মানসম্মত কাজ নিশ্চিত হয়েছে। সংস্থার অধীনে প্রায় ৮৩ হাজার তরুণ-তরুণী স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছেন।
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের যাত্রা অবশ্য একটু ভিন্নভাবে; ইউকেএইডের সহায়তায় ২০০২ সালে 'কেয়ার'-এর একটি প্রকল্প 'মানুষের জন্য' হিসেবে। তবে ২০০৬ সালেই স্বতন্ত্র সংস্থা হিসেবে এর আত্মপ্রকাশ ঘটে। এর উদ্যোক্তা ছিলেন মানুষের জন্য সংগঠনের বর্তমান নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম। এর পর থেকে নেটওয়ার্ক গড়ার মধ্য দিয়ে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তার মাধ্যমে মানবাধিকার এবং সুশাসন নিয়ে তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করছে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন।
সংস্থাটি নারী ও মেয়ের প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ, শ্রমিকের অধিকার অর্জন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার আদায়ে ২০০২ সালে 'হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড গভর্ন্যান্স' প্রকল্পের মাধ্যমে কমিউনিটিভিত্তিক ও নাগরিক সমাজের ৫০টি সংস্থাকে সহযোগী করে, যা ২০১৩ সালে রাইটস গভর্ন্যান্স চ্যালেঞ্জ ফান্ড (আরজিসিএফ) প্রকল্পের অধীনে ১০০-তে দাঁড়ায়। তাদের কর্মকাণ্ডে আর্থিক সহায়তা দিতে এগিয়ে আসে নরওয়ের দূতাবাস ও অস্ট্র্রেলিয়ান এইড। ২০১৩ সালে ইউকেএইড ও অস্ট্র্রেলিয়ান এইডের অনুদানে 'ক্রিয়েটিং অপরচুনিটি ফর পুওর অ্যান্ড এক্সক্লুডেড (কোপ)'-এর আওতায় ২০১৬ সালের মধ্যে প্রান্তিক মানুষের মৌলিক সেবাপ্রাপ্তি, সামাজিক সুরক্ষা, ভূমি ও সম্পত্তির ওপর অধিকার প্রতিষ্ঠা, নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা, বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ, ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসন এবং তৈরি পোশাক শ্রমিকের অধিকার, অভিবাসী শ্রমিক ও নারী কৃষি শ্রমিকদের অধিকার অর্জনে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে। ২০১৭ সালে যুক্তরাজ্য সরকারের ৫ বছর মেয়াদি ইপিআর প্রকল্পের মাধ্যমে সংগঠনটি স্বাধীন ও নিরাপদ গণতান্ত্রিক পরিবেশে অবস্থানের মাধ্যমে প্রান্তিক ও দুর্গত মানুষের জীবনের মানোন্নয়নে কর্মসূচি নেয়। তৎপর রয়েছে স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী, বৈষম্য নিরসন, শ্রমিকের নিরাপত্তা এবং তরুণ ও যুবকদের সক্রিয় দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার।
সুইডিশ দূতাবাসের সহায়তায় দ্বিতীয় মেয়াদে চলতি বছর নারী অধিকার নিয়ে সোচ্চার সংগঠনগুলোকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে যৌনকর্মী, তৃতীয় লিঙ্গ ও ট্রান্সজেন্ডার, দলিত, হরিজন, পিছিয়ে পড়া তরুণীদের ক্ষমতায়ন ও জেন্ডার সমতা তৈরির কর্মসূচি নিতে যাচ্ছে ফাউন্ডেশনটি। গত ২০ বছরে অ্যাডভোকেসির মাধ্যমে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন ও সংশোধনে গুরুত্বপূর্ণ মতামত দিয়েছে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন। এর মধ্যে তথ্য অধিকার আইন-২০০৯, পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন-২০১০ ও শিশুশ্রম সুরক্ষা নীতি-২০১০ উল্লেখযোগ্য।
সংস্থাটির সমন্বয়ক শাহানা হুদা রঞ্জনা বলেন, সুশাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় তৃণমূলে কাজ করছে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন। আমরা দাতাদের অর্থের স্বচ্ছতা ধরে রেখে দেশীয় বিভিন্ন এনজিও এবং কমিউনিটি পর্যায়ের সংগঠনের কারিগরি ও দক্ষতা উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখার চেষ্টা করছি।
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, আমাদের সফলতা হলো, জাতীয় পর্যায়ের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে প্রান্তিক মানুষের যোগাযোগ ঘটিয়ে দেওয়া এবং এর মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে তাদের দাবি আদায়ে শক্তিশালী করে গড়ে তোলা।
সংস্থাটির বিষয়ে সংসদ সদস্য আরমা দত্ত সমকালকে বলেন, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন সব সময় পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে ফোকাস করে। অ্যাডভোকেসির মাধ্যমে অধিকার সম্পর্কে তাদের সচেতন এবং দাবি আদায়ে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। নেটওয়ার্ক সাপোর্ট করার জন্য সংস্থাটি অনন্য। মানবাধিকার ও সুশাসন সংক্রান্ত তাদের কার্যক্রম এখন নীতিনির্ধারণী পর্যায়েও পৌঁছে গেছে। তিনি আরও বলেন, সরকার সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী নিয়ে অনেক কিছু করছে। সরকারের কাছ থেকে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর তথ্য ও সুবিধা পেতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন।